ETV Bharat / state

রেজিস্ট্রি করে বিক্রি হয়ে গেল খোদ সরকারি জমি ! মালদার ঘটনায় তোলপাড় - UPROAR IN MALDA OVER GOVT LAND

হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের কাছে 13 বিঘা জমি আছে রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা একটি সংস্থার। সেই জমিরই একটি অংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

GOVT LAND ILLEGALLY SOLD
বিক্রি হয়ে গেল খোদ সরকারি জমি (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 4, 2025, 9:40 PM IST

মালদা, 4 জানুয়ারি: সরকারি জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে দেড় কোটি টাকায় ! সেই জমি আবার রেজিস্ট্রিও হয়েছে ৷ জমির বিক্রেতা দক্ষিণ 24 পরগণার বাসিন্দা ৷ ক্রেতার বাড়ি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় ৷ তিনি নিজের জমি রেকর্ড করাতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে গেলে সর্ষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভূতের সন্ধান পান ৷ জানতে পারেন, এই জমির মালিক আর কেউ নয়, রাজ্য সরকারের একটি সংস্থা।

পাশাপাশি দেখা যায়, জমি কেনাবেচায় বিক্রেতার তরফে জমা করা ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে ৷ এরপরেই ওই জমির রেকর্ড করা বন্ধ করে দেন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্মীরা ৷ এই খবর চাউর হতেই শোরগোল পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷

ঠিক কী হয়েছে?

হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় রাজ্য সেচ দফতরের অধীনস্ত মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনের প্রায় 13 বিঘা জমি রয়েছে ৷ জমিটি ঘিরেও রাখা হয়েছে ৷ দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকেই 6 বিঘা জমি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কাউয়ামারি গ্রামের সিরাজুল হককে বিক্রি করে দিয়েছেন দক্ষিণ 24 পরগণার বাসিন্দা দীপেন্দ্রকুমার মিশ্র ৷ দেড় কোটি টাকায় এই জমির কেনাবেচা হয় ৷ জমিটি বিক্রির সময় দাখিল করা ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে আলিপুর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর রয়েছে ৷ নথিতে জমিটিকে রায়তি সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে ৷ সেই কাগজ দেখেই হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা সাব রেজিস্ট্রার অফিস জমিটি সিরাজুল হকের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয় ৷

কোথায় খটকা?

রেজিস্ট্রির পর জমির রেকর্ড পেতে সিরাজুল হরিশ্চন্দ্রপর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন করেন ৷ কিন্তু জমির সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখে দফতরের কর্মীদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে ৷ তাঁরা জমির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সরেজমিনে তদন্তে যান ৷ জমি মাপজোক করে চোখ কপালে ওঠে তাঁদের ৷ তাঁরা দেখেন, সবার অলক্ষ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে সরকারি জমি ৷ তৎক্ষণাৎ তাঁরা রেকর্ডের আবেদনপত্র বাতিল করে দেন ৷

হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেভিনিউ অফিসার হিমাংশুকুমার মণ্ডল বলেন, “একটি জমি রেকর্ড করার জন্য আমাদের কাছে দলিল এসেছিল ৷ সেই দলিল পরীক্ষা করার সময় ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দেখে আমাদের সন্দেহ হয় ৷ আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করি ৷ তখনই জানতে পারি, জমিটি সরকারি ৷ আমরা মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনকে চিঠি দিয়েছি ৷ জমিটি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এসেছি ৷ দেখা যাচ্ছে, যে দাগের জমি বিক্রি হয়েছে, সেটি মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টেরই ৷ এটা কোনও রায়তি সম্পত্তি নয় ৷ জমিটি বিক্রি করেছেন দীপেন্দ্রকুমার মিশ্র ও মন্মথ মিশ্র ৷ কিনেছেন সেরাজুল হক নামে এক ব্যক্তি ৷ তিনিই জমিটি রেকর্ডের জন্য আমাদের দফতরে আবেদন করেছেন ৷ আমরা যে কোনও জমি রেকর্ডের আগে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখি ৷ এই জমিটির পরিমাণ ছ’বিঘার সামান্য বেশি ৷ মহানন্দা এমব্যাংকমেন্ট ডিভিশন যদি জমির সমস্ত নথিপত্র জমা করেন, তবে আমরা দফতরের নামেই জমির রেকর্ড করে দেব ৷”

