ETV Bharat / state

আজও শোনা যায় জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃতদের আর্তনাদ, কী বলছে বিজ্ঞানমঞ্চ ?

author img

By

Published : Feb 6, 2020, 2:52 AM IST

10 বছরের পুরোনো আতঙ্ক আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঝাড়গ্রাম খেমাশোলি ও সরডিয়া স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় মানুষদের ৷ রটেছে একাধিক গুজব ৷ দাবি, রাত হলেই না কি এলাকা থেকে নানান রকম ভৌতিক আওয়াজ শোনা যায় ৷ ভয়ে সন্ধ্যার পর এলাকার কেউ থাকে না ৷ বিজ্ঞান মঞ্চের পরামর্শ এলাকার মানুষকে সচেতন করা দরকার ৷

Jnaneswari Express
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস

ঝাড়গ্রাম, 4 ফেব্রুয়ারি: 10 বছর আগের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ৷ কিন্তু স্মৃতিটা ফ্যাকাসে হয়নি এখনও ৷ দুর্ঘটনাস্থান ঘিরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নানা ধরনের গুজব ৷ ওই এলাকা দিয়ে ভয় যাতায়াত করতে পারে না কেউ ৷ না না ধরনের ভৌতিক শব্দ না কি শোনা যায় এখনও ৷ রাত হলেই সেই আওয়াজ বাড়ে ৷ এলাকার মানুষের দাবি, বিকেল হলেই এলাকা ছাড়ে সাধারণ মানুষজন ৷ আর এখানেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ৷ বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি, এসব গুজব রটিয়ে কিছু মানুষ স্বার্থসিদ্ধি করছে । নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে কুসংস্কার রটিয়ে দিচ্ছে একাংশ ৷ এলাকার মানুষকে সচেতন করা দরকার ৷ কেন প্রশাসন এই বিষয় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না ? কেন এলাকার মানুষকে এধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য প্রচার ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে ? কেন ভাঙা কামরাগুলো আজও সরানো হয়নি ? উঠছে নানান প্রশ্ন ৷

সালটা 2010 ৷ দিনটা ছিল 28 মে ৷ সময় রাত 1:30 ৷ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় এলাকার মানুষদের ৷ প্রথমে কেউ ততোটা আঁচ করতে পারেননি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাও হতে পারে ৷ চারদিক থেকে ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ ৷ কান্নার আওয়াজ ৷ বাঁচানোর আর্তনাদ ৷ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের উপর একটি মালগাড়ি উঠে পড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেদিন ৷ সরডিহা ও ক্ষেমাসুলির মাঝখানে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ভয়ঙ্কর নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল সেদিন । তখন মাওবাদীদের মূল পীঠস্থান ছিল এই জঙ্গলমহলসহ অবিভক্ত মেদিনীপুর । প্রায়ই যেখানে সেখানে দেখা যেত মাওবাদী কার্যকলাপ ৷ আর সেদিনও রাতের অন্ধকারে মাওবাদীরা ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট খুলে রাখায় দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ সরকারিভাবে মৃত্যু হয় 141 জন যাত্রীর ৷ আহত হয় 200 জন ৷ তবে বেসরকারি হিসাব বলেছে এই দুর্ঘটনায় কত শতজনের দেহ যে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে তার হদিশ আজও মেলেনি । শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ বহুদিন পড়েছিল সেই সময় । আজও ওই এলাকায় পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ছিন্নভিন্ন কামরাগুলো ৷ রোদে ,জলে, ঝড়ে সেগুলো পড়ে রয়েছে রাস্তার ধারে ৷ ঘটনার পর 10 বছর কেটে গেলেও আজও এলাকাজুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের কুসংস্কার ৷ এই দুর্ঘটনা এলাকার মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিল ৷ যার রেশ আজও কাটেনি ৷ এলাকার যে সমস্ত বাসিন্দারা সেদিন সামনে থেকে দেখেছিল ওই দুর্ঘটনা তাদের কাছে আজও সেই স্মৃতি তরতাজা ৷ উদ্ধারকার্যে গিয়ে যারা সেইসব ছিন্নভিন্ন শরীর এবং ভাঙা কামরা দেখেছিল তাদের আজও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে ৷ আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে কুসংস্কার ৷

