কলকাতা, 19 জুলাই: পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যালট পেপার ফেলে দেওয়া, প্রার্থীদের মারধর, গণনাকেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়া । এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে কয়েকশো মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে । মামলা শুনতে শুনতে বুধবার বিরক্তি প্রকাশ করলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা । এই সমস্ত মামলা নিয়ে এবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা করার পরামর্শ দিলেন বিচারপতি ।
এ দিন শুনানিতে বিচারপতি সিনহা নিজের বিরক্তি প্রকাশের পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও ভর্ৎসনা করেন ৷ তিনি জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশনে হাজার হাজার অভিযোগ এসেছিল ৷ কিন্তু কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেনি ৷ কমিশন যদি পদক্ষেপ করত, তাহলে আদালতে এভাবে শ’য়ে শ’য়ে মামলা হতো না ৷ আদালতেরও সময় নষ্ট হতো না ৷
এ দিন হাওড়ার পাঁচলা ব্লকে গণনাকেন্দ্র থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা চুরি, রিগিং করে জয়লাভ, পাশাপাশি বিডিও জোর করে বিরোধী দলের এজেন্টদের দিয়ে লগবুকে সই করিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি হয় ৷ এই ব্যাপারে কমিশন ও বিডিওকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিনহা । একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, আদালতে জমা দিতে হবে প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়েরি । সিসিটিভি ফুটেজ ও ব্যালট সংরক্ষণ করতে হবে ।
অন্য একটি মামলায় উত্তর 24 পরগনার বারাসত মহকুমায় পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসার (এসডিও)-কে আদালতে তলব করেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা । আগামিকাল, বৃহস্পতিবার দুপুর 2টোর সময় তাঁকে আদালতে হাজির হতে বলেছেন বিচারপতি ৷ একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, গণনাকেন্দ্রের ভেতরের ও বাইরের ফুটেজ নিয়ে আসতে হবে । উল্লেখ্য, এই মামলায় গণনাকেন্দ্রের বাইরে প্রিসাইডিং অফিসারের সই করা ব্যালট পেপার উদ্ধার হয় । পাশাপাশি প্রার্থীকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নিয়ে ভূরিভূরি মামলায় হচ্ছে না অন্য শুনানি, ক্ষোভপ্রকাশ প্রধান বিচারপতির
এছাড়া দক্ষিণ 24 পরগনার কুলপির একটি মামলায় গণনাকেন্দ্রে তৃণমূলের বিধায়ক ঢুকে হুমকি দিয়ে সিপিএম জয়ী প্রার্থীকে জোর করে হারিয়ে দেন বলে অভিযোগ ৷ নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে মামলা দায়ের করেন দক্ষিণ 24 পরগনা কুলপি ব্লকের রামকৃষ্ণপুর-2 গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রার্থী । এই মামলায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন বিচারপতি সিনহা ৷ পাশাপাশি তিনি ভোট গণনাকেন্দ্রে সিসিটিভি ফুটেজ ও ব্যালট পেপার সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷
এই মামলায় অভিযোগ তৃণমূলের বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদারের বিরুদ্ধে । গণনার দিন সিপিএম প্রার্থী অর্পিতা বণিক সর্দারকে জয়ী ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই গণনা কেন্দ্রে যান বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার । তাঁর সঙ্গে দুষ্কৃতীরা ছিল বলে অভিযোগ ৷ তিনি প্রভাব খাটিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীকে এক ভোটে জিতিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ মামলাকারীর প্রশ্ন, ভোট গণনার দিন কীভাবে গণনা কেন্দ্রে বিধায়ক এত লোক নিয়ে প্রবেশ করলেন ?
এছাড়া নদিয়ার নাকাশিপাড়া দোগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রোশনারা বিবির অভিযোগ, 152টি ব্যালটে প্রিসাইডিং অফিসারের সই বা কোনও সিল নেই । যেহেতু ব্যালট পেপারে কোনও সই নেই, তাই ব্যালট পেপার বাতিল হওয়া উচিত ৷ সেই কারণে তিনি পুনর্নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছেন ৷
এই মামলায় রিটার্নিং অফিসার (বিডিও) এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতির অমৃতা সিনহা । আগামী 10 দিনের মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
আরও পড়ুন: ভোটপরবর্তী হিংসায় কর্মীরা আক্রান্ত, হাইকোর্টের দ্বারস্থ কংগ্রেস