কলকাতা, 27 সেপ্টেম্বর: ক্যানসার ধরা পড়ার পরও কোরোনা পরিস্থিতির জেরে চিকিৎসা শুরু হয়নি। যার জেরে বেড়ে যায় ক্যানসার সংক্রমণ । পরে মূত্রের সঙ্গে রক্ত বের হতে শুরু করলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয় । এই রোগীর ইউরিনারি ব্লাডারে ক্যানসার ধরা পড়েছিল। এদিকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করার পর রোগীর ব্লাডার নিজে থেকেই ফেটে যায়। এভাবে ব্লাডার ফেটে যাওয়া এবং এক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানোর ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এই সব ক্ষেত্রে অপারেশন করার সময় বা তার পরে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন ওই রোগী। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঘটনা ৷
হাওড়ার বাসিন্দা 67 বছর বয়সি শ্যামল সেনকে যখন ঢাকুরিয়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি প্রায় কোমায় ছিলেন । তবে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে রোগীর মূত্রথলিতে ক্যানসার ধরা পড়েছিল । চিকিৎসকরা জানতে পারেন, ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দু'দিন আগে থেকে রোগীর মূত্রের সঙ্গে রক্ত বের হচ্ছে । রোগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়। রক্ত দেওয়া হয়। এদিকে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকার কারণে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, এই রোগীর ক্ষেত্রে তখন কার্ডিওজেনিক শক এবং হেমোরেজিক শক, দুটোই সিভিয়ায় ছিল ।
বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বাস্তব ঘোষ বলেন, "পেটে স্ক্যান করে দেখা যায় যে রোগীর ক্যানসার তাঁর মূত্রথলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে । শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েনি । তিন দিন আগে এই রোগীর ক্ষেত্রে সিভিয়ার শক ছিল, হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল । এর জন্য তাঁর অপারেশনের কথা তখনই ভাবা হয়নি। এই রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে রোগীর শরীরের সহ্য ক্ষমতা থাকা দরকার। এর জন্য কয়েক দিন পর এই রোগীর ক্ষেত্রে এটা করার কথা ভাবা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ভেন্টিলেশন থেকে এই রোগীকে যেদিন বের করা হয় তার পর দিন ব্লাডার ফেটে যায়। দেখা গিয়েছে, এটা খুব কম হয় এবং যে সব রোগীর ক্ষেত্রে এটা হয়েছে তাঁদের অধিকাংশই মারা গিয়েছেন । এই অবস্থায় রোগীর বেঁচে ফেরার সুযোগ খুব কম।"
এক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা অনেকটাই ঝুঁকির। দু'দিন আগেই শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল । তার পর ব্লাডারও ফেটে যায়। রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। বাস্তব ঘোষ বলেন, "আমাদের হাতে দুটি উপায় ছিল। এক, কোনও ভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা এবং রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা। দুই, সব ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অপারেশন টেবিলে অথবা পোস্ট অপারেটিভ ডেথ হতে পারে রোগীর। এরপরই বিষয়টি রোগীর পরিজনদের জানানো হয়। সব জেনে ঝুঁকি নিতে রাজি হন পরিজনরা। তারপরই আমরা অস্ত্রোপচার করি এবং তা সফল হয়।"
সম্প্রতি ওই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন তিনি। রোগীর ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির প্রয়োজন রয়েছে কি না আগামী দিনে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।