aa
দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস

কুসংস্কার এবং ভয় মানুষের মনে এতটাই দানা বেঁধেছে যে সেই তালিকায় শিক্ষিত মানুষও বাদ যাচ্ছেন না ৷ এলাকার এক শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন, "সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল তার বীভৎসতা আজও আমাদের পিছু ছাড়েনি৷ এখনও মনে হয় বিকট আওয়াজ ,সঙ্গে গোঙ্গানির আওয়াজ আসছে৷ মনে হয় আজ রাতেও দুর্ঘটনা ঘটেছে । তাই আমরা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরোই না ৷ তবে এটা অলৌকিক সেটা বলবো না ৷ যেহেতু সেই ঘটনায় আমরা সাক্ষী ছিলাম তাই হয়তো এখনও মনে হয় ওখানে মৃত মানুষের আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ ওই স্থানে গেলেই গা ছমছম করে ওঠে ।"

নানা ধরনের গুজব ছড়িয়েছে এলাকায় ৷ রাতের বেলায় তো বটেই দিনের বেলাতেও অনেকেই ওই এলাকায় পা মাড়াচ্ছে না । দাবি, অনেকেই না কি রাতে ওই এলাকায় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছে ৷ কারও কারও মতে আবার রাত হলেই না কি দু'টো ট্রেনের সংঘর্ষের বিকট আওয়াজ শোনা যায় এখনও ৷ শুনতে পাওয়া যায় না কি তীব্র আর্তনাদ ৷ ওই এলাকার আশপাশ দিয়ে গেলে গা ছমছম করে ৷ আর এখানেই বিভ্রান্তির সূত্রপাত ৷ কেন দুর্ঘটনার এত বছর পরেও এলাকার মানুষ ভয়ে ভয়ে আছেন ? কেন অহেতুক না না ধরনের গুজব বেড়ে চলেছে দিন দিন ? কেন এলাকার মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ? কেন এলাকায় সচেতনতার প্রচার চালানো হচ্ছে না? কেনই বা এতদিনে ভাঙা কামরাগুলো সরানো হল না? উঠছে একাধিক প্রশ্ন ৷

vv
আজও পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ছিন্নভিন্ন কামরা

এই ধরনের অলৌকিক আত্মা, অশরীরী আত্মার কথাকে এক বাক্যেই নাকচ করে দিয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ । বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক নন্দদুলাল ভট্টাচার্য বলেন, "এই ধরনের ঘটনা , অশরীরী আত্মা বা ভূতের যারা কথা বলে তারা ভুল কথা বলে । আসলে ওই এলাকায় মাহাত, কুড়মি, লোধা, সবর লোকদের বসবাস । তাদের মধ্যে কুসংস্কার বেশি ৷ সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল এখনও সেই স্মৃতি থেকে ওরা বেরিয়ে আসতে পারেনি । তাই ওরা ভয় পাচ্ছে অহেতুক ৷ এখানে কোনও অলৌকিক ঘটনা নেই । কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের কার্যসিদ্ধি করার জন্য এই ধরনের ভৌতিক গুজব রটিয়ে থাকে । আমরা প্রয়োজন হলে ওখানে ক্যাম্প করে মানুষকে সচেতন করব ।"

ঝাড়গ্রাম, 4 ফেব্রুয়ারি: 10 বছর আগের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ৷ কিন্তু স্মৃতিটা ফ্যাকাসে হয়নি এখনও ৷ দুর্ঘটনাস্থান ঘিরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নানা ধরনের গুজব ৷ ওই এলাকা দিয়ে ভয় যাতায়াত করতে পারে না কেউ ৷ না না ধরনের ভৌতিক শব্দ না কি শোনা যায় এখনও ৷ রাত হলেই সেই আওয়াজ বাড়ে ৷ এলাকার মানুষের দাবি, বিকেল হলেই এলাকা ছাড়ে সাধারণ মানুষজন ৷ আর এখানেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ৷ বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি, এসব গুজব রটিয়ে কিছু মানুষ স্বার্থসিদ্ধি করছে । নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে কুসংস্কার রটিয়ে দিচ্ছে একাংশ ৷ এলাকার মানুষকে সচেতন করা দরকার ৷ কেন প্রশাসন এই বিষয় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না ? কেন এলাকার মানুষকে এধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য প্রচার ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে ? কেন ভাঙা কামরাগুলো আজও সরানো হয়নি ? উঠছে নানান প্রশ্ন ৷