এদিকে তুলসিহাটা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্টার রমজান আলির দাবি, " আমাদের রেকর্ড বলছে, জমিটি আলেয়া ভট্টাচার্যের ৷ ওয়ারিশ সূত্রে তাঁর এই জমিটি অন্য কেউ বিক্রি করেছেন ৷ আলিপুর কোর্টের লোয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরিত সেই ওয়ারিশ সার্টিফিকেট আমাদের কাছে আছে ৷ এর বলে আমরা কোনও জমি রেজিস্ট্রি করতে পারি ৷ এটা মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের জমি কি না, সেটা সেটলমেন্ট অফিস বিচার করবে ৷ তারা যদি জমিটিকে মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের বলে জানায়, তবে কোনও নথির ভিত্তিতে বলছে, সেটাও তারাই জানাবে ৷ সেক্ষেত্রে জমির দলিল বাতিল হয়ে যাবে ৷”

মহানন্দা হানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রাকেশ লালার বক্তব্য, “আমরা এসব কিছুই জানতাম না ৷ গতকাল বিকেলে বিএল অ্যান্ড এলআরও বিষয়টি জানিয়েছেন ৷ আজ জমির ভেরিফিকেশন হয়েছে ৷ দেখা গেল, সম্পূর্ণ জমিটিই আমাদের দফতরের ৷ কীভাবে এই জমি বিক্রি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না ৷ এবার সরকারি নিয়ম মেনেই সব কাজ করা হবে ৷ পরবর্তীতে কী হবে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে ৷”

জমির ক্রেতা সেরাজুল হক গোটা ঘটনা জেনে অবাক ৷ তিনি বলেন, “আমি কম্পিউটারে পরচা দেখে ওই জমি কিনেছি ৷ সেখানে জমিটি বাগান হিসাবে উল্লেখ রয়েছে ৷ রায়তি সম্পত্তি হিসাবেও উল্লেখ রয়েছে ৷ সব দেখে জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে ৷ সরকারি জমি থাকলে তিনি তখন কেন বিষয়টি বলা হল না ? এখন জমিটিকে মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের সম্পত্তি বলা হচ্ছে ৷ তাদের নামে যদি নথিপত্র থাকে তবে সেটা সামনে আনুক ৷ আমরা এনিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব ৷ আমাকে লিখিত দিতে হবে জমিটি সরকারি ৷” সম্প্রতি খোদ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করেছিলেন, সরকারি জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে ৷ তাঁর সেই সতর্কবার্তার পর হরিশ্চন্দ্রপুরের এই ঘটনায় তোলপাড় প্রশাসনিক মহল ৷

মালদা, 4 জানুয়ারি: সরকারি জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে দেড় কোটি টাকায় ! সেই জমি আবার রেজিস্ট্রিও হয়েছে ৷ জমির বিক্রেতা দক্ষিণ 24 পরগণার বাসিন্দা ৷ ক্রেতার বাড়ি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় ৷ তিনি নিজের জমি রেকর্ড করাতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে গেলে সর্ষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভূতের সন্ধান পান ৷ জানতে পারেন, এই জমির মালিক আর কেউ নয়, রাজ্য সরকারের একটি সংস্থা।

পাশাপাশি দেখা যায়, জমি কেনাবেচায় বিক্রেতার তরফে জমা করা ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে ৷ এরপরেই ওই জমির রেকর্ড করা বন্ধ করে দেন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্মীরা ৷ এই খবর চাউর হতেই শোরগোল পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷

ঠিক কী হয়েছে?

হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় রাজ্য সেচ দফতরের অধীনস্ত মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনের প্রায় 13 বিঘা জমি রয়েছে ৷ জমিটি ঘিরেও রাখা হয়েছে ৷ দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকেই 6 বিঘা জমি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কাউয়ামারি গ্রামের সিরাজুল হককে বিক্রি করে দিয়েছেন দক্ষিণ 24 পরগণার বাসিন্দা দীপেন্দ্রকুমার মিশ্র ৷ দেড় কোটি টাকায় এই জমির কেনাবেচা হয় ৷ জমিটি বিক্রির সময় দাখিল করা ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে আলিপুর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর রয়েছে ৷ নথিতে জমিটিকে রায়তি সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে ৷ সেই কাগজ দেখেই হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা সাব রেজিস্ট্রার অফিস জমিটি সিরাজুল হকের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয় ৷

কোথায় খটকা?

