কলকাতা, 12 জুলাই : অনুমতি থাকা সত্ত্বেও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল আটকানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে । আজ সকাল 11টা নাগাদ শিয়ালদায় জমায়েত মিছিল করতে গেলে পুলিশ তাঁদের আটকায় বলে অভিযোগ । ঘটনার প্রতিবাদে শিয়ালদাতেই বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ইঞ্জিয়নয়র চাকরিপ্রার্থীরা ।
ইলেকট্রিকাল ব্রাঞ্চে 120 জনকে নিয়োগ করার জন্য 2053 জনকে কেন ইন্টারভিউতে ডাকা হল ? এই প্রশ্ন তুলে গত 25 জুন পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের(PSC) সামনে অবস্থানে বসেন চাকরিপ্রার্থীরা । সেদিন PSC-র কাছ থেকে কোনও পাওয়া যায়নি । আর সেই কারণে আজ শিয়ালদার বিগবাজার থেকে রাজভবন অভিযান করার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা । তার জন্য রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি ও কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে মিছিলের অনুমতি নেওয়া ছিল আন্দোলনকারীদের । তা সত্ত্বেও সকাল 11টা নাগাদ শিয়ালদায় জমায়েত করে মিছিল করতে গেলেই পুলিশ আটকায় বলে অভিযোগ । PSC দুর্নীতি মুক্ত মঞ্চের আন্দোলনকারীরা জানায়, আজ উলটোরথ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল থাকায় তাঁদের মিছিল করতে দেওয়া যাবে না বলে জানায় পুলিশ । অনুমতি থাকা সত্ত্বেও মিছিল করতে দেওয়া হয়নি । সেই প্রতিবাদে শিয়ালদাতেই বিক্ষোভ দেখান তাঁরা ।
এই বিষয়ে PSC দুর্নীতি মুক্ত মঞ্চের সদস্য গৌরব দাস বলেন, "আমাদের 2017 সালে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল । প্রায় তিন বছর সময় লেগেছে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে । প্রায় লাখখানেক ছেলেমেয়ে ফর্ম ফিলাপ করে । এরপর 2053 জনকে পার্সোনালিটি টেস্টে ডাকা হয় । এরপরে মাত্র 14 জনকে জেনেরাল ক্যাটেগরি থেকে নিয়োগ করা হয় । বাকিজনদের নেওয়া হয় রিজ়ার্ভ ক্যাটেগরি থেকে । মাত্র 120 জনকে চাকরি দেওয়া হয় । কোনও রেশিও মানাই হয়নি এক্ষেত্রে । 75:1 রেশিওতে নিয়োগ করা হয়েছে । যেখানে অন্যান্য নিয়োগের ক্ষেত্রে PSC 3:1 রেশিও মানে । আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যাদের নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের থেকে অনেকেই কাট অফের থেকে অনেক বেশি নম্বর পেয়েছেন । অনেকেই আছেন । অথচ তাঁদের নিয়োগ করা হয়নি । সেই কারণে আমরা হাইকোর্টে অ্যাপিল করছি । এমনও উদাহরণ আছে 122 নম্বর থাকা সত্ত্বেও একজনের মেরিট লিস্টে নাম ওঠেনি । তারমানে PSC-তে কাটমানি না দিলে চাকরি পাওয়া যায় না । 25 জুন PSC-র চেয়ারম্যানের কাছে আমরা লিখিত আবেদন জমা করেছি । কিন্তু, কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি ।"
তাই আজ শিয়ালদা থেকে রাজভবন অভিযানের পরিকল্পনা করেছিলেন জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়র চাকরিপ্রার্থীরা । কিন্তু, মিছিল শুরুর আগেই পুলিশের তরফে তাঁদের বলা হয়, মিছিল করতে দেওয়া হবে না । গৌরব দাস বলেন, "আজ এখান থেকে আমাদের রাজভবন যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল । রাজ্যপালের কাছে আমরা স্মারকলিপি জমা দেব, তার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল । কিন্তু, প্রশাসন এখন কোথায় ? আজ পর্যন্ত আমাদের চাকরি দিতে পারছে না । সেটাতে তো ব্যর্থই । রাজ্যপালের সঙ্গে আমাদের দেখাও করতে দিচ্ছে না । পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ কী ? আজ আমাদের ইঞ্জিনিয়র হয়ে পথে নামতে হয়েছে । পুলিশ আমাদের বলছে আমরা দু'ফুট এগোলে আমাদের অ্যারেস্ট করা হবে । অথচ আমাদের পুলিশি অনুমতি নেওয়া ছিল । কিন্তু পুলিশ আমাদের জানায় আজ অনেকগুলি পরিকল্পনা রয়েছে । সেই কারণে আমাদের মিছিল বাতিল করা হয় । মালদা, নর্থ বেঙ্গল, কোচবিহার, বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিলের জন্য অনেক চাকরিপ্রার্থী এসেছিলেন । তাঁরা এবার কোথায় যাবেন ? তাঁরা সবাই একদিনের পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিলেন ।"
মিছিল করতে না দেওয়ায় শিয়ালদাতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা । বেশ কিছুক্ষণ চলে বিক্ষোভ । এরপর দুপুর ১টা নাগাদ তাঁদের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে পুলিশ রাজভবনে নিয়ে যায় । কিন্তু, রাজ্যপাল না থাকায় সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলে চলে আসেন তাঁরা । প্রতিনিধিদলের তরফে জানানো হয়, রাজভবন থেকে তাঁদের অন্য একদিন ডাকা হবে । রাজভবন থেকে ফিরে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তাঁরা । তবে, পরবর্তীকালে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন । গৌরব দাস বলেন, "আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগোব । আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাজে সন্তুষ্ট নই । উনি কী করছেন ? আমাদের কোনও কাজ করছেন না । আমাদের লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে । আমরা দিদিকে বাংলা থেকে তাড়াব । আমরা শিক্ষিতরা চাইলে সেটা হবেই । লোকসভা ভোটে ফল দেখে সবাই বুঝে গেছেন ।" তিনি আরও বলেন, "ফ্লাইওভার কেন ভেঙে পড়বে না ? আমাদের নিয়োগের নম্বরের পার্থক্য সেই জন্য দায়ি । একজন জেনেরাল প্রার্থী 199 নম্বর পেয়ে জেনেরাল ক্যাটাগরিতে নাম তুলছে । আর একজন SC প্রার্থী সেখানে 51 নম্বর পেয়ে নাম তুলছে । 150 নম্বরের পার্থক্য ! শুধু ব্রিজ কেন পুরো সমাজই দুর্নীতিতে ভরে গেছে ।"