সালটা 2010 ৷ দিনটা ছিল 28 মে ৷ সময় রাত 1:30 ৷ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় এলাকার মানুষদের ৷ প্রথমে কেউ ততোটা আঁচ করতে পারেননি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাও হতে পারে ৷ চারদিক থেকে ভেসে আসছে গোঙানির শব্দ ৷ কান্নার আওয়াজ ৷ বাঁচানোর আর্তনাদ ৷ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের উপর একটি মালগাড়ি উঠে পড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেদিন ৷ সরডিহা ও ক্ষেমাসুলির মাঝখানে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ভয়ঙ্কর নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল সেদিন । তখন মাওবাদীদের মূল পীঠস্থান ছিল এই জঙ্গলমহলসহ অবিভক্ত মেদিনীপুর । প্রায়ই যেখানে সেখানে দেখা যেত মাওবাদী কার্যকলাপ ৷ আর সেদিনও রাতের অন্ধকারে মাওবাদীরা ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট খুলে রাখায় দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ সরকারিভাবে মৃত্যু হয় 141 জন যাত্রীর ৷ আহত হয় 200 জন ৷ তবে বেসরকারি হিসাব বলেছে এই দুর্ঘটনায় কত শতজনের দেহ যে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে তার হদিশ আজও মেলেনি । শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ বহুদিন পড়েছিল সেই সময় । আজও ওই এলাকায় পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ছিন্নভিন্ন কামরাগুলো ৷ রোদে ,জলে, ঝড়ে সেগুলো পড়ে রয়েছে রাস্তার ধারে ৷ ঘটনার পর 10 বছর কেটে গেলেও আজও এলাকাজুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের কুসংস্কার ৷ এই দুর্ঘটনা এলাকার মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিল ৷ যার রেশ আজও কাটেনি ৷ এলাকার যে সমস্ত বাসিন্দারা সেদিন সামনে থেকে দেখেছিল ওই দুর্ঘটনা তাদের কাছে আজও সেই স্মৃতি তরতাজা ৷ উদ্ধারকার্যে গিয়ে যারা সেইসব ছিন্নভিন্ন শরীর এবং ভাঙা কামরা দেখেছিল তাদের আজও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে ৷ আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে কুসংস্কার ৷

aa
দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস

কুসংস্কার এবং ভয় মানুষের মনে এতটাই দানা বেঁধেছে যে সেই তালিকায় শিক্ষিত মানুষও বাদ যাচ্ছেন না ৷ এলাকার এক শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন, "সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল তার বীভৎসতা আজও আমাদের পিছু ছাড়েনি৷ এখনও মনে হয় বিকট আওয়াজ ,সঙ্গে গোঙ্গানির আওয়াজ আসছে৷ মনে হয় আজ রাতেও দুর্ঘটনা ঘটেছে । তাই আমরা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরোই না ৷ তবে এটা অলৌকিক সেটা বলবো না ৷ যেহেতু সেই ঘটনায় আমরা সাক্ষী ছিলাম তাই হয়তো এখনও মনে হয় ওখানে মৃত মানুষের আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ ওই স্থানে গেলেই গা ছমছম করে ওঠে ।"

নানা ধরনের গুজব ছড়িয়েছে এলাকায় ৷ রাতের বেলায় তো বটেই দিনের বেলাতেও অনেকেই ওই এলাকায় পা মাড়াচ্ছে না । দাবি, অনেকেই না কি রাতে ওই এলাকায় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছে ৷ কারও কারও মতে আবার রাত হলেই না কি দু'টো ট্রেনের সংঘর্ষের বিকট আওয়াজ শোনা যায় এখনও ৷ শুনতে পাওয়া যায় না কি তীব্র আর্তনাদ ৷ ওই এলাকার আশপাশ দিয়ে গেলে গা ছমছম করে ৷ আর এখানেই বিভ্রান্তির সূত্রপাত ৷ কেন দুর্ঘটনার এত বছর পরেও এলাকার মানুষ ভয়ে ভয়ে আছেন ? কেন অহেতুক না না ধরনের গুজব বেড়ে চলেছে দিন দিন ? কেন এলাকার মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ? কেন এলাকায় সচেতনতার প্রচার চালানো হচ্ছে না? কেনই বা এতদিনে ভাঙা কামরাগুলো সরানো হল না? উঠছে একাধিক প্রশ্ন ৷

