কলকাতা, 10 মার্চ: গরুপাচার কাণ্ডে (Cattle Smuggling Case) এবার অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ও তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে (Sehegal Hussain) মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় ইডি (ED) । তদন্তকারীদের সূত্র থেকে এমনই তথ্য মিলেছে ৷ আর এর ইঙ্গিত শুক্রবার আদালতেও দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate) ৷
এদিন ইডির আবেদনে সাড়া দিয়ে অনুব্রতকে 11 দিনের জন্য তাদের হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত ৷ আদালতে ইডি জানায় যে অনুব্রতর সঙ্গে এই মামলার একাধিক অভিযুক্ত ও সাক্ষীকে মুখোমুখি বসানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ৷ সেই কারণে শীঘ্রই দিল্লিতেই ইডির দফতরে কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকেও ডাকা হতে পারে বলে ইডি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে (ED may summon Anubrata Daughter) ৷
তদন্তকারীদের সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডল জেরায় একেবারেই অসহযোগিতা করছেন । কোনও প্রশ্নের উত্তরই সরাসরি দিচ্ছেন না ৷ যেহেতু সায়গল দীর্ঘদিন অনুব্রতর দেহরক্ষী ছিলেন, তাই এই দু’জনকে মুখোমুখি বসালে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে ইডি আধিকারিকদের অনুমান ৷
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অভিযোগ, বীরভূম করিডোর থেকে বিভিন্ন রাজ্য ও জাতীয় সড়ক হয়ে যাতে গরুপাচার ভালোভাবে সম্পন্ন হয়, পাচারকারীদের কাছ থেকে প্রোটেকশন মানি বাবদ 6 মাস অন্তর 10 থেকে 15 কোটি টাকা পেতেন অনুব্রত মণ্ডল ৷
এই টাকা নিয়ে অনুব্রত কী করতেন ? সূত্রের খবর, 2016 থেকে 2020 সাল পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডলের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে কয়েক কোটি টাকা জমা পড়েছে । গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে সুকন্যার কোটি কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে । তদন্তকারীদের অনুমান, গরুপাচারের কালো টাকা সাদা করতেই নামে বেনামে এই এফডিগুলি করা হয়েছিল ৷
গোয়েন্দাদের ধারণা, এই বিষয়ে অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যাও অনেক কিছু জানেন ৷ তাই তাঁকেও বাবার মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা ৷ সেই কারণে সুকন্যা খুব শীঘ্রই তলব করতে পারে ইডি ৷ পাশাপাশি ডাকা হতে পারে অনুব্রতর হিসাবরক্ষককে ৷
অন্যদিকে 2014 সাল থেকে 2021 সাল পর্যন্ত বীরভূমে দায়িত্বে থাকা একাধিক পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ৷ সায়গলের কাছ থেকে সেই আধিকারিকদের নামও পেয়েছে ইডি ৷ তদন্তকারীদের সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে এই আধিকারিকরা গরুপাচারের জন্য সেফ করিডর তৈরি করে দিতেন ৷ পরিবর্তে অনুব্রত তাঁদের টাকা দিতেন ৷ আর বীরভূমের এই তৃণমূল নেতার হয়ে পুরো কাজটাই দেখভাল করতেন সায়গল হোসেন ৷
ফলে এঁদের সামনে বসে তদন্তকারীদের প্রশ্নের জবাব অনুব্রত এড়াতে পারবেন বলেই ইডির ধারণা ৷ যদিও দিল্লিতে ভাষাগত সমস্যার জন্য অনুব্রতকে জেরা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আধিকারিকদের ৷ সূত্রের খবর, হিন্দিতে প্রশ্ন করা হচ্ছে ৷ আর অনুব্রত বাংলায় জবাব দিচ্ছেন ৷ তিনি হিন্দিতে কথা বলতে পারেন না বলেই নাকি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন ৷ সমস্যা মেটাতে আপাতত দোভাষী রাখার ব্যবস্থা করেছে ইডি ৷ তাই দেখার এই ভাবে কতটা তথ্য কেষ্ট মণ্ডলের থেকে ইডি আদায় করতে পারে !
আরও পড়ুন: অনুব্রতকে 11 দিনের ইডি হেফাজতে পাঠাল দিল্লির আদালত