বর্ধমান, 21 ডিসেম্বর: ঝাঁ চকচকে মেঝে । শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধা । প্যারালাইসিসে আক্রান্ত । পাশে তাঁর মেয়ে বসে আছেন । মেয়ের দাবি, চিকিৎসকরা তাঁর মায়ের চিকিৎসা করছেন। ঘরের ভিতরে ডাক্তারের ঝাঁ চকচকে চেম্বার । রাখা আছে ওষুধপত্র থেকে শুরু করে রোগীকে শুইয়ে পরীক্ষা করার জন্য বেডও । বাইরে রয়েছে ওষুধের দোকান ।
ডাক্তারের প্যাডে দু’জন ডাক্তারের নাম লেখা আছে । ডাঃ একে প্রসাদ (জেনারেল ফিজিশিয়ান) ও ডাঃ ডিকে দীপক (MBBSA CMS) MD (All Medicine) ECG (Cardiology) ৷ এছাড়া চেম্বারের ভেতরে ঝুলছে বেশ কিছু সার্টিফিকেট । বর্ধমান শহরের রাজ কলেজ মোড় সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় এভাবেই ভুয়ো চেম্বার খুলে চিকিৎসা করার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিলেন বাবা ও ছেলে । অভিযোগ পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ একে প্রসাদ ও ডিকে দীপককে গ্রেফতার করে । দুই ভুয়ো চিকিৎসককে পূর্ব বর্ধমান জেলা আদালতে তোলা হয় । তাদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত চেয়ে আবেদন করে পুলিশ । আদালত তাদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকবছর ধরেই ভুয়ো ডাক্তার সেজে বাবা ও ছেলে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন । এমনকী তারা চিকিৎসার নামে রোগীকে ভর্তি রেখে দিতেন । দূর থেকে গ্রামের মানুষ ছাড়াও বীরভূম জেলা থেকেই এখানে রোগীদের ভিড় লেগে থাকত । 2017 সালে রোগীদের সঙ্গে গণ্ডগোলের জেরে পুলিশ একে প্রসাদকে গ্রেফতার করে । পরে তিনি জামিন পাওয়ার পরে ফের ভুয়ো ডাক্তার সেজে চেম্বার খুলে বসেন । এদিকে বিষয়টি নিয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ জমা দেয় । সেই অভিযোগ তিনি বর্ধমান থানায় পাঠিয়ে দেন । পুলিশ ওই ভুয়ো চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে কাগজপত্র দেখাতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি । এরপরেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের পর দিন ভুয়ো ডাক্তার সেজে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে গিয়েছে । তারা কিছু বলতে গেলে হুমকি দেওয়া হত । বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে তাদের কাছে ছুটে আসত গ্রামের রোগীরা । বিশেষ করে বীরভূম জেলা থেকেই রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল । এমনকী রোগী দেখার নামে অনৈতিক কাজ চলত বলেও তাদের অভিযোগ ।
স্থানীয় বাসিন্দা রবি শর্মা বলেন, ‘‘অনেকদিন ধরেই বেআইনিভাবে চিকিৎসা চলছে । গ্রামের গরিব মানুষ ভুল বুঝে এখানে আসেন চিকিৎসা করাতে । এখানে আবার ভর্তিও নেওয়া হয় । কেউ ভালো হয়, কেউ হয় না । কেউ মরে যায় । বছর তিনেক আগে একজন মারা যায় । ফলে ঝামেলা শুরু হয় ।পুলিশ আসে । আবার কী করে যেন সব ঠিক হয়ে গেল । এরা দু’নম্বরি ডাক্তার । আবার এদের ওষুধের দোকানও আছে ।’’
সালমা বিবির মা আশেদা বিবি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত । তিনি 10 দিন ধরে ভর্তি আছেন । সালমা বিবি বলেন, ‘‘লোকের মাধ্যমে খবর পেয়ে মা’কে এখানে ভর্তি করেছি । এখান থেকে বলা হয়েছে চিকিৎসা চলছে । ভালো হয়ে যাবে । এটা নার্সিংহোম নয় । তবে এখানে রোগ হলে মানুষজন আসে । তারা ভালো হয়ে যায় বলে শুনেছি ।’’
অভিযুক্ত ডিকে দীপক বলেন, ‘‘আমাদের ডকুমেন্টস তো RMP-এর ডকুমেন্টস । আগে তো RMP-এর ডকুমেন্টস দিয়ে ডাক্তার লেখা হত । এখন আমি মেডিক্যাল প্র্যাকটিস করি । আমার কোর্স করা আছে । আমি কমিউনিটি মেডিক্যাল সার্ভিসের কোর্স করেছি । সাধারণত ফিজিওথেরাপি করে থাকি । এর আগেও আমার বিরুদ্ধে 2017 সালে অভিযোগ উঠেছিল । কিন্তু আদালত অনুমতি দেওয়ায় আমি ফের প্র্যাকটিস করতে থাকি।’’