ETV Bharat / state

গোখাদ্যের দাম বাড়লেও কমেছে বিক্রি, কোরোনা আবহে ক্ষতির মুখে দুধ ব্যবসায়ীরা - cow farmers face huge losses due to milk production in Corona and Lockdown

বর্তমান পরিস্থিতিতে দুধের দাম পাচ্ছেন না গোয়ালা থেকে শুরু করে দুধ ব্যবসায়ীরা । ধসে পড়ছে দুগ্ধ ব্যবসা ৷ ক্ষতির মুখে গোয়ালারা ৷

cow farmers face huge losses due to milk production in Corona and Lockdown
কোরোনা ও লকডাউনে দুধ উৎপাদন নিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে গোচাষিরা
author img

By

Published : Aug 16, 2020, 6:57 PM IST

রিষড়া, 16 অগাস্ট : দীর্ঘ লকডাউনে সমস্যায় পড়েছিলেন গোয়ালা থেকে দুধ ব্যবসায়ীরা । লকডাউন উঠলেও কোরোনা আতঙ্ক থেকে রেহাই নেই মানুষের । ট্রেন ও বাস চলাচল কার্যত বন্ধ । হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলছে । তার মধ্যে ডেয়ারি ও মিষ্টির দোকানগুলিতে দুধের চাহিদা না থাকায় বিক্রি নেই বললেই চলে । এদিকে সপ্তাহে দু'দিন লকডাউন ও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সমস্যায় পড়েছেন দুধ ব্যবসায়ীরা।

হুগলি জেলায় বিভিন্ন খাটালে হয় দুধ উৎপাদন। ব্যান্ডেল থেকে উত্তরপাড়া ও ডানকুনিসহ জেলার বেশ কয়েক জায়গায় হাজার খানেক খাটাল আছে । এখান থেকেই গোরু ও মোষের দুধ চলে যায় রাজ্যের ডেয়ারিগুলিতে । এছাড়াও বাকি দুধ শহরতলির বিভিন্ন মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ হয় । বাকি দুধ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন গোয়ালারা ।

কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুধের দাম পাচ্ছেন না গোয়ালা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা । 15 থেকে 20 টাকা লিটার দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা । এদিকে বাড়ছে খড় ও গো-খাদ্যের দাম । সারাদিন খাটালগুলিতে খেটেও নিজেদের রুটির জোগাড় হচ্ছে না । বাধ্য হয়ে মোষ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে । আগামীদিনে এভাবে চলতে থাকলে খাটালগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে । দুধের উৎপাদনও কমে যাবে ।

হুগলিতে সরকারিভাবে 54 টি সমবায়ের মাধ্যমে মাদার ও সেন্ট্রাল ডেয়ারিকে প্রতিদিন 18 হাজার কেজি দুধের জোগান দেওয়া হয় । সমবায়ের বাইরে কয়েক হাজার খাটাল আছে । সেখান থেকে কয়েক হাজার কেজি দুধ উৎপাদন হয় । তাতে দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয় । খাটালগুলিতে এক একটি মোষ 8 থেকে 10 কেজি করে দুধ দেয় । ভদ্রেশ্বরেই সাড়ে 3 হাজার গোরু ও মোষ আছে । মোষপিছু খরচ হয় দিনে 350 টাকা । গোরু-মোষের খাবার বলতে খড় । কিন্তু আগে যে খড়ের দাম ছিল 4 টাকা, এখন তা 10 টাকায় পৌঁছেছে । শুধুমাত্র ভদ্রেশ্বরেই দুধ সংগ্রহের জন্য 5 টি ডেয়ারি কাউন্টার আছে । প্রতিটি কাউন্টারে 1600 লিটার দুধ নেওয়া হয় । যার প্রতি লিটারে 100 ফ্যাট থাকলেই দুধ ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন 60.50 টাকা । লকডাউনের আগে লিটার প্রতি 65 টাকা পেতেন তাঁরা ।

