নন্দীগ্রামের ভোট সমাপ্ত ৷ আর তার ধূলো এবং আবহে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তৃতীয় দফার নির্বাচন ৷ এবার আসন সংখ্যা 31 ৷ সন্দেহ নেই, এটা ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে অ্যাসিড পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে ৷ আর এর মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে দক্ষিণ 24 পরগনার 16টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৷
প্রথম থেকেই দক্ষিণ 24 পরগনার এই কেন্দ্র গুলিকে পাখির চোখ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কার্যত ঘাঁটি গেড়েছেন এই জেলায় ৷ এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ 24 পরগনা রাজ্যের খুব জেলা গুলির মধ্যে অন্যতম, যেখানে রক্তপাতের কোনও ঘটনা ঘটেনি ৷
2019-এর লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) চমকদায়ক ফল করেছিল ৷ 42 টা লোকসভা আসনের মধ্যে 18 টা পেয়েছিল তারা ৷ কিন্তু, দক্ষিণ 24 পরগনা থেকে দলটি কিছুই করতে পারেনি ৷ শুধু তাই নয়, 31 বিধানসভা আসন বিশিষ্ট দক্ষিণ 24 পরগানার কোনও কেন্দ্র থেকেই লিড নিতে পারেনি বিজেপি ৷ এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে নেত্রীকে ৷
কিন্তু, এর পরই 2020 সালের মে আসে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফান ৷
বাংলার ছয় জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় দুই উপকূলবর্তী জেলা বিশেষ করে উত্তর এবং দক্ষিণ 24 পরগনায় মারাত্মক ক্ষতি করেছিল ৷ ধ্বংসের পর ত্রাণ এবং পুনরুদ্ধারের কাজ নিয়ে হাজার হাজার মানুষের মনে নানা ভাবে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল ৷ দক্ষিণ 24 পরগনার বিভিন্ন জেলায় সাধারণ মানুষের জীবন ও বাসস্থান পুনঃনির্মানের জন্য যে যে পদক্ষেপ করা হয়, তা নিয়ে পক্ষপাতিত্বের একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছিল ৷ ক্যানিং পূর্ব, রায়দিঘি, ফলতা, ক্যানিং পশ্চিম বা কুলতলি বিধানসভা আসনের যে কোনও গ্রাম- সড়কের যে কোনও বাড়িতে উঁকি দিলেই স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্মীর বিরুদ্ধে অবিশ্বাস এবং ক্ষোভের ছবিটা ধরা পড়বে ৷ আর ঘটনাচক্রে বেশির ভাগ পঞ্চায়েতই ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের অধীনে ৷ এই ছবিটি নিঃসন্দেহে গল্পে নতুন মোড় এনেছে ৷
আরও পড়ুন : কালবৈশাখীর মধ্যেই তৃতীয় দফা, ওলটপালট হবে কি সমীকরণ ?
তবে, এটাও মনে রাখতে হবে, অভিযোগটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিম্ন স্তরের নেতাদের বিরুদ্ধে ৷ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁরা সে ভাবে দোষারোপ করেন না ৷ সরকারি ত্রাণ লুটের বিষয়ে দলের নিচু স্তরের নেতারাই তাদের নিশানায় ৷ বিরোধী বিজেপি গত বছরের মে মাস মাস থেকে তৃণমূল বিরোধী প্রচারকে উচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়েছে ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কিছু ভোটার তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, ঠিক তখনই নাটকের রঙ্গমঞ্চে আর্বিভাব হয় ইন্ডিয়ার সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) তথা ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর ৷
ধর্মীয় মেরুকরণের ফলে পাটিগণিতের হিসেব অনেক সময়ই অস্পষ্ট এবং অস্বচ্ছ হয়ে ওঠে ৷ মহেশতলা, ক্যানিং, বারুইপুর, ডায়মন্ড হারবার বা মগরাহাটের মতো বিধানসভা কেন্দ্র গুলিতে সংখ্যালঘু ভোটের আধিক্য রয়েছে ৷ আর এই এলাকায় সিদ্দিকীর উত্থান বিজেপির কাজটা বেশ কঠিন করে তুলেছে ৷ এর ফলে এই এলাকায় মমতার পথটা আবারও মসৃণ হয়ে উঠল ৷ এখন প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি দক্ষিণ 24 পরগনায় 2019-এর অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হবেন? প্রশ্নটা সুন্দরবনের নোনতা সামুদ্রিক জলের মতোই মনে হচ্ছে ...
অন্য দিকে, হুগলি জেলার আটটি আসন বিরোধী বিজেপির পক্ষে এক বিচিত্র পরিস্থিতি তৈরি করেছে ৷ কয়েকটি আসন যেমন গোঘাটে বিশ্বনাথ কারাক, তারকেশ্বরে স্বপন দাশগুপ্তের মতো নেতাদের নতুন করে মাঠে নামিয়েছে বিজেপি ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূল বা সংযুক্ত মোর্চা অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছভাবমূর্তির নেতাদের প্রার্থী করেছে ৷ সন্দেহ নেই মঙ্গলবার এই লড়াই নিঃসন্দেহে উপভোগ্য হতে চলেছে ৷
2019 সালের মতো মমতা দক্ষিণ 24 পরগনায় সব পরীক্ষায় সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারবেন ? তৃণমূলের দুর্গ এবং ভোট সমীক্ষাগুলিতে বিজেপি কোনও ভয়ঙ্কর বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না তো? আইএসএফ কি তার উপস্থিতি প্রমাণ দিতে পারবে? বড় সড় কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারবে ? ফল প্রকাশ 2 মে ৷
(লেখক ইটিভি ভারতের নিউজ কো-অর্ডিনেটর)