হুগলি, 11 জুলাই : সুসজ্জিত রথে (Rath Yatra 2021) সওয়ার জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রা ৷ তিন বিগ্রহকে নিয়ে রথ নিয়ে যাচ্ছেন সহিস ৷ সেটিও অবশ্য একটি মূর্তি ৷ তবে 22 ফুট লম্বা এই রথ কাঠের নয়, ফাইবারের তৈরি ৷ পরিবেশ রক্ষায় কাঠের পরিবর্তে ফাইবারের রথ তৈরির কথা মাথায় আসে হুগলির (Hooghly) পোলবা রাজহাটের রথতলা বারোয়ারি কমিটির ৷ যেই ভাবা সেই কাজ ৷ শুরু হয়ে যায় ফাইবারের রথ তৈরি ৷ এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ৷ তুলনায় হাল্কা এই রথ যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনই দীর্ঘমেয়াদি ৷ আর নতুন এই ভাবনায় কমেছে খরচও ৷ ফলে করোনা আবহে যা খুবই কার্যকরী হয়েছে ফাইবার সংস্থার কাছে ৷
হিন্দু মতে, পুণ্য অর্জনে রথের রশিতে টান দিতে ভিড় জমান ভক্তরা । বহুকাল আগে থেকেই পুরীর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা হয়ে আসছে । কাঠের রথে চড়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ওড়িশার জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসির বাড়ি যাত্রা করেন । ওড়িশার পাশাপাশি বাংলাতেও কোথাও কাঠের কোথাও বা বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি রথের প্রচলন করেছিলেন রাজা ও জমিদাররা । মাহেশ, গুপ্তিপাড়া, মহিষাদল-সহ একাধিক প্রচলিত রথযাত্রা পালন করা হয় ।
তৎকালীন সময়ে কাঠের বড় বড় চাকা ও নানা চারুশিল্প দিয়ে তৈরি করা হত জগন্নাথ দেবের রথ । এ ছাড়াও লোহা, তামা, পিতল, রুপোর মত ধাতু দিয়ে রথের উপর ফুটিয়ে তোলা হতো দেবদেবীর মূর্তি । বর্তমানে কাঠের জোগান কম ৷ দামও আকাশছোঁয়া ৷ তামা, পিতল ও অন্যান্য ধাতুর অবস্থাও তথৈবচ ৷ তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাঠ ও ধাতু সরিয়ে ফাইবারের রথ তৈরি করেছে রাজহাট রথতলা বারোয়ারি ।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ জয়ন্তীতে রথে নয়, গাড়িতে করেই মাসির বাড়ি যাবেন ইসকনের জগন্নাথ
লোহার কাঠামোর উপর ফাইবারের কারুকাজ করা রথ বানিয়েছে রাজহাটের নেহা ফ্যাব্রিকেশন নামে একটি সংস্থা । এরা বিভিন্ন ধরনের ফাইবারের মডেল ও কারখানার ফাইবারের কাজ করে থাকে । এ ছাড়াও চন্দননগরের আলোক শিল্পের ফাইবার বোর্ড তৈরি করে । তবে করোনা আবহে কাজ আসছে হাতে গোনা ৷ তাই রথযাত্রার আগে তারা নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ৷ ফাইবারের উপর নকশা করে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা-সহ নানা ধরনের থ্রিডি পুতুল তৈরি করা হয়েছে । জগন্নাথ দেবের সিংহাসন, চূড়া ও রথের গায়ে তুলে ধরা হয়েছে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতি ৷ রয়েছে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের মূর্তিও ।
এই রথ তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা । রাজহাট রথকমিটির সদস্যদের দাবি, 60 বছরের বেশি সময় ধরে এই রথের রশিতে টান পড়ছে ৷ কাঠের রথেই হতো নানা কারুকাজ ৷ কিন্তু সময়ের দাবি মেনে পরিবেশ রক্ষায় ও কাঠের দুর্মূল্যের বাজারে নতুন করে রথ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না । রথের সৌন্দর্যায়নের জন্য এবং টেকসই করতে ফাইবারের রথই তৈরির করার মাথায় আসে আয়োজকদের ৷ তাঁরা রাজহাটের ফাইবারের মডেল তৈরির কারখানার কর্ণধারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন : রথের দড়ি টানতে করোনা টিকার দু'টি ডোজ় বাধ্যতামূলক, লাগবে আরটিপিসিআর রিপোর্টও
রাজহাট রথতলা বারোয়ারি কমিটির কর্মকর্তা সরোজ নিয়োগী জানালেন, "কাঠের রথ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এখানে ফাইবারের মডেল তৈরি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করি । কাঠের যেমন খরচ প্রচুর বেড়েছে, তেমনই সেগুলি দীর্ঘস্থায়ীও হচ্ছে না । সেই কারণে ফাইবারের রথ করার চিন্তাভাবনা । এই রথ দীর্ঘকাল চলবে ৷ সেই জন্যই এই ধরনের রথ করলাম ৷ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রথের পুজো বিধি মেনেই করা হবে । এই ধরনের রথ দেখে মানুষের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে ৷"
রাজহাটের ফাইবার কোম্পানির কর্ণধার প্রসূন কুমার মিত্র বলেন, "এই রথে লোহার উপর ফাইবারের সিট ও মডেল তৈরি করা হয়েছে । লকডাউনে কারখানাগুলি যে ভাবে ধুঁকছে সেই দিকে তাকিয়ে আমি এবং আমার শ্রমিকরা এই রথের অর্ডারে অনেকেই উপকৃত হয়েছি । কাঠ মিলছে না ৷ দাম অনেক বেড়েছে ৷ তাছাড়াও ফাইবারের রথ তৈরিতে পরিবেশ রক্ষাও হচ্ছে ৷ স্কুল এবং পঞ্চায়েতের বিভিন্ন ধরনের পার্কে ফাইবারের জিনিসপত্র আমরা বানাই । বিভিন্ন কারখানার ওয়ার্কশপের ফাইবার মডেল তৈরি করি । তবে ফাইবারের রথের মতো এই ধরনের কাজ হুগলি জেলা কেন, গোটা রাজ্যে কোথাও হয়নি ৷ এই রথ বানাতে কাঠের রথের থেকে অনেক কম খরচ হয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: মোদি ক্যাবিনেটে স্বল্পশিক্ষিত নিশীথ, সবথেকে বেশি মামলায় অভিযুক্ত বার্লা
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের রেশ এখনও কাটেনি ৷ এরপর তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য তৈরি হচ্ছে রেশ ৷ এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ রথযাত্রার কর্মসূচিই পরিবর্তন করা হয়েছে । বিধি মেনেই রথ চালাবে রাজহাটও ৷ বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ এই রথের দড়ি ধরবেন । ফাইবারের রথের নয়া ভাবনায় উৎসাহের আমেজ রাজহাটে ৷