মালদা, 24 জানুয়ারি: ক’দিন আগেই মালদা সফরে এসে প্রয়াত দুলাল সরকারের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, মালদার রাজনীতি তিনি বোঝেন না ৷ কাউন্সিলর ভোটে জিতলেও এমএলএ-এমপি পান না ৷
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এর মধ্যের রহস্য তাঁর জানা রয়েছে ৷ অনেক রকম খেলা চলে ৷ সেই খেলা যে কী, তার প্রমাণ মিলেছে কালিয়াচক 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে ৷ যে এলাকায় রাজ্যে রেকর্ড ভোটে জিতেছিলেন তাঁর প্রার্থী আবদুল গনি, সেই কালিয়াচক 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি তাঁর দলের অন্দরের খেলায় হাতছাড়া হতে বসেছে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে ৷
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে 42 আসনবিশিষ্ট কালিয়াচক 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল পেয়েছিল 25টি আসন ৷ বাকি 17টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল 16টি ৷ একটি আসনে জিতেছিলেন এআইএমআইএম প্রার্থী ৷ স্বাভাবিকভাবেই পঞ্চায়েত সমিতির দখল নেয় তৃণমূল ৷ সভাপতি নির্বাচিত হন তসলিমা খাতুন ৷ কিন্তু ক্যানসার আক্রান্ত তসলিমা 2024 সালের 4 জুন প্রয়াত হন ৷
তাঁর প্রয়াণের পর সভাপতির দায়িত্ব পান করছেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আলিউল শেখ ৷ এখনও পর্যন্ত সেখানে স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত করতে পারেনি শাসকদল ৷ এদিকে কিছুদিন ধরেই কংগ্রেস-সহ তৃণমূল সদস্যদের একাংশ অভিযোগ করছেন, স্থায়ী সভাপতি না থাকায় পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে থাকা 14টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় উন্নয়নের কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে না ৷
স্থায়ী সভাপতি পেতে বিরোধী কংগ্রেসের 16 জন সদস্য জেলাশাসক, সদর মহকুমাশাসক এবং কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের বিডিওকে লিখিত আবেদনও করেছেন ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত এব্যাপারে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে তাঁদের অভিযোগ ৷ সেই কারণে সম্প্রতি কংগ্রেসের সদস্যরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ৷
এই নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সাদেমান খান বলেন, “সভাপতি পেতে আমরা জেলাশাসক থেকে শুরু করে বিডিওর কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছিলাম ৷ কিন্তু প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না করায় আমরা কলকাতা হাইকোর্টে যেতে বাধ্য হয়েছি ৷ আদালত নিশ্চয়ই আমাদের আবেদনে সাড়া দেবে ৷ সেক্ষেত্রে আমরাই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত করব ৷”
তসলিমা খাতুনের মৃত্যুর পরেও কালিয়াচক 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৃণমূলের ৷ মাত্র 16 জন সদস্য নিয়ে সভাপতি নির্বাচিত করবেন কীভাবে ? সাদেমানের উত্তর, “আমরা কখনও তৃণমূলে যোগ দেব না ৷ তৃণমূলের প্রার্থীকেই আমরা সমর্থন করব ৷ ইতিমধ্যে আমাদের 16 জনের সঙ্গে তৃণমূলের সাত সদস্য আলাদা শিবির করে আছেন ৷ তাঁদেরই কেউ সভাপতি হবেন ৷ তার বিনিময়ে কংগ্রেস সদস্যরা কাজ পাবেন ৷ এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷”
রাজনৈতিক মহল বলছে, এখানেই লুকিয়ে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খেলা ৷ কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লক তৃণমূল এই মুহূর্তে দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত ৷ এক গোষ্ঠীকে চালনা করছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি সারিউল শেখ, অন্য গোষ্ঠীর মাথায় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আলিউল শেখ ৷ যে সাত সদস্য কংগ্রেসের সমর্থনে রয়েছেন, তাঁরা সারিউল গোষ্ঠীর ৷
তৃণমূল সূত্রে খবর, এদের পরিচালনা করছেন দলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ অন্যদিকে আলিউল গোষ্ঠীর মাথায় হাত রয়েছে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ও সুজাপুরের বিধায়ক আবদুল গনির ৷ রহিম বকসির সঙ্গে ওই এলাকায় কংগ্রেস নেতা সাদেমান খানের ঘনিষ্ঠতাও নাকি ইদানিং বেড়েছে ৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতির পরামর্শেই তাঁরা নাকি সভাপতি নির্বাচনের দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷
যদিও এনিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি আবদুর রহিম বকসি ৷ এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের দলীয় সংগঠন নিয়ে গতকাল রাতে সেখানকার নেতৃত্বকে নিয়ে একটি বৈঠক করা হয়েছে ৷ ওই বৈঠকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনের প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে ৷ আশা করছি, দ্রুত সেখানে নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেবেন ৷ তবে আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই ৷ সবাই একজোট হয়েই কাজ করছেন ৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের প্রচার ছাড়া আর কিছু নয় ৷”