আলিপুরদুয়ার, 7 মার্চ: আজ দোল ৷ রংয়ের উৎসবে মেতেছে দেশ তথা রাজ্যবাসী ৷ কিন্তু রং খেললেই বিপদ। কোনও মেয়ের গায়ে রং (Holi Celebration) দিলেই তাকে বিয়ে করতে হবে। তাই ওরা রং খেলে না। "খেলি ছোরি সাং হোলি, তো বন জায়েগি সাদি।" অর্থাৎ কোনও ছেলে যদি কোনও মেয়ের গায়ে রং দেয় তাহলে তাকে বিয়ে করতে হবে। আর যদি বিয়ে না-করে তাহলে দিতে হবে জরিমানা। হ্যাঁ, শুনলে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব আলিপুরদুয়ারের একটি গ্রামে। রঙের উৎসবে সবাই যখন নানা রং একে-অপরকে রাঙিয়ে তোলে ঠিক সে সময় আলিপুরদুয়ার জেলার তুরতুরি গ্রামে আদিবাসীর জনজাতির ছেলেমেয়েরা সমাজের কঠোর নিয়মে রং খেলতে পারে না।
সেখানে কোনও মেয়ের গায়ে রং লাগালেই তার সঙ্গে যেতে হবে ছাদনা তলায় ৷ তাই তুরতুরিতে রঙের বদলে খেলা হয় জল। একে অপরকে জলে ভিজিয়ে দেওয়াই এখানকার হোলি খেলার রীতি রয়েছে। তুরতুরি গ্রামের সাঁওতাল, মুণ্ডা সমাজের ছেলে-মেয়েরা হোলি খেলার দিন আর পাঁচজনের মতো আনন্দ নেয় একে অপরকে জল দিয়ে ভিজিয়ে। তুরতুরি গ্রামের এক যুবক দুর্গা হাঁজদা জানান, আদি অনন্তকাল থেকে তাঁদের সমাজে এই নিয়ম হয়ে আসছে। হোলির দিন এখানে কোনও মেয়েকে রং দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: বসন্ত উৎসবে রঙিন মালদা, আনন্দে মাতোয়ারা সাত থেকে সত্তর
তিনি আরও জানান, যদি কোনও ছেলে ভুল করেও কোনও মেয়েকে রং লাগিয়ে দেয় তাহলে তাকে বিয়ে করতেই হবে। আর যদি বিয়ে করতে রাজি না-হয় তাহলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। আর এই নিয়মই তারা মেনে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। আর জরিমানা হিসেবে কখনও পাঁঠাবলি বা মোটা অংকের টাকাও সমাজ জরিমানা করে থাকে। হোলির সময় তাদের গ্রামের ছেলেরা জঙ্গলে যায় শিকার করতে। শিকার করে যা আনে তা দিতেই খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এখন জঙ্গলে কড়া আইনের গেরোয় তারা আর বন্যপ্রাণী হত্যা করে না। বাড়িতেই তিরধনুক দিয়ে মুরগি শিকার করে নিয়মটা জিইয়ে রেখেছেন। সুনীতা হাজরা, কিমু টুডুরা জানান, তাঁদের মধ্যে হোলি খেলা হয় ৷ তবে কোনও ছেলে যদি কোনও মেয়েকে রং দিয়ে দেয় তাহলে তাঁকে বিয়ে করতে হবে। শুধু তাই নিয় বিয়ে করতে রাজি না-হলে তাঁকে সমাজ জরিমানা করবে। তাই আমরা রং খেলি না জল খেলি।