কলকাতা, 26 নভেম্বর : দেশজুড়ে 24 ঘণ্টার বনধ ডেকেছে 16টি শ্রমিক সংগঠন৷ আজ সকাল থেকে দফায় দফায় শহরের বিভিন্ন চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল এবং পথ অবরোধ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা। BJP এবং তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন বাদে আজকের এই হরতালে অংশগ্রহণ করেছে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠন। কলকাতায় কেন্দ্রীয়ভাবে মিছিল হয় এন্টালি থেকে মল্লিক বাজার পর্যন্ত । মিছিলে পা মেলান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, CPI(M)-র রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী৷ পাশাপাশি মিছিলে অংশগ্রহণ করে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বরা। CITU-র রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু-র দাবি, দেশজুড়ে 16টি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা 24 ঘণ্টার ভারত বনধ সফল হয়েছে৷
মিছিল থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, "সকাল থেকেই ধর্মঘটের চেহারা সর্বাত্মক। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ চেহারা ধর্মঘটের।" বিমান বসুর অভিযোগ, আজকের বনধে তৃণমূলের অবস্থান থেকে স্পষ্ট রাজ্য সরকারের ভূমিকা কী। তারা BJP-কে মদত দিচ্ছে সরাসরি। কৃষক, শ্রমিকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে রাজ্যের সরকার তৃণমূল কংগ্রেস। ধর্মঘটকে নৈতিক সমর্থনের কথা মুখে বললেও আচরণে তার বিপরীত ভূমিকা পালন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী দিনের নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ শাসক দলকে উপযুক্ত জবাব দেবে৷ কেন্দ্রের BJP ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেই শ্রমিক সংগঠনের এই বিক্ষোভ মিছিল বলে জানান CPI(M) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র৷ তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে খেটে খাওয়া শ্রমিকরা সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত কৃষি আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার না করলে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন হবে বলেও আজ হুঁশিয়ারি দেন তিনি৷ পাশাপশি রাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন CPI(M)-র রাজ্য সম্পাদক৷ তার অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের নেতৃত্বে ধর্মঘট ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছে৷
কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম, কর্মহীন এবং বেকার যুবকদের হাতে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান, রাজ্যের প্রত্যেকটি গরিব পরিবারকে পর্যাপ্ত খাবার সহ একাধিক দাবিতে আজ বিক্ষোভ দেখান শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা। সকাল থেকে কলকাতা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বনধ সমর্থকেরা৷ শ্যামবাজার থেকে যাদবপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান ধর্মঘটকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, আজ এখনও পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারেরও বেশি ধর্মঘটের সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মিছিলে মোতায়েন করা হয় পর্যাপ্ত পুলিশ। যেকোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মধ্য কলকাতার শিয়ালদা থেকে মল্লিক বাজার পর্যন্ত পুলিশি নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো।
যদিও আজ তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক থেকে ফের একবার দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস বনধ মানে না৷ যারা দায়িত্ব জ্ঞানহীন তাঁরা এই বনধ ডেকেছে৷ আমরা দায়িত্ব জ্ঞানহীন নয়৷ আমরা কৃষকদের পাশে আছি৷ অবশ্যই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু বনধকে সমর্থন করে না তৃণমূল৷ এই দুর্দিনে কারও মাইনে কাটা যাক তা চাইনা তৃণমূল৷ তিনি আরও বলেন, লকডাউনের জেরে ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে৷ আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে সাধারণ মানুষ৷ এই পরিস্থিতিতে একদিন বনধ মানে অনেকটাই ক্ষতি৷