কলকাতা, 26 ডিসেম্বর: "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন বেআইনি। আইনত স্বীকৃতি ছিল না।" মঙ্গলবার এমনটাই বললেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। তবে, পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এবং তাঁদের সার্টিফিকেট পেতে যাতে কোনওরকম সমস্যা না-হয় তার জন্য আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন বলেও তিনি জানালেন।
এদিন রাজভবনে এক অনুষ্ঠানের পর রাজ্যপাল বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অবৈধ। পড়ুয়াদের সার্টিফিকেট নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে আইনি পরামর্শ গ্রহণ করছি। যাতে ওই সার্টিফিকেটের বৈধতা আদায় করা যায়।" গত 24 ডিসেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রায় চার হাজার পড়ুয়াকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে অর্থাৎ, 23 ডিসেম্বর রাতে অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে পদ থেকে অপসারণ করেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
আচার্য, প্রধান অতিথি এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছাড়া গত রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবর্তন নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজভবনের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তা প্রকাশ পেয়েছে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে রাজ্যপাল নিয়োজিত অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের পরামর্শে ও অনুমতি নিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতির সহযোগিতায় সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু বুদ্ধদেব শাহ এর নিয়োগ নিয়েই মামলা বিচারাধীন শীর্ষ আদালতে।
একারণেই রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকের অনুমতি দেননি। যে কোড বৈঠক সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে রাজভবনকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল তাতেও সম্মতি জানানো হয়নি। তারপরেও বুদ্ধদেব সাউ পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য পদাধিকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাবর্তনের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সম্ভবত এর আগের রাতেই তার অপসারণের ঘটনায় রাজ্যপালের যুক্তি, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য কারও কারও দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছিলেন। সেই অভিযোগ আমার কাছে এসেছিল। একজন উপাচার্য হিসেবে যা কখনোই কাম্য নয়। একারণেই তাঁকে পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।"
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের অনুমতি না-দেওয়ার বিষয় রাজ্যপাল বলেন, "এর আগে আরও দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য দিয়েই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে আইনের কোনও জটিলতা ছিল না। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী উপাচার্য যে প্রভাবিত হয়েছিলেন সে অভিযোগ এসেছিল। তবে সমাবর্তন যখন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ইতিমধ্যে বহু পড়ুয়া তাদের সার্টিফিকেট নিয়ে চিন্তিত। একারণেই সে সার্টিফিকেটের বৈধতা গ্রহণে আইনি কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না, তার জন্য পরামর্শ গ্রহণ করছি।"
মঙ্গলবার রাজভবন সূত্রে আরও খবর, শুধু আইনি পরামর্শই নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন নিয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে রাজভবনের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যা গত সোমবারই লিখেছিল ইটিভি ভারত।
আরও পড়ুন: