কলকাতা, 31 জুলাই: বেসরকারি স্কুলের ফি-বৃদ্ধির মামলায় এবার ভিনরাজ্যের উদাহরণ টানল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ কীভাবে রাজ্য় সরকার বেসরকারি স্কুলগুলির ফি-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা রুখবে ? সেই প্রসঙ্গেই রাজস্থান সরকারের গাইডলাইনকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজস্থান এই ধরনের গাউডলাইন তৈরি করতে পারলে, এই রাজ্যে কেন হবে না ?’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের বেসরকারি স্কুলের ফি নির্ধারণে নজরদারি চালায় কি না, সেই নিয়ে হলফনামা চেয়েছে আদালত ৷ আগামী 17 অগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানি ৷
রাজ্যে তথা কলকাতার বেশ কয়েকটি নামী বেসরকারি স্কুলে ইচ্ছেমতো ফি বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে ৷ এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে অভিভাবকদের তরফে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে ৷ আজ সেই মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চে ৷ মামলার শুনানিতে বিচারপতি বেশ কিছু প্রশ্নের উত্থাপন করেন এদিন ৷ বিচারপতির প্রশ্ন, ফি কতটা বাড়াবে, কখন বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে রাজ্যের কোন নজরদারি আছে ?’’
এই প্রসঙ্গেই ভিনরাজ্যের প্রসঙ্গ টানেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ৷ বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘অন্যান্য রাজ্যে দেখেছি ফি রেগুলেশন নিয়ে নিজস্ব আইন আছে ৷ এ রাজ্যে কি এই ধরনের কোন গভর্নিং বডি আছে ? যারা ফি কতটা বাড়ানো হবে, সেটা দেখবে ৷ শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে ৷ এ ব্যাপারে রাজ্য কী কিছু প্রস্তাব দিয়েছে ? ফি স্ট্রাকচার কী হবে, সেটা নিয়ে কেন গাইডলাইন নেই ?’’
আরও পড়ুন: মেটাতে হবে বকেয়া ফি, মার্চ থেকে বেসরকারি স্কুলে পুরো বেতন ; নির্দেশ হাইকোর্টের
তবে, শুধু স্কুলের ফি নির্ধারণ বা বৃদ্ধির বিষয় নয় ৷ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকদের বেতন নিয়ে আদৌ কি কোন নির্দেশ আছে রাজ্যের ? এরকম একটা গাইড লাইন হওয়া দরকার ৷ বেসরকারি স্কুলের সেটা পছন্দ হোক বা নাই হোক, এটা প্রয়োজনীয় ৷ বেসরকারি স্কুল লাভজনক ব্যবসা করতে পারে না ৷’’ আর সেই প্রসঙ্গে রাজস্থানকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে আদালত ৷
আরও পড়ুন: ফি মকুবের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ডেপুটেশন বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকদের
উল্লেখ্য, এই মামলায় রাজ্য সরকার পার্টি ছিল না ৷ তাই আদালতের এই সব প্রশ্নের জবাবে মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সেরকম কিছু নেই। ৷ সরকারি স্কুলের দৈন্যদশার জন্যই বেসরকারি স্কুলের এত রমরমা ৷ মাত্র দু’বছরে শিশুদের স্কুলে পাঠানো হচ্ছে ৷ কে এ বিষয়ে দেখবে ?’’ তাই আগামী শুনানিতে এই সব প্রশ্নের জবাব হলফনামা আকারে রাজ্য সরকারকে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷ আগামী 17 অগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানিতে সেই হলফনামা জমা দিতে হবে সরকারকে ৷
তবে, এই প্রথম নয় ৷ করোনা অতিমারির সময় অনলাইন ক্লাস চললেও, বেসরকারি স্কুলগুলির বিরুদ্ধে ফি-বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছিল ৷ যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল ৷ সেই সময় রাজ্য সরকারকে কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট ৷ ফের একবার বেসরকারি স্কুলের ফি-বৃদ্ধিতে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কয়েকটি স্কুলের অভিভাবকদের একাংশ ৷