vv
আজও পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ছিন্নভিন্ন কামরা

এই ধরনের অলৌকিক আত্মা, অশরীরী আত্মার কথাকে এক বাক্যেই নাকচ করে দিয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ । বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক নন্দদুলাল ভট্টাচার্য বলেন, "এই ধরনের ঘটনা , অশরীরী আত্মা বা ভূতের যারা কথা বলে তারা ভুল কথা বলে । আসলে ওই এলাকায় মাহাত, কুড়মি, লোধা, সবর লোকদের বসবাস । তাদের মধ্যে কুসংস্কার বেশি ৷ সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল এখনও সেই স্মৃতি থেকে ওরা বেরিয়ে আসতে পারেনি । তাই ওরা ভয় পাচ্ছে অহেতুক ৷ এখানে কোনও অলৌকিক ঘটনা নেই । কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের কার্যসিদ্ধি করার জন্য এই ধরনের ভৌতিক গুজব রটিয়ে থাকে । আমরা প্রয়োজন হলে ওখানে ক্যাম্প করে মানুষকে সচেতন করব ।"

Intro:
10 বছরের পুরানো আতঙ্ক আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঝাড়গ্রাম জ্ঞানেশ্বরী পাশস্থ অঞ্চলের মানুষদের ,তাই বিকেল হলেই এলাকা ছাড়ছে পশুপাখি সহ-সাধারণ মানুষজন ,দাবি রাত হলেই বিকট আওয়াজ অলৌকিক ও অশরীরী আত্মার করুন গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যায় । যদিও বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি এসব গুজব রটিয়ে কিছু মানুষ স্বার্থ সিদ্ধি করছে ।


Body:10 বছরের পুরানো আতঙ্ক আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঝাড়গ্রাম জ্ঞানেশ্বরী পাশস্থ অঞ্চলের মানুষদের ,তাই বিকেল হলেই এলাকা ছাড়ছে পশুপাখি সহ-সাধারণ মানুষজন ,দাবি রাত হলেই বিকট আওয়াজ অলৌকিক ও অশরীরী আত্মার করুন গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যায় । যদিও বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি এসব গুজব রটিয়ে কিছু মানুষ স্বার্থ সিদ্ধি করছে ।

10 বছর আগে ঘটে যাওয়া বীভৎসতা আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে জ্ঞানেশ্বরী এলাকার মানুষদের ,অভিযোগ বিকেল থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায় ওই কামরা থেকে , তাই বিকেল সন্ধে গড়ালে এলাকা ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ । উল্লেখ্য 2010 সালের 28 মে সরডিহা ও ক্ষেমাসুলি মাঝখানে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস এ ভয়ঙ্কর নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল । সেই সময় ছিল মাওবাদীদের মূল পীঠস্থান এই জঙ্গলমহল সহ অবিভক্ত মেদিনীপুর । মাওবাদীদের বিভিন্ন কার্যকলাপ যত্রতত্র দেখা যেত । সেই সময় তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকত । সেরকমই এক মাওবাদী নাশকতা অন্যতম ঘটনা হলো জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা । 2010 সালের 28 মে রাত্রি 1:30 নাগাদ এই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ঘটে ,যার মূলে ছিল মাওবাদীরা , তারা রাতের অন্ধকারে ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট খুলে রাখায় এই জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা ঘটেছিল । এই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস এর উপর একটি মালগাড়ি উঠে পড়ায় এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে এবং তাতে সরকারিভাবে মৃত্যু হয় 141 জন যাত্রী আহত হয় 200 জন ,যার বেসরকারি হিসাবে ছিল হাজার হাজার মানুষ যাদের চেহারা চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যায় ওই দুর্ঘটনায় ,যার হদিশ আজ ও মেলেনি । শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ বহুদিন পড়েছিল সেই সময় । এই ঘটনায় দুই ট্রেনের ধাক্কার আওয়াজে ও আহত ট্রেন যাত্রীদের আর্তনাদে সেই সময় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল এবং সাথে সাথে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা । এলাকার মানুষদের অনেকাংশে ভয় ধরিয়ে ছিল কিন্তু ঘটনা ঘটে গেছে 10 বছর হয়ে গেছে এখন সেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাই ঘটে যাওয়া ছিন্নভিন্ন রেলের কামরাগুলো ,যা আজও স্মৃতি বয়ে চলছে । রোদে ,জলে ঝড়ে সেই ছিন্নভিন্ন কামরা আজও পড়ে রয়েছে রাস্তার ধারে ,যা জ্ঞানেস্বরীর কাহিনী মনে করিয়ে শিহরন জাগায় । আর এখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত । এলাকার মানুষদের মতে এই দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া যারা চোখের সামনে দেখেছিল এবং পরবর্তীকালে উদ্ধারকার্য করতে গিয়ে যারা সেইসব ছিন্নভিন্ন শরীর এবং ভাঙ্গা কামরা দেখেছিল তারা আজও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে । রাতের বেলায় তো বটেই দিনের বেলায় কেউ সেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় পা মাড়াই না । মানুষ তো বটেই এমন কি জন্তু জানোয়াররাও 2 কিলোমিটারের মধ্যে যায় না । অনেকে বলেন রাতের বেলায় কাঁদার শব্দ পেয়েছি, কেউ কেউ বলেন শিশুর কাঁদার আওয়াজ পেয়েছি ,কারো কারো মতে রাত হলেই দুটো ট্রেনের সংঘর্ষের বিকট আওয়াজ এবং সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আর্তনাদের শব্দ পায় যার জন্য আতঙ্কে থাকি তাছাড়া ওই স্থানের আশেপাশে গেলে মনে হয় গা টা ছমছম করে ।

