জলপাইগুড়ি, 9 জানুয়ারি: "আমি কারও প্ররোচনাতে স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিইনি । কেন সরকারি পরিষেবা পাব না ? কেন অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বেশি চাওয়া হবে? এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই কাঁধে মৃতদেহ তুলে নিয়েছিলাম। আমাকে হাসপাতাল থেকে সাহায্য করা হয়নি । ওয়ার্ড মাস্টার সাফ জানিয়েছিলেন সরকারিভাবে মরদেহ পরিবহণের কোনও ব্যবস্থা নেই । সংবাদমাধ্যম ছবি তুলে বেশ করেছে । না-হলে কেউ জানতে পারত না বিষয়টা ।" জলপাইগুড়িতে কাঁধে করে মৃতদেহ বহনকাণ্ডে সোমবার এই দাবিই করলেন মৃতার স্বামী জয়কৃষ্ণ দেওয়ান (Jalpaiguri Dead body Carrying controversy)।
এদিন জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন 77 বছরের জয়কৃষ্ণ ৷ সরকারি পরিষেবা যাতে মানুষ যাতে ঠিকমতো পায় সেই আবেদন তিনি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে ৷ বৃদ্ধের কথায়, "যারা বলছেন আমি চক্রান্ত করেছি কারও কথা শুনে তারা অপপ্রচার করছেন । এর তদন্ত হোক । আমি কেন কাঁধে তুলেছিলাম মৃতদেহ এটার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক, তাহলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।"
গত 5 জানুয়ারি জলপাইগুড়ি গভঃ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধীন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে লক্ষ্মীরানি দেওয়ান নামে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স 3 হাজার টাকা দাবি করেছিল বলে অভিযোগ। এমনকি সরকারিভাবে হাসপাতাল থেকে শবদেহ পরিবিহণের জন্য কোনওরকম সহযোগিতা করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন মৃতার স্বামী ও ছেলে । অ্যাম্বুল্যান্স না-পেয়ে কাঁধে লক্ষ্মীরানি দেওয়ানের মরদেহ নিয়েই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন জয়কৃষ্ণ দেওয়ান ও তাঁর ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান (man carried wife dead body in Jalpaiguri) ৷ কয়েকশো মিটার যাবার পর গ্রিন জলপাইগুড়ি নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদকের নজরে বিষয়টি এলে তিনি শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করেন (Jalpaiguri Dead body Carrying case) ।
আরও পড়ুন: 'রাজ্যের প্রশ্রয়েই এমন ঘটনা !' জলপাইগুড়ি কাণ্ডে তোপ সাংসদের
এরপরেই বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা অভিযোগ করেন, সরকার ও তাদের কালিমালিপ্ত করতে গ্রিন জলপাইগুড়ি নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি চক্রান্ত করে এই কাজ করেছে ৷ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের পক্ষ থেকে গ্রিন জলপাইগুড়ির সম্পাদক অঙ্কুর দাসের বিরুদ্ধে ও সংবাদমাধ্যমের একাংশের নামে কোতয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় । এই ঘটনাক্রমের মধ্যেই সোমবার জয়কৃষ্ণ দেওয়ান জেলাশাসকের দফতরে যান ৷ কোন পরিস্থিতিতে তিনি স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তা লিখিতভাবে জানান তিনি (man carried wife dead body on sholder in Jalpaiguri) । হাসপাতাল থেকেই যাতে মৃতদেহ পরিবহণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় সেই আবেদন করেছেন তিনি ।
জয়কৃষ্ণবাবুর কথায়, "আমার বয়স 77 বছর ৷ শেষ বয়সে সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে আমি কী পাব । আমি তো সরকারের দলটাই করি 18 বছর ধরে । আমাকে কেউ কাঁধে মৃতদেহ তুলে আনতে বলেনি । 1 হাজার টাকার ভাড়া 3 হাজার টাকা চাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই মৃতদেহ আমি আর ছেলে কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম ।" জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বলেন,"জয়কৃষ্ণ দেওয়ান আমার কাছে এসেছিলেন । তাঁর দাবিগুলি সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠাব । একটা তদন্ত চলছে । কেউ বেশি টাকা চেয়েছিল কি না তদন্ত হচ্ছে । আগামীদিনে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেটাও দেখা হচ্ছে । যদি কোনও ভুল ক্রুটি থাকে তাহলে সেটা দেখা হবে । আগামীকাল আমরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে বৈঠক করব ।"