লালবাগ, 19 সেপ্টেম্বর: মুর্শিদাবাদের মুকুটে নয়া পালক ৷ কেন্দ্রের এগ্রি ট্যুরিজম বিভাগ বড়নগরকে দিল সেরা ট্যুরিজম ভিলেজের স্বীকৃতি । মাত্র এক বছর আগে মুর্শিদাবাদের একমাত্র সতীপীঠ কিরীটেশ্বরী গ্রামকে কেন্দ্র পর্যটন দফতর সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি দিয়েছে । ঢেলে সাজছে কিরীটেশ্বরী । ফের জেলা পেল আরও এক কেন্দ্রীয় স্বীকৃতি ।
I am delighted to share that Baranagar village in Murshidabad district has been selected as the 'Best Tourism Village' in the Agri-Tourism category by the Ministry of Tourism, Government of India.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 19, 2024
The award will be presented on World Tourism Day on 27th September.
Let’s…
ভাগীরথী নদীর তিরে অবস্থিত শস্যশ্যামলা বড়নগর গ্রাম । একসময় বড়নগরকে ‘দ্বিতীয় বারাণসী’ বলা হত । এখানেও গঙ্গা বারাণসীর মতো উত্তরবাহিনী । আঠারোশো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নাটোরের রানি ভবানী এখানে বাল্যবিধবা মেয়েকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন । বহু মন্দির নির্মাণ করতে শুরু করেন । তাঁর সাধ ছিল বড়নগরকে দ্বিতীয় বারাণসীর আদলে গড়ে তোলার । শুরু হয় মন্দির প্রতিষ্ঠা । তার মধ্যে অন্যতম হল টেরাকোটা চারবাংলা শিব মন্দির, গঙ্গেশ্বর মন্দির, ভবানীশ্বর মন্দির, জোড়াবাংলা মন্দির, রাজ রাজেশ্বরী মন্দির, উদয়নারায়ণের গৃহদেবতা মন্দির, মদনগোপালের মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির ।
মন্দির পরিবেষ্টিত গ্রামে 108টি শিবমন্দির স্থাপনের উদ্দেশে কাজ শুরু করেন রানি ভবানী । এখানকার ভবানী মন্দিরের ছাদ উলটানো পদ্মের মতো দেখতে । এই নকশার মন্দির খুব কমই দেখা যায় । মন্দিরগুলির বেশিরভাগ রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ ও ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের অধীনে রয়েছে । মন্দিরগুলি টেরাকোটা ও চুনের অলঙ্কারে সজ্জিত ।
ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, রানি ভবানী বাল্য বিধবা তারা সুন্দরীকে পূজা-অর্চনার মধ্যে ব্যস্ত রাখতেই দ্বিতীয় বারাণসী তৈরির স্বপ্ন দেখেন । ঢাকা থেকে এসে বসবাস শুরু করেন ভাগীরথীর তিরে বড়নগরে । জনশ্রুতি রয়েছে, অপূর্ব সুন্দরী তারা নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার নজরে চলে আসে । তারা সুন্দরী প্রাসাদের ছাদে চুল শুকোচ্ছিলেন । কথিত আছে, নবার সিরাজউদৌল্লা তাঁর সামনে ভাগীরথীতে দু’দিন বজরায় নোঙর ফেলে কাটান । মেয়ের উপর সিরাজের নজর পড়েছে, এই আতঙ্কে মেয়েকে নিয়ে বড়নগর ছাড়েন রানি ভবানী । এক আত্মীয়ের সাহায্যে তারা সুন্দরীকে পাঠিয়ে দেন কাশিতে । সেখানেই শেষ হয় বড়নগরকে বারাণসী বানানোর স্বপ্ন ।
বড়নগরের সঙ্গে ইতিহাসের বহু অধ্যায় জড়িত রয়েছে । ধ্বংসপ্রায় মন্দির সংস্কার ও হেরিটেজের দাবিতে গ্রামবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বহুদিন থেকে প্রশাসনের কাছে দরবার জানিয়ে আসছিলেন । গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বড়নগর মুর্শিদাবাদের অন্যতম ঐতিহ্য । বহুদিন ধরে হেরিটেজে ভিলেজের দাবি জানিয়ে আসছিলাম । সেরা পর্যটন গ্রামের তকমা মেলায় খুশি গ্রামবাসীরা ।’’