হুগলিতে রিষড়া নয়া বস্তী, উত্তরপাড়ার মাখলা, চাঁপাদানি কলা বাগান, ভদ্রেশ্বর গেটবাজার, খুঁড়ি গাছি, ব্যান্ডেল, গোন্দোল পাড়া, ভদ্রেশ্বর বিঘাটি, ডানকুনি ও আদি সপ্তগ্রামসহ একাধিক জায়গার খাটালে কয়েক হাজার গোয়ালা আছেন । আর এই জেলা থেকেই মাদার ডেয়ারি, মেট্রো ডেয়ারি-র মতো ডেয়ারি সংস্থাগুলিতে দুধ সরবরাহ করা হয় । কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার লিটার দুধ , মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে না । বেশিরভাগ দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন কম । বাধ্য হয়ে খাটালের গোয়ালা থেকে ব্যবসায়ীদের নিজের এলাকায় 20 টাকা করে প্রতি লিটারে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে । তাতেই গোখাদ্য ও ওষুধ কিনতে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে তাঁদের । নিজেদের সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে । একরকম খেতে না দিতে পেরে গোরু ও মোষ বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক গোয়ালা । আশঙ্কা, অধিকাংশ খাটাল বন্ধ করে দিতে হবে ।

এক গোয়ালা নারায়ণ রায় বলেন, " এখন আমরা প্রচুর সমস্যায় পড়েছি । খড় বিচালি ও গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে । অন্যদিকে, দাম কমছে দুধের । দুধ বিক্রির জন্য অনেক দূর হেঁটে যেতে হচ্ছে আমাদের । কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা নেই । বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল । তার উপর সপ্তাহে দু'দিন লকডাউনের ফলে আরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । গোরু-মোষের খাবার জোগাড় করতে পারছি না । আমরা বাধ্য হয়ে বিক্রি করছি গোরু ও মোষ । লকডাউনের মধ্যে দুধ বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে । আমাদের দুধের উপর লকডাউনে ছাড় ছিল । কিন্তু এবারের লকডাউনে ছাড় পাচ্ছি না আমরাও । "

অন্য আরও এক গোয়ালা মনোজ কুমার যাদব বলেন, " যখন থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে । আমাদের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছে । তার উপর বিচালি ও গোখাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী । লকডাউনে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গোরুর খাবার কিনতে ৷ নিজেদের ঘর থেকে 10 - 20 হাজার টাকা বাড়তি দিতে হয়েছে । আবারও যদি নতুন করে এইভাবে লকডাউন শুরু হতে থাকে । তাহলে গোয়ালাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে । সরকারের কাছে আমাদের দাবি, লকডাউন উঠিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করুক । "

ডেয়ারি কালেকশন সেন্টারের এক ব্যবসায়ী অনিল তাঁতী বলেন, " এই কাউন্টারে 12 থেকে 15 জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুধ নেওয়া হয় । আগে 800 লিটার দুধ সংগ্রহ হত । বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে 1600 লিটারে । এখানে দুধের ফ্যাট মেপে চাষিদের টাকা দেওয়া হয় । লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ । তাই ডেয়ারিগুলিতে দুধের জোগান বেশি যাচ্ছে । কিন্তু এত বেশি পরিমাণে দুধ উৎপাদন হচ্ছে তার ফলে ডেয়ারি কম্পানিগুলিই দুধ নিতে অস্বীকার করছে । সরকারের কাছে আমাদের দাবি , সমস্ত ডেয়ারি যাতে বেশি পরিমাণে দুধ নিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে । এছাড়া উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে উন্নতমানের গোরু কেনা যাচ্ছে না এই পরিস্থিতিতে । যার কারণে আগামী বছরেও এই ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে । দুধের জোগান বেশি । এই দুধ কোনওভাবেই কাজে লাগানো যাচ্ছে না ৷ তার ফলে দুধ ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন গোয়ালারা । "

