কলকাতা, 22 নভেম্বর: ‘ভারতীয় জনতার জন্য কাজ করি, পার্টির জন্য নয়’, ইটিভি ভারত-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই বললেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । রাজ্যের শাসক দল-সহ সিপিএম-কংগ্রেসের মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই অভিযোগ তোলেন রাজ্যপাল বিজেপির হয়ে কাজ করছেন । সেই বিষয়ে মতামত নিতে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হলে সিভি আনন্দ বোসের স্পষ্ট বক্তব্য, "তারা অনেকাংশই ঠিক । আমি ভারতীয় জনতার জন্য কাজ করি, পার্টির জন্য নয় ।"
আগামিকাল, 23 নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল পদে সিভি আনন্দ বোসের এক বছর পূর্তি হবে । গত এক বছরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন । নানা প্রকল্প চালু করেছেন সাধারণের সুবিধার্থে । তেমনই রাজ্য সরকারের সঙ্গে নানা ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি । সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে ইটিভি ভারত-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের মতামত জানিয়েছেন রাজ্যপাল ৷
ইটিভি: বাংলায় এক বছর পূর্তিতে কেমন লাগছে ?
রাজ্যপাল: আমি বাংলায় থেকে খুবই খুশি । বাংলার সুন্দর মানুষ, তাঁদের পারস্পরিক সৌজন্য, সহযোগিতা, আবেগ ও ভালোবাসায় আমি আপ্লুত । আমি বাংলার মানুষের সঙ্গে এই যোগাযোগ বজায় রাখতে চাই । আমি নিজেকে বাংলার জন্য উৎসর্গ করেছি ।
ইটিভি: আপনি মনেপ্রাণে বাঙালি হতে চেয়েছিলেন । কতটা বাঙালি হতে পারলেন ?
রাজ্যপাল: আমার মনে হয়, আমার মনটাই বাঙালিয়ানায় পরিপূর্ণ । আমার নামটাই বাঙালি নাম । আমার বাবার স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন । তাঁর আদর্শ এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর লড়াকু মনোভাব আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে ।
ইটিভি: তৃণমূল সব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অভিযোগ করে থাকেন আপনি বিজেপির হয়ে কাজ করছেন । সীমা অতিক্রম করছেন ।
রাজ্যপাল: তারা দুই তৃতীয়াংশ । আমি ভারতীয় জনতার হয়ে কাজ করছি । পার্টির জন্য নয় ।
ইটিভি: বাংলা এবং কেরালার মধ্যে কী পার্থক্য দেখলেন ?
রাজ্যপাল: দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে মুক্তচিন্তার লক্ষণ রয়েছে । এমনকী তাঁদের কাজ এবং খাদ্যাভাসের মধ্যে অনেক রকম মিল রয়েছে । আমি মনে করি বাংলা এবং কেরালা একই মায়ের দুই জমজ সন্তান । ইতিহাসেই পড়েছি, এক সময় বাংলার একদল মানুষ কেরালায় গিয়েছিলেন । সেখানেই দুই রাজ্যের মানুষ আপোষে নিজেদের মধ্যে নিজেদের সংস্কৃতি গড়ে তোলেন ।
ইটিভি: রাজ্যপাল পদে বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন রাজভবনে ?
রাজ্যপাল: বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান বা সেলিব্রেশনের আয়োজন হচ্ছে না । তবে বেশ কিছু নতুন মুখ, যুব সমাজ, তরুণ তাঁদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে ।
ইটিভি: আপনি বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরিয়ে বেরিয়েছেন । আপনার কী মনে হয় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা আজও হুমকির মুখে আছে ?
রাজ্যপাল: আইন-শৃঙ্খলা একটি জটিল বিষয় । তবে আমার ফিল্ড ভিজিটে আমি লক্ষ্য করেছি যে, বেশ কিছু ঘটনায় যে মেকানিজম রয়েছে, সেটাকে ভেঙে দিয়েছে । কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য । কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে । কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আগের মতোই অবস্থা রয়েছে । হিংসার ঘটনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তথা পুলিশ প্রশাসনে নেওয়া পদক্ষেপ সন্তোষজনক নয় ।
ইটিভি: প্রথমদিকে রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে সম্পর্ক মধুর ছিল । কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি উল্টো । কী বলবেন ?
রাজ্যপাল: প্রথমদিকে যে সম্পর্ক ছিল আজও সে সম্পর্ক বিদ্যমান । সম্পর্কের কোনোরকম অবনমন ঘটেনি । বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত দেখা গিয়েছে । আর এটাই গণতন্ত্র । নির্বাচিত সরকার সর্বদা মনোনীত রাজ্যপালের মতাদর্শ চলতে পারে না ।
ইটিভি: রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের পুজোর উদ্বোধনে আপনার যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারণ কী?
রাজ্যপাল: আমি বহু পুজোতে গিয়েছি । কোনও রাজনৈতিক কারণে কোনও নির্দিষ্ট পুজোতে আমি যাইনি । ধর্ম-আধ্যাত্মিকতা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয় । বাঙালির রক্তেই পুজো আছে । যখন যেমন সময় পেয়েছি সুযোগ পেয়েছি বিভিন্ন পুজোতে গিয়েছি । কোনও পুজো কমিটির মধ্যে আমি বৈষম্য খুঁজে পাইনি ।
ইটিভি: বিধানসভায় পয়লা বৈশাখ (বাংলা নববর্ষ)-কে রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’-কে রাজ্য সঙ্গীত ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে । এই রেজুলেশন সম্পর্কে আপনার কী বলার আছে ?
রাজ্যপাল: এই প্রস্তাব নির্দিষ্ট ও সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের কাছে রাজ্যপাল দায়িত্ব মেনে পাঠানো হয়েছে । ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানের একই সেন্টিমেন্ট-আবেগ আমার মধ্যেও আছে ।
ইটিভি: বাংলার নতুন প্রজন্মকে আপনি কোন বার্তা দিতে চান ?
রাজ্যপাল: বাংলা নতুন প্রজন্ম বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করুক । এই কাজ করতে তাদের শিক্ষা, উদ্যোগপতি হওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় মান উন্নয়নের জন্য সমস্তরকম সাহায্যের জন্য রাজভবন কাজ করবে । রাজ্যপাল হিসেবে সেই কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করব ।
ইটিভি: রাজ্যপাল পদে দ্বিতীয় বছরে বাংলার জন্য আপনার মূল লক্ষ্য কী কী ?
রাজ্যপাল: আমি আরও বেশি করে সাধারণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করব । রাজভবনের কাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব সেটা কমানোর চেষ্টা করব ।
আরও পড়ুন:
সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে রাজ্যকে পারস্পরিক সমঝোতার বার্তা দিলেন রাজ্যপাল