কলকাতা, 12 জুলাই: পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হওয়া হিংসার তথ্য অনুসন্ধানে এসে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে নিশানা করলেন বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ ৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনার রাজনীতি কেন বামেদের রাজনীতির চেয়েও খারাপ হয়ে গেল ? আপনার রাজনীতি কেন এতটা স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে গেল ?’’
রবিশঙ্কর প্রসাদের নিশানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়: এ দিন সাংবাদিক বৈঠকের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন রবিশঙ্কর প্রসাদ ৷ শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে গণতন্ত্র লুঠ হয়েছে, পাপ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে সভাপতি জেপি নাড্ডা পাঠিয়েছেন ৷’’ তার পরই মমতার উদ্দেশ্য়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ৷ বলেন, ‘‘মমতাজি আপনার কী হল ? আজ আমি সবিনয়ে মমতাজি মনে করিয়ে দিতে চাই জাতীয় রাজনীতি ও বাংলার রাজনীতি তাঁর নিজের বদল সম্পর্কে ৷ আপনি তো লড়াকু ছিলেন, তাই না !’’
এর পর তিনি বাংলায় বামশাসনের প্রসঙ্গ টানেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন ৷ 34 বছরের নিষ্ঠুর বামশাসনের শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ৷ আমরা খুশি হয়েছিলাম ৷ কিন্তু এমন কী হল, যে আপনি তার থেকে এগিয়ে গেলেন ? আপনার রাজনীতি কেন বামেদের রাজনীতির চেয়েও খারাপ হয়ে গেল ? আপনার রাজনীতি কেন এতটা স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে গেল ?’’
তাঁর আরও বক্তব্য, এর জবাব তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতেই হবে ৷ প্রতিবার ভোটে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় ৷ সুপ্রিম কোর্টেও তো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ৷ আদালত কড়া ছিল বলেই বিজেপির প্রার্থীরা জিততে পেরেছেন ৷ না হলে এত জিততেন না ৷ পাশাপাশি তিনি টেনেছেন উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের প্রসঙ্গ ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ভোটের দিন যা হয়েছে, তা আগে তো বিহার উত্তরপ্রদেশে হত ৷ এখন তো হয় না ৷ উত্তরপ্রদেশে তো বিজেপিই জিতেছে ৷ কোনও হিংসা তো হয়নি ৷’’
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে মামলার চূড়ান্ত নির্দেশের উপর: হাইকোর্ট
তিনি আরও বলেন, "আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটা সোজা প্রশ্ন করতে চাই যে যদি আপনি সন্ত্রাস না করতেন তাহলে কতগুলি আসন জিততে পারতেন ? রাজ্য সরকার ও রাজ্য পুলিশ এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তা না থাকলে আপনি কতগুলি আসন যেতে পারতেন ?"
রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, আজই তাঁরা উত্তর 24 পরগনার বসিরহাটে যাবেন ৷ আগামিকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ 24 পরগনার বাসন্তী, ক্যানিংয়ে যাবেন ৷ তার পর তাঁরা যাবেন উত্তরবঙ্গ ৷ সর্বত্র তাঁরা আক্রান্ত ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন ৷ কিন্তু এই সব জায়গায় যাতে তাঁদের যেতে দেওয়া হয়, সেই বিষয়ে আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ৷
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য অত্যন্ত কম সময় দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন । তিনি জানান, গতকাল, মঙ্গলবার গণনার সময়ও সন্ত্রাস হয়েছে । জেতার পর বিজেপি প্রার্থীদের তৃণমূলে যোগদান করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতিতেও লড়াইয়ে অটল থাকায় তিনি বিজেপির নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান ৷
আরও পড়ুন: মেয়ের হয়ে গণনাকেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা তৃণমূল বিধায়কের, 'লাঠিচার্জ' কেন্দ্রীয় বাহিনীর
বিরোধীদের বৈঠককে কটাক্ষ: একই সঙ্গে বিহারের পটনায় হওয়া বিরোধীদের বৈঠক নিয়েও কটাক্ষ করেন ৷ তাঁর কথায়, পটনায় একটা বৈঠক করে মোদি সরকারকে অগণতান্ত্রিক বলা হয়েছিল । আর সেই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু এখন তো রাহুল গান্ধির দলের কর্মীরাও আক্রান্ত ৷ তিনি কেন চুপ করে রয়েছেন ৷ বিরোধীদের অনেকেই মার খেয়েছেন মারা গিয়েছেন । তাহলে তাঁরা কেন চুপ করে রয়েছেন ? তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘এই বাংলায় গণতন্ত্র নেই । এখানে যা হচ্ছে, তাতে সবাই লজ্জিত । আসলে সবাই সুবিধাবাদের রাজনীতি করছে মোদি সরকারকে সরাবার জন্য ।’’
নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ: রবিশঙ্করের বক্তব্য, বিএসএফ জানিয়েছে যে তাঁদের সংবেদনশীল বুথের তালিকা দেওয়া হয়নি । এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে । বিজেপি এই লজ্জার শেষ করবে । তাঁর দাবি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে তাঁদের কোনও বিশ্বাস ও ভরসা নেই । রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘তিনি (নির্বাচন কমিশনার) তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের উচ্চপদাধিকারী ছিলেন । তিনি যেভাবে পুরো নির্বাচনটা পরিচালনা করলেন তাতে গণতন্ত্র লজ্জিত । কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করা হয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে । এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই কাজ করেছে ।’’
আরও পড়ুন: গণনা ঘিরে একাধিক খুন দক্ষিণ 24 পরগনায়, উত্তপ্ত ভাঙড়-রায়দিঘি