ক্ষতির মুখে গোয়ালারা

হুগলির প্রাণী সম্পদ আধিকারিক রূপম বড়ুয়া বলেন, " সারা বছর দুধের চাহিদা থাকে । কিন্তু, লকডাউনের জন্য মনে হচ্ছে দুধের উৎপাদন বেশি । ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে দুধ, ছানা ও পনির ব্যবসায়ীরা যেতে পারছেন না ৷ তাই দুধও বিক্রি হচ্ছে না । হুগলি ও হুগলির পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেই ডেয়ারি শিল্পগুলি আছে ৷ তাই বিরাট অংশের দুধ হুগলি থেকেই জোগান দেওয়া হয় । মিষ্টি ও চা তৈরিতে যে পরিমাণ দুধ জোগান হত তা এখন অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে । গোখাদ্যের দাম বেড়েছে । আমাদের তরফে সমবায়ের সদস্যদের জন্য গোখাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে । "

দামোদর মিল্ক ইউনিয়নের হুগলি জেলার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিপ্লব কুণ্ডু বলেন, " গোটা হুগলি জেলায় মিল্ক ইউনিয়নের মোট 54টি সমবায় আছে । এখান থেকেই মেট্রো এবং সেন্ট্রাল গাড়িতে 18 হাজার কেজি দুধের জোগান দেওয়া হয় প্রতিদিন । বর্তমানে দুধের দাম প্রতি কেজি 4.5 শতাংশ ফ্যাট অনুযায়ী 30 টাকা করে পাচ্ছেন গোয়ালারা । দুধের বিপণন ব্যবস্থা বন্ধের ফলে জোগানটা বেশি হচ্ছে । বেসরকারি ডেয়ারিগুলি বিপণনের জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দুধ নেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে । সরকারিভাবে মেন ফেডারেশনের আন্ডারে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাকে একটি কোটা ঠিক করে দেওয়া হয় । যেমন - মাদার ডেয়ারি দেড় লাখ লিটার দুধ নিতে পারবে সেই অনুযায়ী নিদিষ্ট করা থাকে । তা বাড়ানো কোনওভাবেই সম্ভব নয় । তাই এখনও পর্যন্ত ডেয়ারিতে দুধের পরিমাণ বাড়ানো হয়নি । প্রয়োজন থাকলেই বাড়ানো হয়, তাছাড়া নয় । তবে মিল্ক ইউনিয়নের তরফে সমবায়গতভাবে কোনওদিন কালেকশন বন্ধ রাখা হয়নি হুগলি জেলায় । "

রিষড়া, 16 অগাস্ট : দীর্ঘ লকডাউনে সমস্যায় পড়েছিলেন গোয়ালা থেকে দুধ ব্যবসায়ীরা । লকডাউন উঠলেও কোরোনা আতঙ্ক থেকে রেহাই নেই মানুষের । ট্রেন ও বাস চলাচল কার্যত বন্ধ । হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলছে । তার মধ্যে ডেয়ারি ও মিষ্টির দোকানগুলিতে দুধের চাহিদা না থাকায় বিক্রি নেই বললেই চলে । এদিকে সপ্তাহে দু'দিন লকডাউন ও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সমস্যায় পড়েছেন দুধ ব্যবসায়ীরা।

হুগলি জেলায় বিভিন্ন খাটালে হয় দুধ উৎপাদন। ব্যান্ডেল থেকে উত্তরপাড়া ও ডানকুনিসহ জেলার বেশ কয়েক জায়গায় হাজার খানেক খাটাল আছে । এখান থেকেই গোরু ও মোষের দুধ চলে যায় রাজ্যের ডেয়ারিগুলিতে । এছাড়াও বাকি দুধ শহরতলির বিভিন্ন মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ হয় । বাকি দুধ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন গোয়ালারা ।

কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুধের দাম পাচ্ছেন না গোয়ালা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা । 15 থেকে 20 টাকা লিটার দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা । এদিকে বাড়ছে খড় ও গো-খাদ্যের দাম । সারাদিন খাটালগুলিতে খেটেও নিজেদের রুটির জোগাড় হচ্ছে না । বাধ্য হয়ে মোষ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে । আগামীদিনে এভাবে চলতে থাকলে খাটালগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে । দুধের উৎপাদনও কমে যাবে ।

