কলকাতা, ১১ মার্চ : মারা গেছে অন্তত পাঁচটি কুকুর। অসুস্থ কুকুরের সংখ্যা অনেক। NRS-এ ১৬টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধারের পর থেকে সেখানকার কুকুরদের স্টেরিলাইজ়েশন করানোর প্রক্রিয়া চলছে কলকাতা পৌরনিগমে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাঁচটি কুকুরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন পশুপ্রেমীরা।
ঠিক কী কারণে এই কুকুরগুলির মৃত্যু হয়েছে সেই বিষয়ে পশুপ্রেমীরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অন্য একটি হস্টেলেও বহু কুকুর-বিড়াল রয়েছে। এদের নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন পশুপ্রেমীরা।
১৩ জানুয়ারি ১৬টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধার হয়েছিল এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বর থেকে। এই সব কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় নার্সিংয়ের দুই পড়ুয়াকে এখনও সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছে। কুকুরছানাগুলির দেহ উদ্ধারের ঘটনার পর জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরের কুকুরগুলির স্টেরিলাইজ়েশন করানো হয় না। শেষ পর্যন্ত স্টেরিলাইজ়েশন করানোর কাজ শুরু করে কলকাতা পৌরনিগম।
১৬টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন অনিতা দাস বসাক। তাঁর কথায়, "কুকুরদের খাওয়াতে আসি। দিনের বেলায় এসে দেখে যাই। জানতে পেরেছি পাঁচটি কুকুর মারা গেছে।" কেন মারা গেছে? সংক্রমণ না অন্য কোনও কারণে? অনিতা বলেন, "স্টেরিলাইজ়েশনের পর যদি বলেন যে পৌরনিগম থেকে কোনও সমস্যা হচ্ছে, সংক্রমণ হচ্ছে। তাহলে মনে করি, পৌরনিগমে ১০-১২ দিন রাখার কথা। সেখানে ২৫দিন পর্যন্তও কুকুরকে রাখা হয়েছে। আমার মনে হয় না পৌরনিগম থেকে ফিরে আসার পর মারা যাচ্ছে। পৌরনিগমের কোনও গাফিলতি থাকলে ওখানেই মারা যাবে। ২০-২২ দিনের মাথায় মারা যাবে। এত দিন থাকবে না।" তা হলে? তিনি বলেন, "স্টেরিলাইজ়েশনের জন্য যখন নিয়ে গেছিল, তখন হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক কুকুরকে ছাড়া হয়েছিল। এদের জন্য যথাযথ ছাউনি দরকার। ছাউনির সঙ্গে দরকার খাবার, ওষুধও। কিছু লোক আসছেন। ওষুধ দিচ্ছেন। কিন্তু, স্টেরিলাইজ়েশনের পর যথাযথ ওষুধ, খাবার দরকার।"
বৃষ্টির আগেও তো মারা গিয়েছে। অনিতা বলেন, "বৃষ্টির আগে দু'টি কুকুর মারা গেছে। কেউ বলছেন বিষ দিয়ে মারা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত করানো সম্ভব হয়নি। বোঝা যাচ্ছে না কী কারণে মারা গেছে। প্রচুর কুকুর অসুস্থ রয়েছে এখানে। স্টেরিলাইজ়েশনের পর তিনটি কুকুর মারা গেছে। এটা হয়তো বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টির আগে দুটি কুকুর মারা গেছে। বৃষ্টির মধ্যে তিনটি কুকুর মারা গিয়েছে। এদের মধ্যে একটি কুকুরকে স্টেরিলাইজ়েশন করানো হয়নি। এই কুকুরটির কাঁধে ঘা হয়ে গেছিল। ওষুধ দেওয়া হয়নি বলে মারা গেছে।"
অন্য এক পশুপ্রেমী জিনা চৌধুরি বলেন, "এখানে যখন স্টেরিলাইজ়েশন শুরু হয়, আমাদের কয়েকজনের মনে হয়েছিল আমরা যদি কুকুরদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা শুরু করেছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য এইসব কুকুরের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা। ৫৫টির মতো কুকুর রয়েছে এখানে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "স্টেরিলাইজ়েশনের পরে এখানে ফিরে আসা কুকুরগুলোর ক্ষেত্রেই যে সমস্যা হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ফিরে আসার পর যে রকম হয়েছে সমস্যা, তেমনই স্টেরিলাইজ়েশনের জন্য পাঠানো হয়নি, এমন কুকুরের ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়েছে।" কেন মারা যাচ্ছে? জিনা বলেন, "যে রোগটা হচ্ছে, তার নাম ডিসটেম্পার। এখানে পর পর এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক কুকুর। এটা এমনই একটা রোগ, ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু হয়, জ্বর হয় এবং, তারপর এর ভাইরাস মারাত্মকভাবে আক্রমণ করে।"
জিনা চৌধুরি আরও বলেন, "স্টেরিলাইজ়েশন করানোর পর যেমন হয়েছে। তেমনই যে কুকুরকে পাঠানো হয়নি স্টেরিলাইজ়েশনের জন্য, তারও হয়েছে এই সমস্যা। স্টেরিলাইজ়েশনের সময় কোনও সংক্রমণ হয়তো বহন করে নিয়ে এসেছে, এমনও হতে পারে। নির্দিষ্টভাবে আমরা বলতে পারি না শুধুমাত্র স্টেরিলাইজ়েশনের পর এই সমস্যা হচ্ছে কি না। দুটোই হতে পারে। আমার কাছে যেটুকু খবর আছে, পৌরনিগমের স্টেরিলাইজ়েশনের জন্য অস্ত্রোপচার খুব ভালো হয়। পরিকাঠামোগত হয়তো কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা যেটাই থাকুক না কেন, সবাই মিলে সমাধান করতে হবে। তিনটি কুকুর মারা গেছে। আরও অন্তত দু'টি কুকুরের বিষয়ে আমরা সন্দেহ করছি। আমাদের মনে হয় স্টেরিলাইজ়েশনের প্রক্রিয়া আরও একটু ভালো করতে হবে। আরও একটু দ্রুত করতে হবে।"
মৃত এবং অসুস্থ কুকুরদের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, "এই বিষয়ে আমাদের পক্ষে বলা মুশকিল। পৌরনিগম দেখছে। যদি মারা গিয়ে থাকে, কী কারণে মারা গেছে, অসুস্থ ছিল কি না, এগুলি পৌরনিগমের থেকে বলতে পারবে।"
কলকাতা পৌরনিগমের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তিনি একটি অনুষ্ঠানে রয়েছেন। পরে কথা বলবেন। পরে ফোন করা হয়। তবে, তিনি ফোন না ধরায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। SMS-এরও কোনও উত্তর দেননি।
পশুপ্রেমী অনিতা বলেন, "এলিয়ট হস্টেলে প্রচুর কুকুর রয়েছে। বিড়াল রয়েছে। ৬০-৭০টি হবে। প্রত্যেকটা জায়গায় আশঙ্কা রয়েছে। কেউ জল দিয়ে দিচ্ছে, কেউ গরম জল দিয়ে দিচ্ছে। ১৬টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধারের ঘটনার পর এখানে হয়তো কিছু করা হবে না। কিন্তু একটা একটা করে মেরে দিতে কে না পারেন। হতেও পারে এমন। তার আগে হস্টেল থেকে সরিয়ে দিলে কুকুরগুলো বাঁচবে, মানুষরাও বাঁচবেন।" এই হস্টেলের পাশে নার্সিংয়ের যে হস্টেলে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে, সেখান থেকে সব কুকুরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।