জলপাইগুড়ি, 20 সেপ্টেম্বর: জলপাইগুড়ির বুকে বেআইনিভাবে চলছিল দিশারী নার্সিং সেন্টার ৷ স্বাস্থ্য দফতরের মুচলেকা দিয়ে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের ঝাঁপ বন্ধ করলেন খোদ সংস্থার কর্নধার শান্তনু শর্মা । স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রশিক্ষণের আড়ালে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে সেন্টারের বিরুদ্ধে ৷ তবে ঘটনার জেরে বিপাকে পড়েছে ভিন রাজ্যে পাঠরত ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকেরা । স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ হতেই দিশারী নার্সিং সেন্টারের ব্যানার ফেস্টুন সব খুলে ফেলা হয়েছে । জলপাইগুড়ি পান্ডাপাড়ার দিশারী নার্সিং সেন্টারের অবৈধ কার্যকলাপে চোখ কপালে উঠেছে শহরবাসীর ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ চিকিৎসক সুখেন্দু বিশ্বাস বলেন, "দিশারী নার্সিং সেন্টার অবৈধভাবে চলছিল ৷ তাদের কোনও বৈধ কাগজ নেই । প্যাথলজি, এক্সরের জন্য অনুমতি নিতে হয় । ক্লিনিক্লাল এষ্টাব্লিসমেন্ট লাইসেন্স এই সেন্টারে নেই । আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পরেই আমরা তদন্ত যাই । নার্সিং ট্রেনিং,প্যাথলজি, এক্স-রে ট্রেনিং এর জন্য যে সমস্ত নূন্যতম কাগজপত্র দরকার তা দিশারীর নেই । তাই আমরা বলেছি সরকারি অনুমতি নিয়ে সেন্টার চালাতে । শান্তনু শর্মা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে এসে মুচলেকা দিয়ে গিয়েছে । সে আর নার্সিং সেন্টার চালাবে না এবং তাঁর সেন্টারের বাইরে সেটি বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেবে ।"
নার্সিং ট্রেনিং বা প্যাথলজিক্যাল প্রশিক্ষণের কোনও বৈধ কাগজ নেই ৷ স্বীকার করে নিয়েছেন শান্তনু শর্মা । তিনি বলেন, "স্বাস্থ্য দফতর আমাকে ডেকেছিল । আমার কাছে যা কাগজ ছিল দেখিয়েছি । তাতে স্বাস্থ্য দফতর বলেছে স্বাস্থ্য ভবনের কোনও কাগজ নেই সেন্টার চালানোর জন্য । আমি আপাতত সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছি । অভিভাবকদের আমি সর্বতভাবে সহযোগিতা করব ।"
আরও পড়ুন: অবৈধ নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে অভিযান স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের
জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অভিযোগ আসে, পান্ডাপাড়ায় দিশারী নার্সিং এণ্ড টেকনোলজিকাল সেন্টার অবৈধভাবে চলছে । অথচ সেখানে শতাধিক ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে । সেই অভিযোগ পেয়েই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক অসীম হালদার ডেপুটি সিএমওএইচ চিকিৎসক সুখেন্দু বিশ্বাসের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ দল দিশারী নার্সিং সেন্টারের অভিযানে পাঠান । সেই সময় নার্সিং সেন্টার চালানোর বৈধ কোনও কাগজ দেখাতে পারেনি সংস্থার কর্ণধার ।
অভিযোগ, নার্সিং, প্যাথলজি, এক্সরের প্রশিক্ষণের নাম করে ট্রেনিং সেন্টার চালানো হত এখানে । সেন্টার থেকে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হত তা নাকি সম্পূর্ণ বেআইনি । শান্তনু শর্মার শ্বশুর বিমল বিশ্বাসের বাড়িতেই তিনি ও তাঁর স্ত্রী অনুস্মিতা এই সেন্টার চালান । এলাকাবাসী বর্ণন বসু বলেন, "ছেলেমেয়েদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে ভাবতেই অবাক লাগে । আমরাও জানতাম না এখানে অবৈধভাবে নার্সিং সেন্টার চলত । শহর জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেকে জাহির করতেন দিশারী নার্সিং সেন্টারের কর্ণধার শান্তনু শর্মা ও স্ত্রী অনুস্মিতা শর্মা ।"
আরও পড়ুন: কোচিং সেন্টার খুলতে গিয়েছিলেন অরিজিৎ সিং, আগুন জিয়াগঞ্জের সেই নার্সিং কলেজে
এ দিন ট্রেনিং সেন্টারে পড়ুয়ার বাবা ইসমাইল খান বলেন, "আমার মেয়েকে শান্তনু শর্মার মাধ্যমে ব্যাঙ্গালোরে নার্সিং ট্রেনিং পড়তে পাঠিয়েছি । এর জন্য তিন বছরে 3 লক্ষ 60 হাজার টাকা দিতে হত । আমি 1 লক্ষ 60 হাজার টাকা ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছি । এখন দেখছি এটা অবৈধ । মেয়েটা ব্যাঙ্গালোরে আছে । ভাবছি ওঁকে নিয়ে আসব । মেয়ে বলছে তাঁকে যেখানে পড়ানোর কথা সেখানে নার্সিং পড়াচ্ছে না । এখন কী করব বুঝতে পারছি না ।"