রেজিস্ট্রির পর জমির রেকর্ড পেতে সিরাজুল হরিশ্চন্দ্রপর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন করেন ৷ কিন্তু জমির সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখে দফতরের কর্মীদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে ৷ তাঁরা জমির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সরেজমিনে তদন্তে যান ৷ জমি মাপজোক করে চোখ কপালে ওঠে তাঁদের ৷ তাঁরা দেখেন, সবার অলক্ষ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে সরকারি জমি ৷ তৎক্ষণাৎ তাঁরা রেকর্ডের আবেদনপত্র বাতিল করে দেন ৷

হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেভিনিউ অফিসার হিমাংশুকুমার মণ্ডল বলেন, “একটি জমি রেকর্ড করার জন্য আমাদের কাছে দলিল এসেছিল ৷ সেই দলিল পরীক্ষা করার সময় ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দেখে আমাদের সন্দেহ হয় ৷ আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করি ৷ তখনই জানতে পারি, জমিটি সরকারি ৷ আমরা মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনকে চিঠি দিয়েছি ৷ জমিটি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এসেছি ৷ দেখা যাচ্ছে, যে দাগের জমি বিক্রি হয়েছে, সেটি মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টেরই ৷ এটা কোনও রায়তি সম্পত্তি নয় ৷ জমিটি বিক্রি করেছেন দীপেন্দ্রকুমার মিশ্র ও মন্মথ মিশ্র ৷ কিনেছেন সেরাজুল হক নামে এক ব্যক্তি ৷ তিনিই জমিটি রেকর্ডের জন্য আমাদের দফতরে আবেদন করেছেন ৷ আমরা যে কোনও জমি রেকর্ডের আগে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখি ৷ এই জমিটির পরিমাণ ছ’বিঘার সামান্য বেশি ৷ মহানন্দা এমব্যাংকমেন্ট ডিভিশন যদি জমির সমস্ত নথিপত্র জমা করেন, তবে আমরা দফতরের নামেই জমির রেকর্ড করে দেব ৷”

এদিকে তুলসিহাটা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্টার রমজান আলির দাবি, " আমাদের রেকর্ড বলছে, জমিটি আলেয়া ভট্টাচার্যের ৷ ওয়ারিশ সূত্রে তাঁর এই জমিটি অন্য কেউ বিক্রি করেছেন ৷ আলিপুর কোর্টের লোয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরিত সেই ওয়ারিশ সার্টিফিকেট আমাদের কাছে আছে ৷ এর বলে আমরা কোনও জমি রেজিস্ট্রি করতে পারি ৷ এটা মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের জমি কি না, সেটা সেটলমেন্ট অফিস বিচার করবে ৷ তারা যদি জমিটিকে মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের বলে জানায়, তবে কোনও নথির ভিত্তিতে বলছে, সেটাও তারাই জানাবে ৷ সেক্ষেত্রে জমির দলিল বাতিল হয়ে যাবে ৷”

মহানন্দা হানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্ট ডিভিশনের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রাকেশ লালার বক্তব্য, “আমরা এসব কিছুই জানতাম না ৷ গতকাল বিকেলে বিএল অ্যান্ড এলআরও বিষয়টি জানিয়েছেন ৷ আজ জমির ভেরিফিকেশন হয়েছে ৷ দেখা গেল, সম্পূর্ণ জমিটিই আমাদের দফতরের ৷ কীভাবে এই জমি বিক্রি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না ৷ এবার সরকারি নিয়ম মেনেই সব কাজ করা হবে ৷ পরবর্তীতে কী হবে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে ৷”

জমির ক্রেতা সেরাজুল হক গোটা ঘটনা জেনে অবাক ৷ তিনি বলেন, “আমি কম্পিউটারে পরচা দেখে ওই জমি কিনেছি ৷ সেখানে জমিটি বাগান হিসাবে উল্লেখ রয়েছে ৷ রায়তি সম্পত্তি হিসাবেও উল্লেখ রয়েছে ৷ সব দেখে জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে ৷ সরকারি জমি থাকলে তিনি তখন কেন বিষয়টি বলা হল না ? এখন জমিটিকে মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের সম্পত্তি বলা হচ্ছে ৷ তাদের নামে যদি নথিপত্র থাকে তবে সেটা সামনে আনুক ৷ আমরা এনিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব ৷ আমাকে লিখিত দিতে হবে জমিটি সরকারি ৷” সম্প্রতি খোদ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করেছিলেন, সরকারি জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে ৷ তাঁর সেই সতর্কবার্তার পর হরিশ্চন্দ্রপুরের এই ঘটনায় তোলপাড় প্রশাসনিক মহল ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.