কলকাতা, ১৫ মার্চ : রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে আজ ২৫টি আসনে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বামফ্রন্টের এই আংশিক প্রার্থী প্রকাশের পর আসন সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। জোট ফর্মুলা কী হবে তা নিয়ে সংশয়ে CPI(M) বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীও। সুজন জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও BJP-কে আটকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আন্তরিক তাঁরা।
ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের আসন সমঝোতা নিয়ে তিক্ততা পৌঁছেছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। গতকাল প্রায় মধ্যরাতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, বিধায়ক শংকর মালাকার, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন CPI(M) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তারপরও মেলেনি কোনও সমাধানসূত্র। কোন লোকসভা আসনে কে প্রার্থী দেবে তা নিয়ে চূড়ান্ত জটিলতা তৈরি হয়েছে।
জোট আদৌ সম্ভব কি না সে বিষয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাহুল গান্ধি প্রদেশ কংগ্রেসকে নির্দেশ দিয়েছেন রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য। প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই আসন দু'টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বামফ্রন্ট শরিক দলগুলি মরিয়া বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দিতে।
আবদুল মান্নান বলেন, "মুর্শিদাবাদ এবং রায়গঞ্জ আসন দু'টি বাদ দিয়ে বাকি আসনগুলোতে প্রার্থী দিতে সমস্যা হবে না এটা আমরা ভেবেছিলাম। কিন্তু তা হল না। আমাদের তো জোট হওয়ার কথা CPI(M)-র সঙ্গে। শরিক দলগুলোর সঙ্গে নয়। পঞ্চায়েত বা কাউন্সিল নির্বাচনে জেতার ক্ষমতা নেই যাদের তারা লোকসভায় প্রার্থী দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া এই জোটে কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকবে। কংগ্রেস কর্মীরা এই জোট মানবে না। এর ফলে BJP-র হাত শক্ত হবে। কোচবিহার থেকে মালদা, কোথাও আমাদের আসন নেই। সবক'টি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী দিচ্ছে। এই যদি ভাগাভাগি হয়, তাহলে কংগ্রেস কেন আসন সমঝোতা করতে যাবে?"
১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসু এবং প্রমোদ দাশগুপ্ত যে জোট ফর্মুলার কথা বলেছিলেন সেই প্রসঙ্গ এনে বিরোধী দলনেতা আবদুল বলেন, "জ্যোতি বসু এবং প্রমোদ দাশগুপ্ত যে জোট করতে পেরেছিল এরা তা পারেনি। গত বিধানসভায় জোট ফর্মুলা ব্যর্থ হওয়ায় মার খেয়েছিল। জোটের ফর্মুলা এরা বোঝে না। এবারও না মার খায়। মিলেমিশে চলতে হবে। কোথাও পাঁচটা আসন থাকলে সেখানে অন্তত দুটো আসন কংগ্রেসকে দেওয়া উচিত। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট, এবং রায়গঞ্জ কোনও লোকসভা আসনেই কংগ্রেসকে প্রার্থী দিতে দেওয়া হচ্ছে না। হয় CPI(M) প্রার্থী দিচ্ছে, না হলে শরিক দলগুলি প্রার্থী দিচ্ছে। প্রথম দিন বলা হয়েছিল, যেখানে যেমন সেখানে তেমনই মিলেমিশে প্রার্থী দেওয়া হবে। এর ফলে জেলার ছেলেরা লড়াই করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলবে। জোট চাইছে বাংলার মানুষ। BJP এবং তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থানকে একমাত্র আটকাতে পারে কংগ্রেস এবং বাম ঐক্য।"
অন্যদিকে, CPI(M)-র পক্ষ থেকে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "আসন সমঝোতা নিয়ে সবরকমের চেষ্টা চলছে। এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দলের পক্ষ থেকে আলোচনা চলছে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং BJP দল ভাঙিয়ে প্রার্থী দিচ্ছে লোকসভা নির্বাচনে। আমাদের একাধিক দলকে মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং BJP-র বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাতে হবে। খুব বড় কাজ। এই কাজের জন্য একটু সময় লাগছে।"