কলকাতা, 20 জুন: ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গোলমালের ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ডিজিকে সিট গঠনের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ৷ পাশাপাশি, মামলাকারী শান্তনু ঠাকুরের অভিযোগ এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷ আদালত এও জানিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে করা এই অভিযোগের তদন্তভার একজন এডিজি পদমর্যাদার আধিকারিককে দিতে হবে ৷ পাশাপাশি, যে সব ভক্তদের 11 জুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷
কলকাতা হাইকোর্ট ধৃতদের জামিনের যে নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে সপ্তাহে দু’দিন দু’ঘণ্টার জন্য দেখা করতে হবে তাঁদের ৷ পাশাপাশি জেলা ছাড়তে পারবেন না তাঁরা ৷ তদন্তকারী আধিকারিককে মন্দির ও চাঁদপাড়া হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷ আগামী 18 জুলাই তদন্তে কী অগ্রগতি হয়েছে ? তার রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিককে ৷
পুলিশ এই ঘটনায় শান্তনু ঠাকুর এবং তাঁর অনুরাগী মতুয়া ভক্তদের বিরুদ্ধে 5টি এফআইআর করেছে ৷ যার মধ্যে একটি মামলায় শ্লীলতাহানি-সহ বাধা দানের অভিযোগ রয়েছে ৷ আদালতে শান্তনুর আইনজীবী জানিয়েছেন, প্রায় সব মামলার বয়ান একরকম ৷ শুধু বিভিন্ন নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ আর সব অভিযোগের সময় একদিনে ও প্রায় একই সময়ে ৷ এই মুহূর্তে তিনজন মহিলা-সহ 11 জন হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: মতুয়াদের হেনস্তা-সহ একাধিক অভিযোগে অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলা শান্তনুর
উল্লেখ্য, গত 11 জুন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে যান পুজো দিতে ৷ কিন্তু, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্য়মন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে ৷ তা না-হলে অভিষেককে মন্দিরে ঢুকতে দেবেন না, এই হুমকি দেন মতুয়া মহাসংঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর ৷ তিনি এবং বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া মূল মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেন ৷ যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে মমতাবালা ঠাকুরের সমর্থকদের সঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের লোকেদের হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় ৷
আরও পড়ুন: ঠাকুরবাড়িতে সংঘর্ষ চরমে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি পুলিশের; আক্রান্ত শান্তনু ঠাকুরও
যে ঘটনায় পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয় ৷ সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক মারামারি হয় বলে অভিযোগ ৷ পরবর্তী সময়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে ৷ দু-তরফের অনেকে আহত হন ৷ পরে চাঁদপাড়া হাসপাতালে দু’পক্ষের আহতরা চিকিৎসা করাতে গেলে, সেখানেও মারপিট হয় ৷ স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিযোগ করেছেন বিজেপি সংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং বিধায়ক হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছেন ৷ গোটা ঘটনায় 8 জন মতুয়া ভক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ দু’দিন পরে তারা জামিন পান ৷ জামিন পেতেই নতুন মামলায় পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে ৷ এখন তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে ৷
পালটা শান্তনু ঠাকুর পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে, তাঁর অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে এ দিন আদালতে দায়ের করা মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন ৷ 13 জুন ডিজি-র দফতরেও অভিযোগ জানান ৷ কিন্তু, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও এফআইআর করা হয়নি ৷
আরও পড়ুন: ঠাকুরনগর সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বত:প্রণোদিত মামলা রাজ্য পুলিশের
মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে শান্তনু ঠাকুরের তরফে আদালতকে জানানো হয়, 11 জুন পাঁচ হাজার পুলিশ মতুয়া মন্দিরে যায় ৷ সেনিয়ে আগাম কোনও তথ্য মন্দির কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি ৷ সেখানে তখন রথের জন্য মিটিং চলছিল ৷ বহু ভক্ত ছিলেন সেখানে ৷ তাই মতুয়া মহাসংঘরের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর তাঁদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন ৷ কিন্তু, পুলিশ পালটা ভক্তদের মারধর করে ৷ আহত ভক্তদের হাসপাতালে ভরতি করাতে গেলে, স্থানীয় ব্লক হাসপাতাল তাঁদের চিকিৎসা করতে অস্বীকার করে বলে আদালতে অভিযোগ করেছেন শান্তনু ৷
পুরো ঘটনায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে একজন এডিজি পদমর্যাদার আধিকারিককের নেতৃত্বে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ পাশাপাশি, ঠাকুরবাড়ির মতুয়া মন্দির ও হাসপাতালের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল অবশ্য বক্তব্যে জানান, ‘‘দু’টি ঘটনা দুই জায়গাযর ৷ ঠাকুরবাড়ি ও হাসপাতাল ৷ তিনজন মহিলার শ্লীলতাহানি হয়েছে ৷ তাই তিনজন অভিযোগ করেছেন ৷ আর হাসপাতালে ভাঙচুর ও অশান্তির ঘটনায় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে ৷’’ তাঁর মতে, মন্দিরের ঝামেলা ভক্তদের দু’টি দলের মধ্যে হয়েছে ৷ 18 জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ৷