নয়াদিল্লি, 22 ফেব্রুয়ারি: ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল অভিযানের কফিনে এখনও শেষ পেরেক পোঁতা হয়নি ৷ শনিবার দিল্লির জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে 'পঞ্জাব মেল' রুখে সমর্থকদের মনের 'আশ' জিইয়ে রাখলেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা ৷
জাগল তবে দেরীতে ৷ প্রত্যাবর্তনের সরণিতে ফেরায় জটিল অঙ্কে হলেও ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ছয়ে ঢুকে পড়ার সুযোগ রয়েছে ৷ কিন্তু তার বাস্তবায়ন এতটাই কঠিন যে, সেই সম্ভাবনার সমর্থক খুঁজে পাওয়া আর দক্ষিণমেরুতে ফ্রিজের দোকান খোলার সমান। পঞ্জাব এফসি-কে তাদের মাঠে 3-1 গোলে হারানোর পরেও লাল-হলুদ পৃথিবীজুড়ে শুধুই আক্ষেপ ৷
21 ম্যাচে 24 পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গল 9 নম্বরে। পঞ্জাব এফসি-কে হারিয়ে 10 নম্বরে থাকলেও পরে এফসি গোয়া কেরালা ব্লাস্টার্সকে 2-0 হারানোই 9 নম্বরে উঠে আসে ইস্টবেঙ্গল ৷ ফের উত্তরণের সুযোগ লাল-হলুদের সামনে ৷ ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে জয় তুলে নিতে পারলে প্রথমবার জয়ের হ্যাটট্রিক শুধু নয়, আইএসএলে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট সংগ্রহের নজির গড়বে ইস্টবেঙ্গল ৷ এর আগে লাল-হলুদ কখনও পঁচিশ পয়েন্টের লক্ষণরেখা টপকাতে পারেনি।

সমস্যা এখন অস্কার ব্রুজোর নিত্যসঙ্গী। কখনও কার্ড আবার কখনও চোট-আঘাত ৷ পুরো দলকে কোনও সময়ই তিনি গত 16টি ম্যাচে পাননি। পঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে রিচার্ড সেলিস এবং নন্দকুমারকে ছাড়া সবাইকে পেয়েছেন। ফলে দলের খেলায় অনেক 'শ্রী' ফিরেছে। রক্ষণে আনোয়ার আলির সঙ্গে হেক্টর ইউস্তে শুরু করলেও প্রতিপক্ষের আক্রমণের চাপে তাঁকে তুলে নিতে বাধ্য হন অস্কার ব্রুজো ৷ চোট সারিয়ে মাঠে ফিরলেও সচ্ছন্দ ছিলেন না ইউস্তে ৷ অবস্থা সামাল দিতে অস্কার বদল করেন ইউস্তেকে। পরিবর্তে প্রভাত লাকড়াকে নামিয়ে লালচুঙনুঙ্গাকে জুড়ে দেন আনোয়ারের সঙ্গে। ভারতীয়দের দিয়ে গঠিত লাল-হলুদ রক্ষণ বাকি সময় নির্ভরতা দিল। অনবদ্য খেললেন লালচুননুঙ্গা। একইভাবে কৃতিত্ব দাবি করতে পারে মেসি বাউলি, পিভি বিষ্ণু জুটি।
ম্যাচের 15 মিনিটে প্রথম গোল ইস্টবেঙ্গলের ৷ মেসি বাউলির পাস থেকে বল পেয়ে বাঁ-পায়ের জোরালো শটে দলকে এগিয়ে দেন দিয়ামানতোকোস। গোলে ফিরলেন তিনি। এরপর আরও দু'টো সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন এবং আরেকটি ক্ষেত্রে পোস্ট গ্রিসের স্ট্রাইকারের গোল পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিরতির পর ফের এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। এবার গোল মহেশ নওরেম সিংয়ের। 47 মিনিটে মেসি বাউলির বাড়ানো বল থেকে নেওয়া পিভি বিষ্ণুর শট পঞ্জাব ডিফেন্ডাররা রুখে দিলে ফিরতি বল জালে পাঠান নওরেম। সাত মিনিট পরে 54 মিনিটে তৃতীয় গোল ইস্টবেঙ্গলের। নিশু কুমারের কর্নার থেকে বল পেয়ে বিষ্ণুর শট প্রতিহত হলে জটলা মধ্যে থেকে তা জালে পাঠান চুননুঙ্গা।
তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ফিরে আসার চেষ্টা করে পঞ্জাব। এই সময় লুকা মার্চেন্ট মাঠে আসেন। তাঁর এবং ভিদালের জুটি চাপ বাড়ালেও তা লাল-হলুদ রক্ষণে সমস্যা তৈরিতে ব্যর্থ। 62 মিনিটে ভিদাল ব্যবধান কমান ঠিকই কিন্তু তিনি এবং তার দলের বাকিরা ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি।
প্রথম সাক্ষাতে দুগোলে পিছিয়ে পড়ে চার গোলে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। এবার তিন গোলে পঞ্জাব মেলকে রুখে দিল। আশা বেঁচে থাকলেও তা পূরণের সম্ভাবনা কঠিন। জাগল দেরীতে। ফিরল দেরীতে। ইস্টবেঙ্গলের ছয়ের আশা ও স্বপ্ন পূরণের বদলে প্রাপ্তি বোধহয় আক্ষেপ ও দীর্ঘ নিশ্বাস!