জলপাইগুড়ি, 14 ডিসেম্বর: বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল ইঞ্জিনের ট্রাকশন মোটরের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ৷ সেই দুর্ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেন 8 জন রেলকর্মী (Eight Railway Workers Held Guilty by Rail)। রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের রিপোর্টে বুধবার এমন খবরই সামনে এল।
চলতি বছরের 13 জানুয়ারি জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি দোমোহনি ধরলা সেতুর কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস (Bikaner Guwahati Express) । ঘটনায় 9 জনের মৃত্যু হয়, আহত হন 42 জন। দুর্ঘটনায় লাইনচ্যুত হয় ট্রেনের বারোটি কামড়া। পরদিনই দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেলওয়ের সেফটি সিকিউরিটি বিভাগ এই দুর্ঘটনার তদন্ত করে। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের চালক প্রদীপ কুমার যাদবকে। তিনি জানান, দোমোহনি স্টেশন পার করে সবুজ সঙ্কেত দেখতে পেয়ে গাড়ির গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ময়নাগুড়ি স্টেশন আসার আগে হঠাৎ অ্যাডভানস সিগনালের আগে ঝাঁকুনি অনুভব করি। ব্রেক কষি। দেখি পিছনে একের পর এক বগি উলটে গিয়েছে। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা বুঝতেই পারিনি। বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে রেলের ইঞ্জিনেই নজর ছিল তদন্তকারীদের। তদন্তের স্বার্থে নিউ দোমোহনি স্টেশনে আলাদা করে রাখা হয়েছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের ইঞ্জিনটিকে। ঘটনার তদন্ত শুরু করে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি'র নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল।
আরও পড়ুন: দোমোহনির রেল দুর্ঘটনায় মৃত অন্তত 9, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ইঞ্জিনের ট্রাকশান মোটরের সমস্যার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দুর্ঘটনার পর খুলে গিয়েছে ইঞ্জিনের ট্রাকশান মোটর। যা গতি নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। ট্রেন যে গতিতে ছিল তা চালকের কথাতেই স্পষ্ট। কিন্তু সেই গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাকশান মোটর কোনও কাজে আসেনি। তাহলে কি ট্রাকশান মোটর আগেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল? ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারলেও ট্রাকশান মোটরেই যে সমস্যা বুঝতে পারেননি চালক।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম দিলীপ কুমার সিং জানান, ট্রাকশান মোটরের কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে তা তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে। এই দুর্ঘটনায় 8 জন রেলকর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যদিও এই 8 জন রেলকর্মী কেউ প্রত্যক্ষভাবে রেল দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কাউকেই সাসপেন্ড করা হয়নি। এক একজন, এক এক বিভাগে কর্মরত রয়েছেন বলে জানান ডিআরএম (DRM)।
ময়নাগুড়ি দোমহনিতে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর তদন্তের জন্য 65 জন রেলকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশন ও আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের রেলকর্মীদের জেরা করা হয়েছিল। কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি লতিফ খান এবিষয়ে তদন্ত করেছেন। 65 জন রেলকর্মীকে জেরা করেছেন তিনি। বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি কোন শেড থেকে বেরিয়েছিল? ইঞ্জিনের শেষ ইনস্পেকশন কোথায় হয়েছিল? কারা ইঞ্জিনটিকে চালানোর ছাড়পত্র দিয়েছিলেন? বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের চালক কখন ট্রেনের সমস্যার কথা জানতে পারেন? পয়েন্ট ম্যান, গেটম্যানদের পর্যবেক্ষণ কী ছিল ? এই সবকিছুই জানা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ময়নাগুড়ি রেল দুর্ঘটনার তদন্তে ফরেনসিক দল
ট্রেনের চালক ইঞ্জিনের সমস্যার কথা কেন কোনও ষ্টেশনে লিপিবদ্ধ করাননি? দুর্ঘটনার আগের ষ্টেশন ময়নাগুড়ি, দোমহনি ও জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন মাস্টারের ভূমিকা কী ছিল, সেটাও জানার পরেই তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ে। তাতে 8 জন রেলকর্মী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।