কলকাতা, 10 ডিসেম্বর: 'রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগ করে মানবধিকার লঙ্ঘন করছে শাসক দল'। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কলেজ পাড়ায় আলোচনায় এমনটাই অভিযোগ উঠে এল। একদিকে কেন্দ্র, অন্যদিকে রাজ্য সরকার ৷ দুই শাসকই নানা কৌশলে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করছে বলে অভিযোগ তাদের। রবিবার মহাবোধি সোসাইটি হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে-শহিদ শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস এবং কামদুনি ছাত্রী খুনিদের শাস্তির দাবিতে, 'আক্রান্ত আমরা' আয়োজিত 'বাংলায় মানবাধিকার কোথায়' শীর্ষক নাগরিকসভায় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেন, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্য়ায়, ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তাঁদের মূল বক্তব্য, "মানবাধিকার কমিশন সমূহের কাজই হল, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের 'মানবাধিকার' সুরক্ষার অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করা।" কিন্তু, বাংলায় 2011 সালের পর, সরকার পরিকল্পনামাফিক নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনি অধিকার-সহ 'মানবাধিকার' হরণে ব্রতী। সংবিধান বিরোধী এই পরিকল্পনা রূপায়নে উদ্যোগী পুলিশমন্ত্রী তথা প্রশাসনের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী। কার্টুনকাণ্ডে অম্বিকেশ মহাপাত্র গ্রেফতার প্রসঙ্গে 'পুলিশ যা করেছে ঠিক করেছে'; শিলাদিত্য চৌধুরী প্রসঙ্গে 'ওই একজন মাওবাদী, ওকে গ্রেফতার কর, আমি একজন মাওবাদীকে ধরিয়ে দিলাম' ৷"
তাঁদের আরও কথা, "অধ্যাপক দিলীপ দে সরকার হেনস্তা প্রসঙ্গে 'ছোট ছেলেরা করে ফেলেছে'; পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডে 'সরকারকে হেয় করতে সাজানো ঘটনা'; কামদুনি গণধর্ষণ এবং নৃশংস খুন প্রসঙ্গে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে 'এরা সব মাওবাদী, সিপিএমের চক্রান্ত'; তানিয়া ভরদ্বাজ প্রসঙ্গে 'এরা মাওবাদী, সব সিপিএমের প্রশ্ন'; সুদীপ্ত গুপ্তের পুলিশি হেপাজতে মৃত্যু প্রসঙ্গে 'তুচ্ছ ঘটনা'; তারসঙ্গে 'আমি গুন্ডা কন্ট্রোল করি'; 'আমি 294 আসনেই প্রার্থী' ইত্যাদি প্রমাণ করে; এই রাজ্যে সংবিধানের আইন নয়, শাসকের আইন বলবৎ আছে।"
বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী বলেন, "বিধায়কের কাজ করতে চাইলে আক্রমণ করা হয়, গ্রেফতার করে আটকে রাখার বেআইনি প্রয়াস নেওয়া হয়। পুলিশিরাজ নয়? 'মানবাধিকার'-এর বিরুদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী আইনের রক্ষক পুলিশ প্রশাসনের কাজ 'দুষ্টের দমন শিষ্ঠের প্রতিপালন।' বর্তমান সময়কালে লোকমুখে প্রচারিত- 'থানা এখন শাসকদলের পার্টি অফিস। থানা থেকে পাটি পরিচালিত হচ্ছে'। 'পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে'। যে কাজ পুলিশ প্রশাসনের, সেই কাজে পুলিশ বাধা দিয়ে চলেছে। নানান অজুহাতে বর্তমান সময়কালে সভা, সমিতি, মিছিল, অবস্থান, বিক্ষোভ, জমায়েত করতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয় না। সকলকে কোর্টে গিয়ে অনুমতি চাইতে হচ্ছে, বিচার চাইতে হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকের পক্ষে কোর্টে যাওয়া কি সম্ভব?"
আয়োজকদের তরফে আম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, "রাজ্য 'মানবাধিকার' কমিশন কার্যত অস্তিত্বহীন, সুযোগ-সুবিধাভোগী কমিশনে পরিণত। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ- কামদুনি ছাত্রী খুনে বিচারের রায়, বরুণ বিশ্বাস খুনের 11 বছর পরও কোন দোষী চিহ্নিত হয়নি, তপন দত্তের খুনিরা বেকসুর খালাস পায়, সাগর দত্তের খুনিরা কোনওদিন সাজা পাবে না, সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন, জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে পুলিশি প্রশ্রয়ে দুষ্কৃতী বাহিনীর তাণ্ডবে বাড়িঘর-সহ গ্রামবাসীদের জীবন ধারণের সকল সামগ্রী ভস্মীভূত। 'আক্রান্ত আমরা'র প্রতিনিধিরা গ্রামবাসীদের দেখা করতে যেতে চাইলে পুলিশের বেআইনিভাবে বাধা। এমনকী পুলিশ প্রশাসন জাস্টিস অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের ফোন না ধরার ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে!"
আরও পড়ুন: