কলকাতা, 7 ফেব্রুয়ারি: আবারও জটিল অস্ত্রোপচার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (Rare Spine Surgery At NRS)। স্কোলিয়োসিস (Scoliosis) রোগে আক্রান্ত মেয়ের সফল অস্ত্রোপচার করল এনআরএস ।
মুর্শিদাবাদের কাশিমনগর এলাকার বাসিন্দা মানয়োরা বিবি । তাঁর একমাত্র মেয়ে সোনাভা খাতুন কাশিমনগর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী । অন্যান্যদের মতো এ বছর স্কুল থেকে সাইকেল পাওয়ার আনন্দ ছিল তার মুখেও । তবে সাইকেল পেলেও চালাবে কী করে ? কারণ প্রায় 12 বছর ধরে সে ভুগছে এক ভয়ানক রোগে । রোগের নাম 'স্কোলিয়োসিস'। এই রোগে মানুষের শিরদাঁড়া সম্পূর্ণভাবে বেঁকে যায় । তাই এই রোগীরা সোজা হয়ে দাঁড়ানো তো দূরস্ত, ঠিকভাবে হাঁটতেও পারে না । মূলত এটা জন্মগত রোগ ।
সেই সমস্যাতেই ভুগছিল সোনাভা । সামনের দিকে সে এতটাই ঝুঁকে গিয়েছিল, যার ফলে পেট ও বুকের মধ্যে কোনও ফাঁকও ছিল না । এছাড়াও তীব্র যন্ত্রণায় ভুগতো সে । একাধিক হাসপাতাল-চিকিৎককে দেখালেও মেলেনি সমাধান । রোগীর মা জানান, "আমার শাশুড়ির এই সমস্যা ছিল । তবে তাঁর চিকিৎসা হয়নি । একটা সময় এই রোগ নিয়েই তিনি মারা যান । তাই মেয়েকে নিয়েও বেশ ভয়ে ছিলাম । বহু ডাক্তার দেখিয়েছি কোনও সমাধান আসেনি । বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে শুনি এ জন্য খরচ প্রায় 12 লক্ষ টাকা । যা আমাদের পক্ষে দেওয়া কঠিন ।"
আজ থেকে প্রায় পাঁচ মাস আগে সোনাভা মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় আসে চিকিৎসা করাতে । তাকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে এবং সেখান থেকে রেফার করা হয় কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে । কারণ কলকাতার সরকারি ক্ষেত্রে একমাত্র এনআরএস হাসপাতালেই এই রোগের চিকিৎসা হয় । অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক-চিকিৎসক কিরণ মুখোপাধ্যায়ের অধীনে তাকে ভর্তি করা হয় ।
চিকিৎসক জানান, "স্কোলিয়োসিসে আক্রান্ত রোগী আমরা মাঝে মধ্যেই পেয়ে থাকি । তবে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছিল । কারণ যদি আমরা দেখি কেউ 40-50 ডিগ্রি মতো ঝুঁকে গিয়েছে, তাহলেই আমরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি । এই মেয়েটির ক্ষেত্রে ঝুঁকে যাওয়ার পরিমাণ ছিল 82 ডিগ্রি । ফলে শীঘ্রই এর অস্ত্রোপচার করা হয় । এছাড়াও ওর ফুসফুস ও পাকস্থলীতেও সমস্যা তৈরি হতে থাকে ।"
আরও পড়ুন: গলায় ত্রিশূল বিঁধে থাকা যুবকের নীলরতন হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার
জানুয়ারি মাসের মাঝ বরাবর এই মেয়েটির অস্ত্রোপচার করা হয় । যেহেতু শিরদাঁড়ার বিষয়, তাই স্কোলিয়োসিসের অস্ত্রোপচার হয় শরীরের পিছন দিক থেকে অর্থাৎ পিঠ দিয়ে । তবে এ ক্ষেত্রে ওর ঝুঁকে যাওয়ার পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল, তাই সেটা সম্ভব ছিল না । ফলে ওর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয় সামনের দিক থেকে । পেট থেকে প্রথমে শুরু হয় অস্ত্রোপচার, তারপর যায় পিঠের দিকে ।
স্ক্রু এবং রডের মাধ্যমে সোজা করা হয় সম্পূর্ণ শিরদাঁড়া । চিকিৎসকের মতে, "যদি বয়স অল্প থাকতেই কেউ চিকিৎসা করায় তাহলে অনেক সুবিধা হয় । বয়স বেড়ে গেলে নমনীয়তার পরিমাণ কমে যায়, তখন অস্ত্রোপচার করা আরও জটিল হয়ে পড়ে ।"
বর্তমানে সোনাভা সম্পূর্ণ সুস্থ । তবে বেশ কিছু বাধা রয়েছে তার । যেমন সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করা যাবে না, ভারি কিছু জিনিস তোলা সম্ভব নয় । এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তাকে । তবে এত জটিলতার মাঝেও আনন্দের হাসি সোনাভার মুখে ৷ সে এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে ৷ তার কথায়, "এই অস্ত্রোপচারের ফলে আমি শরীরে নতুন উচ্চতা পেয়েছি । আমার এখন উচ্চতা 6.4 ইঞ্চি বেড়েছে ।"