কলকাতা, 24 জানুয়ারি: নির্দেশিকা মেনে রাজ্যকে অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার নিয়োগ করতে হবে ৷ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এমনই নির্দেশ দিয়েছে । তারা আরও জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দেশিকা মেনেই হবে নিয়োগ ৷ ফলে প্রায় 26 বছর পর আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগের জট কাটতে চলেছে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একটা বড় অংশ। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, নিয়োগের সময় মোট শূন্য পদের 50 শতাংশের ক্ষেত্রে যে সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কাজ করছেন তাঁদের সুযোগ দিতে হবে । বাকি 50 শতাংশ বাইরে থেকে নিয়োগ করতে হবে ।
- আবেদনকারীদের অভিযোগ এবং কেন্দ্রের নিয়ম
এই বিষয়ে আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জানান, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের নির্দেশ না মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে । তাছাড়া গত প্রায় 26 বছর ধরে রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনওরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। অথচ তাঁদের দিয়ে সমস্ত কাজ করিয়ে নিচ্ছে ।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে 2015 সালে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল । সেখানে বলা হয়েছিল সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্যপদের 50 শতাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং 50 শতাংশ বাইরে থেকে নিয়োগ করতে পারবে । কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারে এই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাইরে থেকেই 75 শতাংশ শূন্যপদে নিয়োগ করছিল রাজ্য । উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রেখেছে ।
উল্লেখ্য, আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিল 1998 সালে । পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় 2019 সালে । 3458টি আইসিডিএস সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় । কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে 2015 সালের 15 সেপ্টেম্বরে নির্দেশনামায় পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে মোট শূন্যপদের 50 শতাংশ অঙ্গনওয়ারি কর্মী থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতেই নিয়োগ করতে হবে ।
- রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ?
রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের জন্য শুধুমাত্র 422টি শূন্যপদ রেখে বাকি 3036টি শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে । রাজ্য সরকারের এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে কিছু অঙ্গনওয়ারির কর্মী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । বিচারপতি লাপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2023 সালের 19 সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন 50 শতাংশ শূন্যপদে পদোন্নতির ভিত্তিতেই অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের থেকেই নিতে হবে । কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখে বলে অভিযোগ ।অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের অনেকে প্রোমোশনাল সুপারভাইজার পদের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন । 1152 জনের একটি মেধাতালিকাও প্রকাশ করা হয়েছিল । যারা পরবর্তীতে ইন্টারভিউতে বসতে পারবেন । অভিযোগ, সেই চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশ না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সরাসরি চালু রাখা হয় ।আদালতে মামলা দায়ের হতেই 13 জানুয়ারি 2024 সালে বিচারপতি লাপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয় । মামলাটি শুনানি হলেও সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ ।
- নতুন মামলা
এমতাবস্থায় নিয়োগ জট কাটাতে নতুন করে মৌমিতা ঘোষ, দীপা মণ্ডল-সহ 415 জন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলা করেন । তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে 50 শতাংশ শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের চাকরি দিতে হবে ।
- বিচারপতির নির্দেশ
এরপর বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, যেহেতু বিচারপতি লাপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই তাই রাজ্য সরকার ও পিএসসিকে 50 শতাংশ শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে । পাশাপাশি রাজ্য সরকার 3458টি শূন্যপদের মধ্যে 1729 জনকে অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিয়োগ করতে হবে ৷
গত 12 এপ্রিল যে 409 জন প্রোমোশনাল পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য, তার নিয়োগ চালিয়ে যেতে পারবে রাজ্য সরকার । বাকি শূন্যপদে 1152 জনের মেধাতালিকা থেকেই নিয়োগ করতে হবে । যেহেতু এই নিয়োগের বিষয় ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন ছিল তাই রাজ্য সরকার এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি । আজ ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ই বহাল রেখেছে ।