কলকাতা, 7 জানুয়ারি: ব্যারাকপুর-বরানগর রুটে মেট্রোর কাজে বাধা ৷ রাস্তার নিচ থেকে পাইপ লাইন সরানো নিয়ে কলকাতা পুরনিগমকে ফের চিঠি দিল রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড বা আরভিএনএল ৷ সমীক্ষা করে তবেই পদক্ষেপ করা হবে বলে স্পষ্ট জানালেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ৷
কলকাতা ও শহরতলির মেট্রো পরিষেবা আরও বিস্তারলাভ করছে । বিভিন্ন রুটে চলছে দ্রুত কাজ । তবে ব্যারাকপুর-বরানগর রুটে কাজ আটকে পাইপের জাঁতাকলে । কারণ, বিটি রোড ধরে মেট্রো তৈরির রুটে রাস্তার নিচ দিয়ে পলতা থেকে টালা একাধিক জলের পাইপ গিয়েছে । সেই পাইপ না সরালে একদমই কাজ এগোতে পারবে না মেট্রো । এমনই দাবি করে এই মেট্রো রুট তৈরির দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড ফের কলকাতা পুরনিগমের কাছে চিঠি দিয়েছে । তবে সমীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না পেলে বিটি রোডের ওই জলের লাইন সরানোর ঝুঁকি নিতে পারছে না কলকাতা পুরনিগম ।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, রেল ও বাস পরিষেবার সঙ্গেই মেট্রো পরিষেবা পৌঁছবে ব্যারাকপুর পর্যন্ত । তাহলে উত্তর 24 পরগনার সঙ্গে কলকাতার যোগ সূত্র আরও দৃঢ় হবে । সহজেই ঝঞ্ঝাটহীনভাবে কম সময় কলকাতা থেকে ব্যারাকপুর বা সেখান থেকে কলকাতায় আসা-যাওয়া করতে পারবে মানুষজন । তবে সেই মেট্রো প্রকল্প তৈরির মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা পুরনিগমের টালা-পলতা জলের পাইপ লাইন ।
কলকাতার সিংহভাগ এলাকা এমনকি বিধাননগর, সল্টলেক, নিউটাউন কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটি-সহ মহানগর লাগোয়া বিভিন্ন মিউনিসিপালিটির জল যায় এই পলতা জল প্রকল্প থেকে টালা হয়ে । ফলে মেট্রোর কাজ করতে গিয়ে যদি কোনোভাবে একটি পাইপ লাইনও সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে কলকাতা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের ভয়ংকর সঙ্কট তৈরি হবে । কিন্তু এই পাইপ লাইনের জটের জেরে ওই জায়গায় মেট্রোর প্রকল্পের গতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে । বেশ কয়েক বছর ধরেই চিঠি চালাচালির মধ্যে দিয়ে ও রাজনৈতিক দাবি পালটা দাবির উপরেই জিইয়ে আছে এই প্রকল্প নিতে বিতর্ক ।
তবে সম্প্রতি ফের এই প্রকল্পের কাজের জন্য আরভিএনএল কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে । পুরনিগম সূত্রে খবর, ওই চিঠিতে মেট্রোর তরফে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ এগোতে পাইপ লাইন সরানো প্রয়োজন রয়েছে । তাই পাইপ লাইন সরানোর ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তারা সাহায্য করতে পারে । এর আগেও বেশ কয়েকবার কলকাতা কর্পোরেশনের পানীয় জল সরবরাহ বিভাগ, ড্রেনেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা ওই এলাকায় মেট্রোর কাজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন । এমনকি পুরনিগম যাদবপুরের কাছে একটি সমীক্ষা করতে দিয়েছে । তাতে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে, কিভাবে এই পাইপ লাইন সরিয়ে মেট্রো প্রকল্প করা যায় ।
কলকাতা পুরনিগমের তরফে জানা গিয়েছে, পলতা জল উৎপাদন কেন্দ্র থেকে মোট চারটি পাইপ বিটি রোড ধরে এসেছে টালায় । পাইপগুলি 72 ইঞ্চি ব্যাসার্ধের । এক একটি বিরাট বিরাট পাইপ । সেই পাইপ স্থানান্তর করা খুব সহজ বিষয় নয় বলে মনে করছে পুরনিগম কর্তৃপক্ষ । তবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তিতে সেই কাজ করে ফেলা সম্ভব হবে ।
তবে মেট্রো যাই বলুক না কেন কাজ শুরু হলে যদি কোনোভাবে সমস্যা তৈরি হয় তাতে মুহূর্তে সংকট দেখা দেবে বিস্তীর্ণ কলকাতা জুড়ে পানীয় জলে । আর সেই গোটা দায় এসে পড়বে কলকাতা কর্পোরেশনের ঘাড়ে । এই আশঙ্কা থেকেই ধীরে চলো নীতি নিতে চাইছে পুর কর্তৃপক্ষ । যে প্রযুক্তির কথা মেট্রো বলছে, সেই প্রযুক্তি নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা কর্পোরেশনের আধিকারিকরা ।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "রাতারাতি কোনও অবস্থান জানানো বা পদক্ষেপ করা সম্ভব নয় । কারণ ওই পাইপ লাইনগুলো দিয়ে শহরের সিংহভাগ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ হয়ে থাকে । ফলে তাতে সামান্য সমস্যা হলেও বড় বিপর্যয় তৈরি হবে । তাই সমীক্ষা করতে বলেছি । সমীক্ষা রিপোর্টে কী বলে সেটা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব ।"
উল্লেখ্য, ব্যারাকপুরের বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং এই মেট্রো প্রকল্প আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে । তবে বর্তমান তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে কল্যাণী পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা বিস্তরের দাবি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন । ব্যারাকপুর-বরানগর মেট্রো পরিষেবা চালু হলে এই বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজনকে বাসে ও ট্রেনে বাদুর ঝোলা হয়ে যেতে হবে না ৷ সেই যন্ত্রণা থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহলমহল ।