জলপাইগুড়ি, 30 সেপ্টেম্বর: রাজা নেই, নেই রাজ্যপাট ৷ তবুও অটুট রয়েছে ঐতিহ্য ৷ আর সেই ঐতিহ্যের হাত ধরেই ফের একবার দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2022) প্রস্তুতিতে মেতেছেন জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির সদস্যরা ৷ জলপাইগুড়ি জেলার বৈকুণ্ঠপুর রাজ পরিবারের এই পুজোর (Jalpaiguri Royal Family Durga Puja) বয়স 513 বছর ! পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আবেগ, জড়িয়ে রয়েছে কিংবদন্তি ৷
রাজ পরিবারেরই সদস্য, বয়সে প্রবীণ প্রণত বসু জানালেন, এই পুজোর সূচনা হয়েছিল রায়কত বংশে ৷ যাদের আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশে ৷ তৎকালীন সেই রাজ পরিবারের রাজধানী ছিল সুবর্ণপুরে ৷ সেই জায়গাও আজ বাংলাদেশের মধ্যেই পড়ে ৷ 1510 সালে পুজো শুরু করেছিলেন বিশু সিংহ ও শিশু সিংহ ৷ কিন্তু, পরবর্তীকালে পুজো পরিচালনার দায়িত্ব চলে আসে সংশ্লিষ্ট রাজার মাতুল বংশের হাতে ৷ প্রণত বসুরা সেই বংশেরই উত্তরসূরি ৷ সুবর্ণপুরে শুরু হওয়া পুজোই পরবর্তীতে উঠে আসে জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরের এই রাজবাড়িতে ৷ গত পাঁচ শতাব্দী ধরে পুজোর আচার, অনুষ্ঠানে তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি (নরবলি বাদে) ৷
আরও পড়ুন: 75 বছরে পা দিল রায়গঞ্জের দত্ত বাড়ির পুজো
রাজ পরিবারের পুরোহিত শিবু ঘোষাল এই প্রসঙ্গে জানালেন, আগে এই পুজোয় নরবলি দেওয়া হত ! সেই প্রথা আজও প্রতীকী রূপে পালন করা হয় ৷ বর্তমানে চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয় মানুষের পুতুল ৷ তারপর খাঁড়ার বদলে ধানের তুষ দিয়ে সেই পুতুলের মুণ্ডচ্ছেদ করে দশভূজাকে অর্পণ করা হয় ৷ একইসঙ্গে, পায়রা এবং ছাগবলি দেওয়া হয় ৷ তাছাড়া, দুর্গাপুজোর সময়েই রাজবাড়িতে দেবী কালীরও আরাধনা করা হয় ৷
রাজ পরিবারের একটি স্থায়ী দুর্গাপ্রতিমা রয়েছে ৷ সেটি নিরেট সোনার তৈরি ! সেই বিগ্রহ নিত্য পুজো পায় ৷ কিন্তু, পুজোয় সময় আলাদা করে মাটির প্রতিমাও তৈরি করা হয় ৷ তবে, এই প্রতিমার গায়ের রঙে স্বাতন্ত্র রয়েছে ৷ দেবী এখানে তপ্ত স্বর্ণবর্ণা !
বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পুজোর ভোগ অত্যন্ত বিখ্য়াত ৷ পুজোর সময় এখানে নিরামিষ নয় বরং আমিষ ভোগ রান্না করা হয় ৷ সেই আচারে মাছের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ ইলিশ, চিতল, ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক এবং বিজয়া দশমীতে পুঁটি মাছের পদ ভোগে থাকতেই হবে ৷ এছাড়াও মাকে পান্তা ভাত নিবেদন করা হয় ৷ একইসঙ্গে, কালের নিয়মে এর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে পোলাও, ফ্রায়েড রাইসের মতো পদও ৷ সঙ্গে থাকে খিচুড়ি ভোগ-সহ অন্য়ান্য ব্যঞ্জন ৷ পুজোর দিনগুলিতে সকলকেই ভোগ বিতরণ করা হয় ৷