হুগলিতে সরকারিভাবে 54 টি সমবায়ের মাধ্যমে মাদার ও সেন্ট্রাল ডেয়ারিকে প্রতিদিন 18 হাজার কেজি দুধের জোগান দেওয়া হয় । সমবায়ের বাইরে কয়েক হাজার খাটাল আছে । সেখান থেকে কয়েক হাজার কেজি দুধ উৎপাদন হয় । তাতে দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয় । খাটালগুলিতে এক একটি মোষ 8 থেকে 10 কেজি করে দুধ দেয় । ভদ্রেশ্বরেই সাড়ে 3 হাজার গোরু ও মোষ আছে । মোষপিছু খরচ হয় দিনে 350 টাকা । গোরু-মোষের খাবার বলতে খড় । কিন্তু আগে যে খড়ের দাম ছিল 4 টাকা, এখন তা 10 টাকায় পৌঁছেছে । শুধুমাত্র ভদ্রেশ্বরেই দুধ সংগ্রহের জন্য 5 টি ডেয়ারি কাউন্টার আছে । প্রতিটি কাউন্টারে 1600 লিটার দুধ নেওয়া হয় । যার প্রতি লিটারে 100 ফ্যাট থাকলেই দুধ ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন 60.50 টাকা । লকডাউনের আগে লিটার প্রতি 65 টাকা পেতেন তাঁরা ।

হুগলিতে রিষড়া নয়া বস্তী, উত্তরপাড়ার মাখলা, চাঁপাদানি কলা বাগান, ভদ্রেশ্বর গেটবাজার, খুঁড়ি গাছি, ব্যান্ডেল, গোন্দোল পাড়া, ভদ্রেশ্বর বিঘাটি, ডানকুনি ও আদি সপ্তগ্রামসহ একাধিক জায়গার খাটালে কয়েক হাজার গোয়ালা আছেন । আর এই জেলা থেকেই মাদার ডেয়ারি, মেট্রো ডেয়ারি-র মতো ডেয়ারি সংস্থাগুলিতে দুধ সরবরাহ করা হয় । কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার লিটার দুধ , মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে না । বেশিরভাগ দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন কম । বাধ্য হয়ে খাটালের গোয়ালা থেকে ব্যবসায়ীদের নিজের এলাকায় 20 টাকা করে প্রতি লিটারে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে । তাতেই গোখাদ্য ও ওষুধ কিনতে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে তাঁদের । নিজেদের সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে । একরকম খেতে না দিতে পেরে গোরু ও মোষ বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক গোয়ালা । আশঙ্কা, অধিকাংশ খাটাল বন্ধ করে দিতে হবে ।

এক গোয়ালা নারায়ণ রায় বলেন, " এখন আমরা প্রচুর সমস্যায় পড়েছি । খড় বিচালি ও গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে । অন্যদিকে, দাম কমছে দুধের । দুধ বিক্রির জন্য অনেক দূর হেঁটে যেতে হচ্ছে আমাদের । কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা নেই । বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল । তার উপর সপ্তাহে দু'দিন লকডাউনের ফলে আরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । গোরু-মোষের খাবার জোগাড় করতে পারছি না । আমরা বাধ্য হয়ে বিক্রি করছি গোরু ও মোষ । লকডাউনের মধ্যে দুধ বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে । আমাদের দুধের উপর লকডাউনে ছাড় ছিল । কিন্তু এবারের লকডাউনে ছাড় পাচ্ছি না আমরাও । "

অন্য আরও এক গোয়ালা মনোজ কুমার যাদব বলেন, " যখন থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে । আমাদের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছে । তার উপর বিচালি ও গোখাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী । লকডাউনে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গোরুর খাবার কিনতে ৷ নিজেদের ঘর থেকে 10 - 20 হাজার টাকা বাড়তি দিতে হয়েছে । আবারও যদি নতুন করে এইভাবে লকডাউন শুরু হতে থাকে । তাহলে গোয়ালাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে । সরকারের কাছে আমাদের দাবি, লকডাউন উঠিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করুক । "

