কলকাতা, 18 নভেম্বর: কর্মশিক্ষা (Work Education) ও শারীরশিক্ষায় (Physical Education) অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) । আগামী 1 ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত ৷ শুক্রবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে হাইকোর্টের নির্দেশ, যাঁরা সুপারিশ পত্র পেয়েছেন, তাঁদের নিয়োগপত্র দেওয়া যাবে না ৷ কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষায় 1600 শূন্যপদ তৈরি করা হয় ৷ তার মধ্যে থেকে 750টি পদে ইতিমধ্যেই নিয়োগের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে । সেই প্রক্রিয়ার উপরই স্থগিতাদেশ দিল আদালত ৷
এদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের (School Service Commission) তরফে জানানো হয়, বাতিল হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ করা হোক অতিরিক্ত শূন্যপদে, এই মর্মে যে আবেদন এসেছিল, তা প্রত্যাহার করা হবে । এই বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে লিখিত নির্দেশিকা এসেছে ।
সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা নতুন চারটি হলফনামায় কমিশনের আবেদন ছিল যে রাজ্যের তৈরি করা শূন্যপদে যেন চাকরি বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয় । কমিশনের এই অবস্থানের উল্টো পথে হেঁটে রাজ্য জানায়, তারা এই অবস্থানের বিপক্ষে, অযোগ্যদের নিয়োগের পক্ষে তারা নয় । এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের জন্য কমিশনের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপের কথা ভাবছে রাজ্য ? আজ জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ।
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মামলাকারীদের তরফে বলেন, ‘‘অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করার অধিকার রাজ্যের নেই । শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনকে পরীক্ষা নিতে হয় । স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী পাস করলে বোর্ড তাঁদের নিয়োগ পত্র দেয় । কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা ছাড়া শূন্যপদ অনুয়ায়ী, 1:1.4 শতাংশ মেনে ইন্টারভিউতে ডাকার নিয়ম । তারপর তালিকা তৈরি করা হয় । প্যানেল এবং ওয়েটিং লিস্ট যেটা তৈরি করা হয়, সেটা এক বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে ।’’
তখন বিচারপতি কমিশনের কাছে জানতে চান সবাইকে সুপারিশ পত্র দেওয়া হয়েছে কি না ! উত্তরে কমিশন জানায়, কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার ক্ষেত্রে সুপারিশ পত্র দেওয়া হয়েছে । কর্মশিক্ষায় 585টি শূন্যপদের মধ্যে 514 জনকে সুপারিশ পত্র দেওয়া হয়েছে এবং শারীরশিক্ষায় 824টি শূন্যপদের মধ্যে 766 জনকে সুপারিশ পত্র দেওয়া হয়েছে ।
তারপরই বিচারপতি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে জানতে চান, ‘‘আপনারা কি নিয়োগ পত্র দিয়েছেন ?’’ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী বলেন, ‘‘না, আপনি মৌখিক নির্দেশে নিয়োগপত্র দিতে বারণ করেছিলেন, তাই পর্ষদ কোনও নিয়োগপত্র দেয়নি ।’’ অন্যদিকে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সওয়াল করেন, ‘‘প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি হলে রাজ্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করতে পারে ।’’
তখন বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনাদের যা ইচ্ছা করুন, আমি শুধু ছাত্রদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত ।’’ এর পর রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ‘‘হ্যাঁ, বিভিন্ন রাজনৈতিক জমানাতে শিক্ষার অবক্ষয় হয়েছে । একটা সরকার ইংরেজি বন্ধ করে দিয়েছিল, এটা খুব বড় ভুল ছিল ।’’ এই নিয়ে সহমত পোষণ করেন বিচারপতিও তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এটা বড় ভুল ।’’
শেষে শূন্যপদ নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানতে চেয়ে রাজ্যকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ আগামী 28 নভেম্বরের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে রাজ্যকে ৷ 30 নভেম্বর পরবর্তী শুনানি ।
আরও পড়ুন: কর্মশিক্ষায় সুপার নিউমেরিক পদ তৈরি করে কীভাবে নিয়োগ, রাজ্যের হলফনামা তলব বিচারপতির