কলকাতা, 29 এপ্রিল : 27 মার্চ শুরু হয়েছিল ৷ আজ 29 এপ্রিল ৷ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলল ভোটগ্রহণ পর্ব ৷ আজ ছিল অষ্টম তথা শেষ দফা ৷ আজকের ভোট নিয়ে সবথেকে বেশি উদ্বেগ ছিল কমিশনের ৷ মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ৷ এই তিনটি জেলা বিগত নির্বাচনগুলিতে বার বার হিংসা-অশান্তির সাক্ষী থেকেছে ৷ এবারের ভোট নিয়েও আশঙ্কা ছিল ৷ অনুব্রত মণ্ডলকে তাই আগে থেকেই নজরবন্দী করা হয়েছিল ৷
কিন্তু ভোটের দিন মোটের উপর শান্তিপূর্ণই কাটল এই তিন জেলা ৷ কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর আসলেও ৷ কোথাও কোনও বড়সড় অশান্তি হয়নি ৷ অনুব্রত মণ্ডল যিনি গতকাল কমিশনের চোখে কার্যত ধুলো দিয়ে কয়েক ঘণ্টা দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন জেলায়, তিনিও আজ পুরোপুরি শান্ত ৷ সকাল থেকে বাড়িতেই ছিলেন ৷ সেখান থেকে বেরিয়ে ভোট দিয়ে বাকি সময়টা পার্টি অফিসে বসেই কাটালেন ৷ মালদা-মু্র্শিদাবাদের ছবিটাও একেবারে শান্ত বলা যেতে পারে ৷ অধীর চৌধুরী নিজেও জানালেন, তিনি কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকাতে বেশ সন্তুষ্ট ৷
আজ যে এলাকাগুলিতে ভোট ছিল, তার মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় বাম-কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি বেশ শক্ত ৷ আর বেশিরভাগ এলাকাতেই তৃণমূলের ছড়াছড়ি ৷ বিশেষ করে বীরভূম ও কলকাতা -- এই দু'টি জায়গাই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি ৷ তবে বিগত কয়েক বছরে রাজ্যে যে গেরুয়া হাওয়া বইতে শুরু করেছে, তা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিকে কতটা টলাতে পারে সেটাই এখন দেখার ৷
আরও পড়ুন : অটুট থাকল কি গনির দুর্গ ? তারই পরীক্ষা হল আজ
জেলাগুলিতে ভোটে তেমন কোনও অশান্তির খবর না থাকলেও, সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে কলকাতা ৷ শীতলকুচির পর তিন দফায় সেভাবে কোনও অশান্তির খবর না থাকলেও শেষ বেলায় ফের অশান্তির কালো মেঘ বঙ্গভোটের আকাশে । সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত কলকাতা । মানিকতলা থেকে শুরু করে কাশিপুর-বেলগাছিয়া, বেলেঘাটা । গোটা কলকাতায় একই ছবি ।
কোথাও ইট-বৃষ্টি । কোথাও আবার আবার গাড়ি করে অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ । বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা কলকাতার একাধিক কেন্দ্র ।শুরুটা ঠিকঠাক হলেও বেলা গড়াতে না গড়াতেই উত্তেজনা । নাক-মুখ বেয়ে রক্ত ঝড়ল । বেলেঘাটার রাজবল্লভপাড়ায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ রীতিমতো রণক্ষেত্রের আকার ধারণ করে । বাঁশ, লাঠি, হকি স্টিক, চ্যালা কাঠ । কিছুই বাদ গেল না । ইট-বৃষ্টিও চলল । রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার । দুই শিবিরই একে অন্যের দিকে অভিযোগ তুলছে ।
এদিকে মহাজাতি সদন এলাকা সকাল থেকেই থমথমে । স্থানীয় সূত্রে খবর, সকাল প্রায় সাড়ে 7 টা নাগাদ বোমাবাজি হয় এলাকায় । দুটি বোমা ফাটে মহাজাতি সদনের সামনে । দুষ্কৃতীরা গাড়ি করে এলে বোমা ছুড়ে এলাকা থেকে চম্পট দেয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা ।
আরও পড়ুন : সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের চক্রান্ত ভবিষ্যতে প্রকাশিত হবে, স্পষ্টবাদী রূপা বাগচী
মানিকতলার 289 নম্বর বুথে বিজেপির এজেন্ট বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে । যদিও তৃণমূলের তরফে বিষয়টি নিয়ে সেভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ।এর কিছু সময় পর ফের উত্তেজনা । মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবেকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা । ধস্তাধস্তিও হয় । অভিযোগ, পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই । কল্যাণ চৌবের অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলরের ছেলে তাঁর উপর হামলা করেছে, লাথি মেরেছে । অন্যদিকে সাধন পাণ্ডের পাল্টা অভিযোগ, তাঁর দলের মহিলা কাউন্সিলরের গায়ে হাত তুলেছেন কল্যাণ চৌবে ।উত্তেজনা ছড়ায় কাশিপুর-বেলগাছিয়া এলাকাতেও । এখানেও অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে । বিজেপির অভিযোগ একটি অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ।
আশান্তির কোপে পড়ে সংবাদ মাধ্যমও ৷ সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের উপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ চলে বেলগাছিয়ায় । মহিলা সাংবাদিকদের দিকেও লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । বেশ কিছু মোবাইল ছিনিয়ে নেন । ছবি তুলতে গেলে ইটিভি ভারতের সাংবাদিকের ওপরও আক্রমণ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী । মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় ।