এ বিষয়ে এলাকার শিক্ষক বিপ্লব মাহাতো বলেন সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল তার বীভৎসতা আজও আমাদের পিছু ছাড়ে না, বিকট আওয়াজ ,সঙ্গে গোঙ্গানির আওয়াজ হয়, মনে হয় আজ রাতেও অ্যাক্সিডেন্ট ঘটেছে । তাই আমরা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরোয় না ,তবে এটা অলৌকিক সেটা বলবো না ,তবে মনে হয় সেই ঘটনায় আমরা যেহেতু সাক্ষী ছিলাম তাই এখনো মনে হয় সেই সব মানুষের অতৃপ্ত আত্মা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে ,যা ওই স্থানে গেলে গা ছমছম করে ওঠে ।

এরকমই বক্তব্য স্থানীয় সোমরাজ ভূপেন বলেন বিকেলের পর থেকে আমরা এই স্থানে কোন কাজ থাকলেও যায়না । তাছাড়া আমাদের গরু ,বাছুর ,ছাগল মুরগি ,ওই রাস্তায় যায় না । আমরা দিনের বেলায় ও ওই এলাকাকে এড়িয়ে চলি । কেননা সেই রাতের আতঙ্ক এখনো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি, মনে হয় আজও সেই আতঙ্ক আমাদের পিছু ছাড়ছে না, রাতের বেলায় মনে হয় কেউ জলের জন্য সাহায্য চাইছে ,কেউবা বাঁচানোর আর্তনাদ ।

যদিও এই বিষয়ে এই ধরনের অলৌকিক আত্মা অশরীরী আত্মার কথা মানতে নারাজ বিজ্ঞান মঞ্চ । বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক নন্দদুলাল ভট্টাচার্য বলেন এই ধরনের ঘটনা , এসব অশরীরী আত্মা বা ভূতের যারা কথা বলে তারা ভুল কথা বলে । আসলে ওই এলাকায় মাহাতো, কুড়মি, লোধা, সবর লোকদের বসবাস । তাদের মধ্যে কুসংস্কার বেশি, সেই সময় যে ঘটনা ঘটেছিল , সেই আওয়াজ ওদেরকে হয়তো কোথাও মনে হয় ,এখনো সেই স্মৃতি থেকে ওরা বেরিয়ে আসতে পারেনি । তাই ওরা ভয় পায় অহেতুক, এখানে কোন অলৌকিক ঘটনা নেই । কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের কার্যসিদ্ধি করার জন্য এই ধরনের ভৌতিক গুজব রটিয়ে থাকেন । আমরা প্রয়োজন হলে ওখানে ক্যাম্প করে মানুষদের সচেতন করবো ।


Conclusion:
10 বছরের পুরানো আতঙ্ক আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঝাড়গ্রাম জ্ঞানেশ্বরী পাশস্থ অঞ্চলের মানুষদের ,তাই বিকেল হলেই এলাকা ছাড়ছে পশুপাখি সহ-সাধারণ মানুষজন ,দাবি রাত হলেই বিকট আওয়াজ অলৌকিক ও অশরীরী আত্মার করুন গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যায় । যদিও বিজ্ঞান মঞ্চের দাবি এসব গুজব রটিয়ে কিছু মানুষ স্বার্থ সিদ্ধি করছে ।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.