কলকাতা, 29 ডিসেম্বর: লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে 35টি আসন জিততে চায় বিজেপি ৷ সেই লক্ষ্য়ে পৌঁছাতে ঠিক কী কী করা উচিত, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে ৷ বিজেপি সূত্রের খবর, বাইরের সংস্থাকে এনেও পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে চায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ এতে নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করা অনেক সহজ হবে ৷
2019 সালে বিজেপি তিনশোর বেশি লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছিল ৷ এবার তার থেকেও বেশি আসনে জিততে মরিয়া নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা ৷ বিজেপির মূল শক্তি যেখানে, সেই হিন্দিবলয়ে 2014 থেকে প্রায় সবক’টি আসনেই জিতছে তারা ৷ তাই আসন সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিজেপি এমন বেশ কয়েকটি রাজ্যে নজর দিয়েছে, যেখানে আগের তুলনায় দ্বিগুণ সাফল্য আনা যায় ৷
সেই রাজ্যগুলির তালিকায় অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ ৷ এই রাজ্যে 42টি লোকসভা আসন ৷ 2019 সালের 18টি আসনে জিতেছিল বিজেপি ৷ এবার 35টি আসনে জিততে চায় তারা ৷ তাই এখন থেকেই বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়েছে বঙ্গে নির্বাচনী সাফল্য আনতে ৷ চলতি সপ্তাহে কলকাতায় এসে এই রাজ্যের বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন অমিত শাহ (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ও জেপি নাড্ডা (বিজেপির জাতীয় সভাপতি) ৷
বিজেপি সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় ৷ বাংলায় বিজেপির দুর্বলদিকগুলি, সাংগঠনিক খামতিগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ৷ পাঁচ বছর আগে জয়ী সাংসদদের রিপোর্ট কার্ড নিয়েও কাটাছেঁড়া হয় বৈঠকে ৷ তার পর দলের নেতাদের কাছ থেকে বঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে ‘ইনপুট’ চেয়েছে দিল্লির গেরুয়া শিবিরের নেতারা ৷ কিন্তু শুধু দলের নেতাদের কথা ‘বিশ্বাস’ করতে নারাজ শাহ-নাড্ডারা ৷ বরং তৃতীয়পক্ষকে দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৷
গেরুয়া শিবিরের একটি সূত্র বলছে, একেবারে তৃণমূলস্তরে সমীক্ষা করে বাংলায় বিজেপির সাংগঠনিক অবস্থা, কোন কোন আসনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, কোন কোন প্রার্থী জিততে পারেন, কোথায় কী কী খামতি রয়েছে, কী করলে দল এখানে শক্তিশালী হবে, তা খতিয়ে দেখতে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ সংস্থাটি ভিনরাজ্যের৷ তাদের প্রতিনিধিরা এসে পুরোটা খতিয়ে দেখে যাবেন ৷
তার পর ওই সংস্থা রিপোর্ট দেবে বিজেপির জাতীয় নেতাদের৷ সূত্রের খবর, দলের নেতাদের ‘ইনপুট’-এর সঙ্গে ওই রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে ৷ তার পর সবটা বিশ্লেষণ করে ভোটের আগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ ওই সূত্র জানাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ইতিমধ্য়েই বিভিন্ন জায়গায় কাজ শুরু করে দিয়েছে ৷ রিপোর্টও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে শীঘ্রই পৌঁছে যাবে ৷
উল্লেখ্য, 2014 সালের পর থেকে বঙ্গ রাজনীতির জল যত গড়িয়েছে, ততই গেরুয়া শিবিরের শক্তি বেড়েছে ৷ যার ফল 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া যায় ৷ বিজেপির 18 আসনে জয় চমকে দিয়েছিল প্রায় সকলকেই ৷ অনেকে মনে করেছিলেন, সেই সাফল্যে ভর করে 2021 সালে বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হবে ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ লোকসভায় আসন জয়ের নিরিখে বাংলায় অন্তত শতাধিক আসনে জেতা উচিত ছিল গেরুয়া শিবিরের ৷ সেটা তো হয়ইনি ৷ বিজেপির জয় থেমে যায় সাতাত্তরে ৷
তাই এবার আর ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি করতে চায় না দল, এমনটাই জানাচ্ছে বিজেপির ওই সূত্র ৷ ওই সূত্রের দাবি, সেই কারণেই একেবারে আঁটঘাঁট বেঁধে নেমেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ৷ তাছাড়া 2026 সালের বিধানসভা নির্বাচনকেও এখন থেকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে বিজেপি ৷ এই ধরনের সমীক্ষা সেখানেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
এই প্রসঙ্গে আগেই রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান, রাজ্যে বিজেপির লক্ষ্য 2026-এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসা । আর সেই জন্য লোকসভায় পাঁচটি জোন থেকেই আসন পেতে হবে । নয়তো বিজেপি বঙ্গে ক্ষমতায় আসার লড়াইয়ে অনেকটা পিছিয়ে যাবে । তাই প্রতিটি জোনের উপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: