কলকাতা, 24 ফেব্রুয়ারি: আনিশ খান (Anish Khan Death Case) হত্যাকাণ্ডে আদৌ সত্যিটা সামনে আসবে ? দোষীরা কি পাবে শাস্তি ? আসল অপরাধীদের প্রকাশ্যে আনা কি সম্ভব হবে ? এই সব একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে । কারণ রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটের মাথা করা হয়েছে এডিজি (সিআইডি) জ্ঞানবন্ত সিং-কে (Experts raise doubts over SIT's impartiality)।
অনেকেই বলছেন যে কিছু বছর আগে অর্থাৎ 2007 সালে গ্রাফিক্স শিক্ষক রিজওয়ানুর রহমানের আত্মহত্যার পর তাঁকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের তৎকালীন উপ-নগরপাল (সদর), এই জ্ঞানবন্ত সিং (Gyanwant Singh news)। তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস জ্ঞানবন্ত সিংয়ের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছিলেন । জ্ঞানবন্ত সিংকে উপ-নগরপাল (সদর), পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং বহুদিন তাঁর পদোন্নতি আটকে থাকে । আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । এবং আজকের ছাত্রনেতা আনিশ খানের রহস্যমৃত্যুর তদন্তের জন্য রাজ্য সরকার যে সিট গঠন করেছে তার প্রধান সেই জ্ঞানবন্ত সিং (demand of CBI investigation)। এই নিয়েই উঠেছে একাধিক প্রশ্ন ।
এ বিষয়ে ইটিভি ভারত-কে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম বলেন, "এই জ্ঞানবন্ত সিংকেই রিজওয়ানুর রহমান কাণ্ডে দায়ী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু এখন হাওড়ার আনিশ খুন কাণ্ডে সিটের মাথা তাঁকেই করা হয়েছে । মানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, যে কোনও পুলিশ আধিকারিকই হোক না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে তদন্ত চাইবেন, সেই ভাবেই তদন্ত করবেন সংশ্লিষ্ট ওই পুলিশ আধিকারিক ৷ ফলে কতটা স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত হবে, আর তদন্তে প্রকৃতপক্ষে যাদের নাম উঠে আসার কথা, তাঁদেরই কি নাম উঠে আসবে ? নাকি রাঘব বোয়ালদের বাঁচাতে অন্য ভাবে তদন্ত হবে ? এই সমস্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ।"
আরও পড়ুন: Anish Khan Death Case : আনিশকাণ্ডে নয়া মোড়, এবার সিবিআই তদন্তের দাবি ধৃত হোমগার্ডের স্ত্রীর
এই ঘটনায় ইটিভি ভারত-কে মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী সুজাত ভদ্র বলেন যে, এই ঘটনায় যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরা কেউ পুরোপুরি পুলিশ নন । তাঁর কথায়, "একজন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং অন্যজন হোমগার্ড । কিন্তু উপরতলার কারও নির্দেশ ছাড়া এই সিভিক ভলান্টিয়ার ও হোমগার্ড কীভাবে একজনের বাড়িতে যেতে পারেন ? ফলে আমতা থানার ওসির ভূমিকা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ৷"
তাছাড়াও সুজাতবাবু বলেন, "এখন যিনি রাজ্য পুলিশের ডিজি রয়েছেন, অর্থাৎ মনোজ মালব্য, 1995 সালে একটি হত্যাকাণ্ডে তাঁরও নাম উঠে আসে ৷ ফলে এই সব ব্যক্তি, যাঁদের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ আছে, তাঁরা কীভাবে তদন্ত করতে পারেন ? করলেও কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে পারবেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে । রাজ্য পুলিশ এই তদন্ত করতে পারে না ৷"
আরও পড়ুন: Re-post mortem of Anish Khan : সিটেই আস্থা, হাইকোর্টের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত আনিশের দেহের
পাশাপাশি বিশিষ্ট সমাজকর্মী উজ্জয়নী হালিম বলেছেন, "জ্ঞানবন্ত সিং সরকারি আধিকারিক । তিনি এই দায়িত্ব পেতেই পারেন । কিন্তু তদন্ত কীভাবে চলবে বা কী তদন্ত হবে সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একাধিক প্রশ্ন জাগছে । সিবিআই তদন্তের দাবি একেবারেই ভুল নয় । সিবিআই তদন্তই করা উচিত । কিন্তু এখন যদি কেউ সিআইডি-এর সঙ্গে সিবিআইয়ের তুলনা করেন, তাহলে সে নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠবে ৷"