চুঁচুড়া, 23 জানুয়ারি : কিশোরীকে অপরহরণ করে খুন । পরে মৃতদেহের সঙ্গে গণধর্ষণ করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয় । বলাগড়ের বছর পাঁচেকের আগের এই ঘটনায় গতকাল দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করল চুঁচুড়া জেলা আদালত । অপরাধের সময় আর এক অভিযুক্তের 18 বছর না হওয়ায় তার বিচার চলছে জুভেনাইল কোর্টে । মামলায় 27 জানুয়ারি রায় ঘোষণা করবে আদালত ।
2014 সালের 12 ডিসেম্বর । টিউশন পড়ে সাইকেলে চেপে গৃহশিক্ষিকার বাড়ি থেকে ফিরছিল কিশোরী । সেই সময়, তাকে অপরহরণ করে গৌরব মণ্ডল ওরফে শানু, কৌশিক মালিক ও স্বরূপ মজুমদার । জোর করে কিশোরীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে । ভয়ে চিৎকার করতে থাকে কিশোরী । অবস্থা বেগতিক বুঝে তাকে জোর করে খানিক দূরে এক ইটভাটার পিছনে টেনে নিয়ে যায় তিনজন । পরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে । এদিকে খোঁজ শুরু হয় কিশোরীর বাড়ির তরফে । মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি মেয়েকে। পরে সেই ফোন থেকেই কিশোরীর বাবার কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে শানুরা । এখানেই শেষ নয় । মৃতদেহের সঙ্গে ধর্ষণ করে তারা । যাবতীয় প্রমাণ ধুয়ে মুছে সাফ করতে সেই রাতেই মৃতদেহটি একটি বস্তায় ভরে গঙ্গার ধারে পুঁতে ফেলে ।
পরদিন বলাগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কিশোরীর বাবা । তদন্তে নেমে সেদিনই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । গঙ্গার পার থেকে উদ্ধার হয় মৃতদেহ । ময়নাতদন্তে জানা যায়, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় কিশোরীকে । খুনের পর মৃতদেহের সঙ্গে ধর্ষণ করা হয় । ধৃতদের বিরুদ্ধে 363,364/A,376(2),302,201,34 ও 6 POCSO ধারায় মামলা দায়ের হয় । শুরু হয় মামলার শুনানি । গতকাল চুঁচুড়া আদালতের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেশন জাজ (সেকেন্ড কোর্ট) মানসরঞ্জন সান্যাল গৌরব মণ্ডল ও কৌশিক মালিককে দোষী সাব্যস্ত করেন । অপরাধের সময় স্বরূপ মজুমদারের বয়স 18 বছরের নিচে ছিল, তাই জুভেনাইল আদালতে তার বিচার চলছে ।
নাবিলিকার তরফে আইনজীবী সুব্রত গুছাইত জানান, উত্তর বাসুদেবপুরের পাশের গ্রামের তিনজন নাবিলকাকে অপহরণ করে খুন করে । গতকাল চুঁচুড়া আদালত দোষী সাব্যস্ত করে তাদের । দোষীদের যাবজ্জীবন অথবা সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড হতে পারে । 27 তারিখ রায় দেওয়ার দিন তাদের বক্তব্যও শোনা হবে ।
নাবালিকার বাবা জানান, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সাজার জন্য অপেক্ষা করছি । বারবার ফাঁসির দাবি জানিয়েছি । নাবালক স্বরূপ মজুমদার এই মামলা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে । যতক্ষণ না দোষীদের ফাঁসি হচ্ছে ততক্ষণ আমার শান্তি নেই । সাজা ঘোষণার পরও হাইকোর্ট থেকে যেন এরা ছাড়া না পায় তারজন্যই আমার পাঁচ বছরের লড়াই ।