ডেয়ারি কালেকশন সেন্টারের এক ব্যবসায়ী অনিল তাঁতী বলেন, " এই কাউন্টারে 12 থেকে 15 জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুধ নেওয়া হয় । আগে 800 লিটার দুধ সংগ্রহ হত । বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে 1600 লিটারে । এখানে দুধের ফ্যাট মেপে চাষিদের টাকা দেওয়া হয় । লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ । তাই ডেয়ারিগুলিতে দুধের জোগান বেশি যাচ্ছে । কিন্তু এত বেশি পরিমাণে দুধ উৎপাদন হচ্ছে তার ফলে ডেয়ারি কম্পানিগুলিই দুধ নিতে অস্বীকার করছে । সরকারের কাছে আমাদের দাবি , সমস্ত ডেয়ারি যাতে বেশি পরিমাণে দুধ নিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে । এছাড়া উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে উন্নতমানের গোরু কেনা যাচ্ছে না এই পরিস্থিতিতে । যার কারণে আগামী বছরেও এই ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে । দুধের জোগান বেশি । এই দুধ কোনওভাবেই কাজে লাগানো যাচ্ছে না ৷ তার ফলে দুধ ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন গোয়ালারা । "

ক্ষতির মুখে গোয়ালারা

হুগলির প্রাণী সম্পদ আধিকারিক রূপম বড়ুয়া বলেন, " সারা বছর দুধের চাহিদা থাকে । কিন্তু, লকডাউনের জন্য মনে হচ্ছে দুধের উৎপাদন বেশি । ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে দুধ, ছানা ও পনির ব্যবসায়ীরা যেতে পারছেন না ৷ তাই দুধও বিক্রি হচ্ছে না । হুগলি ও হুগলির পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেই ডেয়ারি শিল্পগুলি আছে ৷ তাই বিরাট অংশের দুধ হুগলি থেকেই জোগান দেওয়া হয় । মিষ্টি ও চা তৈরিতে যে পরিমাণ দুধ জোগান হত তা এখন অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে । গোখাদ্যের দাম বেড়েছে । আমাদের তরফে সমবায়ের সদস্যদের জন্য গোখাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে । "

দামোদর মিল্ক ইউনিয়নের হুগলি জেলার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিপ্লব কুণ্ডু বলেন, " গোটা হুগলি জেলায় মিল্ক ইউনিয়নের মোট 54টি সমবায় আছে । এখান থেকেই মেট্রো এবং সেন্ট্রাল গাড়িতে 18 হাজার কেজি দুধের জোগান দেওয়া হয় প্রতিদিন । বর্তমানে দুধের দাম প্রতি কেজি 4.5 শতাংশ ফ্যাট অনুযায়ী 30 টাকা করে পাচ্ছেন গোয়ালারা । দুধের বিপণন ব্যবস্থা বন্ধের ফলে জোগানটা বেশি হচ্ছে । বেসরকারি ডেয়ারিগুলি বিপণনের জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দুধ নেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে । সরকারিভাবে মেন ফেডারেশনের আন্ডারে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাকে একটি কোটা ঠিক করে দেওয়া হয় । যেমন - মাদার ডেয়ারি দেড় লাখ লিটার দুধ নিতে পারবে সেই অনুযায়ী নিদিষ্ট করা থাকে । তা বাড়ানো কোনওভাবেই সম্ভব নয় । তাই এখনও পর্যন্ত ডেয়ারিতে দুধের পরিমাণ বাড়ানো হয়নি । প্রয়োজন থাকলেই বাড়ানো হয়, তাছাড়া নয় । তবে মিল্ক ইউনিয়নের তরফে সমবায়গতভাবে কোনওদিন কালেকশন বন্ধ রাখা হয়নি হুগলি জেলায় । "

For All Latest Updates

TAGGED:

hoogly
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.