কলকাতা, 16 জানুয়ারি: অ্যালঝাইমার্স, এমন একটি রোগ যা কাছের মানুষদের ভুলিয়ে দেয় ৷ এই রোগে আক্রান্ত মানুষ ভুলে যায় আপনজনকে । আর এই ভুলে যাওয়াকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে 'অ্যালঝাইমার্স'। আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে কিছু কেমিক্যাল জমা হতে থাকে । যাকে বলা হয় 'অ্যামাইলয়েডপ্ল্যাটস'। ওই প্ল্যাটসগুলো মস্তিষ্কের নার্ভের ভিতরে জমা হয় । ফলে নার্ভগুলো পঙ্গু হয়ে যায় । যার থেকে অ্যালঝাইমার্স রোগের উৎপত্তি ।
এই রোগের ফলে আপন মানুষকে চিনতে না-পারা, ভুলে যাওয়া-সহ একাধিক আচরণ দেখা যায় রোগীর মধ্যে। তখন কী করা উচিত সেই রোগীর পরিবারের, কীভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা হয় ? সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন প্রবাসী চিকিৎসক তথা লেখক শুভেন্দু সেন । সাধারণ মানুষকে অ্যালঝাইমার্স রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে প্রকাশ করলেন 'The Fight Against Alzheimer's' যার অর্থ, অ্যালঝাইমার্সের বিরুদ্ধে লড়াই । সোমবার সন্ধ্যায় পার্কস্ট্রিটে প্রকাশিত হল তাঁর লেখা এই বই । বই উদ্বোধন উপলক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন চিকিৎসক এবং পরিচালক অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, সমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তী, অভিনেতা ঋদ্ধি সেন ও সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এই বই উদ্বোধন করতে গিয়ে চিকিৎসক জানান, তাঁর দিদিমা উচ্চশিক্ষিত থাকলেও একটা সময় সব ভুলে গিয়েছিলেন । তাঁর প্রিয় নাতিকেও চিনতে পারছিলেন না । সেখান থেকেই এই রোগ সম্পর্কে জানা চিকিৎসকের । তারপর দীর্ঘদিন এই বিষয়ে গবেষণা ও চিকিৎসা । চিকিৎসকের মতে এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল, শৌচালয় গিয়ে পছন্দের সাবানের গন্ধ চিনতে না পারা । রোজ ব্যবহৃত শব্দ আসতে আসতে ভুলে যাওয়া । জিনিসটা বৃদ্ধি পেতে পেতে নিজেকেই একসময়ে অচেনা লাগে এই ধরনের রোগীদের । তবে এরূপ রোগীদের সঙ্গে কখনওই প্রশ্ন নয়, চিনিয়ে দেওয়া বা মনে করিয়ে দেওয়াটাই শ্রেয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক শুভেন্দু সেন । তিনি বলেন, "একে চিনতে পারছ ? এটা মনে করতে পারছ ? আমরা সাধারণত এই প্রশ্নগুলো করে থাকি । কিন্তু এটা ভুল ৷ বরং তাঁকে চিনিয়ে দিতে হবে জিনিসটা কী বা মানুষটা কে ।"
এই রোগ অনেকটা বংশ পরম্পরাতেও হয়ে থাকে । তবে এই রোগের ফলে মৃত্যুর আশঙ্কা নেই। বরং অ্যালঝাইমার্স হলে শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলো ধীর হয়ে যায় । শ্বাস-প্রশ্বাসেও একটা ধীরতা আসে। যার ফলে সেই সময় নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে । তাই অ্যালঝাইমার্স আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ।
চিকিৎসকের থেকে এ ধরনের বিভিন্ন গল্প শুনে এই রোগকে কেন্দ্র করে একটি সিনেমাও তৈরি করেছিলেন পরিচালক সুদেষ্ণা রায় । সেখানে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে । পরিচালকের কথায়, "সিনেমার মাধ্যমে মানুষের কাছে তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায় । এই রোগ হলে কী করা উচিত তা অনেকেই জানেন না । তাই আমরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এই রোগটার ওপর মূলত নজর রাখি । এই রোগ হলে পরবর্তীকালে কী হতে পারে, কীভাবে চিকিৎসা হতে পারে সেই বিষয়েও তুলে ধরি সিনেমায় ।"
আরও পড়ুন :