কলকাতা, 17 মার্চ: কুন্তল ঘোষের দুটি বেসরকারি ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্টে প্রায় 6.5 কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে ৷ ব্যাঙ্কশাল আদালতে এমনই দাবি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED Claim on Kuntal)৷ তাদের দাবি, এই সাড়ে ছয় কোটি টাকার মধ্যে বেশিরভাগ টাকাই টলিউডে শর্ট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিয়ো তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে । বিভিন্ন অভিনেতা ও অভিনেত্রীদেরও টাকা দেওয়া হয়েছে বলে আদালতে দাবি করেছে ইডি ।
আজ ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Recruitment Scam) অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষকে ৷ কুন্তলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও 14 দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা ৷ তাঁদের দাবি, তদন্তের বেশকিছু দিক সামনে এসেছে যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে কুন্তল ঘোষের ৷ আদালত এদিন তাঁর 30 মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় ৷
ইডি এদিন দাবি করেছে যে, কুন্তলের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ৷ এই অ্যাকাউন্টগুলি এখন ইডির নজরে বলে জানানো হয়েছে । ইডির দাবি, এই সাড়ে ছয় কোটি টাকার মধ্যে বেশিরভাগ টাকাই টলিউডে শর্ট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিয়োর জন্য লাগানো হয়েছে । টলিউডের বিভিন্ন অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের সেই টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইডি । তারা জানিয়েছে, কুন্তলের অ্যাকাউন্টের টাকা থেকে তারকাদের বিলাসবহুল গাড়িও কিনে দেওয়া হয়েছে । এদের মধ্যে বনি সেনগুপ্তকে 44 লক্ষ টাকা ও সোমা চক্রবর্তীকে 55 লক্ষ 63 হাজার টাকা দিয়েছিল কুন্তল ।
ইডি যখন সোমা ও বনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তখন তাঁরা দাবি করে যে তাঁরা জানতেন না যে তাঁদের দেওয়া টাকা আসলে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা । তাঁদের দেওয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করা হচ্ছে । তাই তাঁরা যখন জানতে পেরেছেন এটা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা, তখন সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ইডিকে সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইডি ।
কুন্তল এখনও পর্যন্ত এই দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে 6.5 কোটি টাকার লেনদেন সম্পর্কে কোনও নথি জমা দেয়নি ইডিকে । কুন্তলের আইনজীবী মেহেদি নওয়াজ অবশ্য আজ আদালতে বলেন, 6.5 কোটি টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট হয়েছে । বিচারক জানতে চান, এই টাকার উৎস কী ৷ কুন্তলের আইনজীবী জানান, এই টাকার আয়কর দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন: আমার গোয়ার হোটেল ও ত্রিপুরার চা বাগানের ঠিকানা দিন তো ! আক্রমণাত্মক মেজাজে কুন্তল
ইডির আইনজীবী বলেন, দুর্নীতির টাকা আয়করে জমা দিলেও সেটা তদন্তের মধ্যেই পড়ে । তখন বিচারক জানতে চান, যে কোথা থেকে এত টাকা কুন্তলের অ্যাকাউন্টে এল, তার উৎস কী ? যে টাকা জমা পড়েছিল তার বৈধ নথি রয়েছে কি না, তাও জানতে চান বিচারক ৷ তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, "এটা 6.5 কোটি টাকা ৷ 2000 বা 5000 টাকা নয় । এটা অনেক বড় অংকের টাকা । জেনেশুনে হয়েছে এই লেনদেন । সোর্স জানাতে হবে কোর্টকে । আপনি 10 কোটি টাকা রোজগার করলেন এবং আয়কর দিলেন, তাহলেই সেই টাকা বৈধ হয়ে যায় না ৷"
কুন্তল ঘোষের দুটি অ্যাকাউন্টে কোথা থেকে এই সাড়ে ছয় কোটি টাকা এল তার উৎস জানতে চেয়েছেন বিচারক ৷ টাকার নথি দেখতে চেয়েছেন তিনি ৷ তিনি কুন্তলকে বলেন, "আপনি বলুন কোথা থেকে সেই ডকুমেন্ট পাওয়া যাবে, তা বের করতে ইডি আপনাদের সাহায্য করবে ।" ইডিক আইনজীবী কুন্তলকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য 14 দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানিয়েছেন ৷
এ দিন ধমকের সুরে কুন্তলের আইনজীবীকে বিচারক বলেন, "আপনি যখন এই মামলা করছেন, তখন আপনি ভালোভাবেই জানেন পিএমএলএ (preventional money laundering act) এই দেশে কেন তৈরি হয়েছিল ! দেশ থেকে দুর্নীতির পরিমাণ কমানোর জন্য ।" এই মামলার রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে আদালত ৷