কলকাতা, 4 সেপ্টেম্বর : কোনও শিশুর ক্ষেত্রে COVID-19 সংক্রমণ জটিল আকার ধারণ করেছে, গোটা পৃথিবীতে এরকম ঘটনা খুব একটা বেশি হয়নি । কিন্তু, কলকাতায় কোরোনা আক্রান্ত 42 দিনের এক শিশুর অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়েছিল ৷ অবশেষে, 10 দিন ভেন্টিলেশনে রাখার পরে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হল । এই শিশুর হার্ট 35 শতাংশ কাজ করছিল । নিউমোনিয়ায় তার ফুসফুস বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । তবে, মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে এই শিশুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল । শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে ওই শিশু ।
এই শিশুটি কলকাতার বাসিন্দা বলে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে জানা গিয়েছে । 42 দিন বয়সি এই শিশুপুত্রকে 20 অগাস্ট মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় । 17 অগাস্ট থেকে এই শিশুর হাই ফিভার ছিল । বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটিকে যখন ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন সে দুই বার বমি করেছিল ৷ অনেকক্ষণ ধরে তার ইউরিন হচ্ছিল না ৷ তার হার্ট রেট খুব বেশি ছিল ৷ একই সঙ্গে হাই ফিভারও ছিল । শিশুটির হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল । হাসপাতালে ভরতি করার পরে দেখা যায়, শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছে । যে কারণে এই শিশুটিকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট দিতে হয় । পরে দেখা যায়, এই শিশুটির ইউরিনেও ইনফেকশন হয়েছিল ।
মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্ত বলেন, "গত চার মাসে বেশ কিছু COVID-19 আক্রান্ত শিশুকে দেখলাম । শিশুদের COVID-19 হচ্ছে না, এটা খুব ভুল ধারণা । তবে, COVID-19 হচ্ছে । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছে । খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে থাকছে । কোনও কোনও শিশুর ক্ষেত্রে অন্য কোনও কারণে হাসপাতালে ভরতি হতে হচ্ছে, তার পরে COVID-19 পজ়িটিভ ধরা পড়েছে । কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা কিছু হয়নি, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে । ’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এক বছরের কম বয়স এরকম কিছু শিশুকে আমরা পেয়েছি, যাদের ক্ষেত্রে COVID-19 জটিল আকার ধারণ করেছে । গোটা পৃথিবীতে এ রকম খুব কম সংখ্যক শিশুকে দেখা গেছে ৷ এদের বলা হয় MISC (মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন) । এক্ষেত্রে শরীরের অনেকগুলি অর্গানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিচ্ছে COVID-19। হার্ট, ফুসফুসের ক্ষতি করছে । কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিডনির ক্ষতি করছে । এক্ষেত্রে অরগ্যান ডিসফাংশন হয়ে যাচ্ছে, যার জেরে হার্ট ফেলিওর হয়ে যাচ্ছে । সিভিয়ার নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে । মাল্টি অর্গান ডিসফাংশন দেখা দিচ্ছে । এসব ক্ষেত্রে COVID-19 আক্রান্ত শিশুকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে, অনেকদিন ধরে ট্রিটমেন্ট করতে হচ্ছে । আমাদের এখানে নিয়ে আসা 42 দিনের এই শিশুটির ক্ষেত্রে এরকম সমস্যা দেখা দিয়েছিল ।’’
চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্ত আরও বলেন, ‘‘হঠাৎ করে 2-3 দিন ধরে জ্বর ছিল, এর পরে এই শিশুর COVID-19 পজিটিভ পাওয়া গেল । আমাদের কাছে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখন এই শিশুর হার্ট রেট খুব বেশি ছিল । কিছুক্ষণ পরে দেখা যেতে থাকে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে । হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । এর পরে ওষুধে কাজ না হওয়ায় ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হয় ৷ দেখা গেল এই শিশুটির হার্ট প্রায় কাজ করছে না ৷ হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা এতটাই কমে গিয়েছে যে সেটা 35 শতাংশ হয়ে গিয়েছে । এর সঙ্গে শিশুটির নিউমোনিয়া দেখা গেল । সিটি স্ক্যান করে দেখা গেল নিউমোনিয়াতে ফুসফুসের দুই দিকে অনেকটা করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এই শিশুর ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন দেখা গিয়েছিল । এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে ।’’
বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে জানা গিয়েছে গত 5 অগাস্ট থেকে এই শিশুটির পেট খারাপ ছিল । এই শিশুটি COVID-19 পজ়িটিভ হলেও তার মা-বাবা দুজনেই নেগেটিভ ছিলেন । পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন COVID-19 -এর কারণে হার্টের পেশী ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না । প্রায় 35 শতাংশ কাজ করছে । 23 অগাস্ট থেকে এই শিশুটিকে মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রাখা হয় ।
বিশ্বজুড়ে COVID-19- প্যানডেমিক চলছে । তবে, দেখা যাচ্ছে, তুলনায় শিশুরা খুব বেশি আক্রান্ত হচ্ছে না । বা, আক্রান্ত হলেও খুব বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ছে না । এই কথা জানিয়ে মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ICU-এর ইনচার্জ, চিকিৎসক সৌমেন মেউর বলেন, "খুব অল্প বয়সি এই শিশুকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিল । ছয় সপ্তাহ বয়স । এই শিশুটি খুবই অসুস্থ ছিল । কিন্তু, শিশুটি এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে । তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম ছিল । এই সমস্যা বাড়তে থাকে । আমরা বুঝতে পারছিলাম, শিশুটির হার্টে সমস্যা হচ্ছে । শিশুটি COVID-19 পজ়িটিভ ছিল ।’’
চিকিৎসক সৌমেন মেউর বলেন, "এই শিশুটিকে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া শুরু হয় । বড়দের মতো এই শিশুটিকেও স্টেরয়েড দেওয়া শুরু হয় । এর পরে ধীরে ধীরে এই শিশুর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে । শিশুটি এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। শিশুটি নিজের থেকে খেতে পারছে, অ্যাকটিভ আছে । হার্টের ফাংশন এখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।’’