কলকাতা, 15 অক্টোবর: আগামিকাল অর্থাৎ সোমবার রাজ্য বিধানসভায় একদিনের বিশেষ অধিবেশন রয়েছে। যে অধিবেশনে বিধায়কদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা করে আইনি সংশোধন করা হবে বলে খবর। কিন্তু সমস্যা হল অধিবেশনের 24 ঘন্টা আগেও রাজভবন থেকে এসে পৌঁছয়নি এই অধিবেশনের প্রয়োজনীয় অনুমতি। যদিও তা নিয়ে চিন্তিত নয় খোদ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায় এবং পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্য়ায়ও ৷ একদিকে বিধানসভার অধ্যক্ষ সাফ জানিয়েছেন ইতিমধ্য়েই বিধানসভার অধিবেশনের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে ৷ অন্যদিকে রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী জানান, এক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমোদনের প্রয়োজনই নেই ৷ সুতরাং রাজ্যপাল অনুমতি না দিলেও সোমবার বিশেষ অধিবেশন বসছে বিধানসভায় ৷
এই অধিবেশনে যদি অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা না হতো তাহলে আলাদা করে রাজভবনের অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। কারণ শেষ অধিবেশন মুলতুবি না করে তা স্থগিত করেছিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত রয়েছে তাই রাজভবনের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। এই অবস্থাতে রাজভবনের থেকে অধিবেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন এদিন বিকেল তিনটে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলে খবর। ফলে এই অধিবেশন নিয়েও রাজভবন এবং সরকার তথা বিধানসভার মধ্যে এর সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে।
এদিন সন্ধ্যায় অবশ্য রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, "আগামিকাল বিধানসভা বসছে ৷ অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই ৷ বিধানসভা স্থগিত রয়েছে, তা ভাঙা হয়নি ৷ কিন্তু যে বিল পাশ হবে বিধানসভায় তাতে রাজ্যপাল সই না করলে তা পাশ হবে না, এটুকু বলতে পারি ৷ কিন্তু অধিবেশন হচ্ছে ৷ সব সদস্যদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে অধিবেশন বসবে ৷ সাধারণত সব ব্য়াপারেই রাজ্যপালকে পাঠানো হয় অনুমতির জন্য ৷ তাঁর প্রয়োজনীয় অনুমোদন লাগে ৷ কিন্ত সেটা সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয় ৷ বিল পাশ হোক বা না হোক বিধানসভা হচ্ছে ৷"
অন্যদিকে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, "রাজ্যপালের অনুমোদন দেননি, আমার কাছে এমন কোনও খবর নেই ৷ বিধানসভার অধিবেশনের জন্য সমন ইস্যু করেছি ৷ যা কথা হওয়ার বিধানসভার ভিতরেই হবে ৷ রাজ্যপাল অনুমোদন দিয়েছে কী দেয়নি সে বিষয়ে আমার কাছে কোনও খবর নেই ৷" ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আগামিকাল বিধানসভা অধিবেশন যে হবে সে বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেওয়া হয়েছে। আলাদা করে এই বিষয়টি অনুমোদনের জন্য রাজভবনের কাছেও অনুমতি চাওয়া হয়েছে। খোদ রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এই নিয়ে রাজভবনের সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখছিলেন বলেও খবর।
সংশ্লিষ্ট মহলের ব্য়াখ্য়া, এক্ষেত্রে যদি রাজভবন অনুমোদন দেয় তাহলেই শেষ পর্যন্ত অধিবেশনে ওই নির্দিষ্ট বিলটি পেশ করা যাবে। যদি শেষ পর্যন্ত রাজভবন অনুমোদন না দেয় সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়ে এই বিলটি বিধানসভায় পেশ করা যাবে কি না, তা আলোচনা সাপেক্ষ ৷ এক্ষেত্রে আইনি সব দিক খতিয়েও দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এদিন এই অচল অবস্থা নিয়ে রাজভবনের বক্তব্য অবশ্য জানা যায়নি। রাজভবন তরফে এই নিয়ে কোনও মুখ খোলা হয়নি।
আরও পড়ুন: মহুয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ নিশিকান্ত দুবের! পালটা খোঁচা তৃণমূল সাংসদের
বিধানসভার অধিবেশন ডাকা নিয়ে সংঘাত, এই প্রথম নয়। বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সময়ে বারংবার বিধানসভা অধিবেশন এবং অন্যান্য একাধিক বিষয় নিয়ে সংঘাতের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। জুলাই মাসে শেষ হওয়া বিধানসভার অধিবেশন নিয়েও এ ধরনের একটা সংঘাতের ছবি দেখা গিয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত অধিবেশন ডাকার জন্য অনুমোদন দিয়ে দেয় রাজভবন। কয়েক দিন আগেই আবার ধুপগুড়ির বিধায়কের শপথ নিয়ে সংঘাত কারো অজানা নয়। এইসবের মাঝেই নতুন করে এই ঘটনা প্রকাশ্যে এলো যা আরো একবার রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।