বালুরঘাট, 22 অক্টোবর : যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবকিছু এখন ডিজিটাল । বর্তমানে ডিজিটাল আলোকসজ্জার কাছে হেরে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাটির প্রদীপ । প্রদীপ বানিয়ে আর সেরকম লাভ হয় না বললেই চলে । তবে, পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ধরে রাখতে আজও মাটির প্রদীপ তৈরি করেন বালুরঘাট ব্লকের মাহিনগর এলাকার কুমোররা । নতুন প্রজন্ম এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন । কিন্তু যতদিন বেঁচে আছেন মাটির প্রদীপই তৈরি করবেন বলে জানাচ্ছেন কুমোররা ।
দীপাবলি মানেই আলোর রোশনাই । একটা সময় ছিল যখন দীপাবলিতে মাটির প্রদীপই ব্যবহার করত সবাই । সে সময় প্রদীপের চাহিদা ছিল তুঙ্গে । কুমোররা তখন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে প্রদীপ বানাতেন । কিন্তু সময় পালটেছে । সময় কমেছে মানুষের । বছর কয়েক আগে হঠাৎই বাজারে চায়না টুনি আসে ৷ তারপর থেকে বাজার মাটির প্রদীপের বাজার পড়ে যায় । যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে বর্তমান বাজার দখল করেছে এলইডি আলো । এখন নেহাতই নিয়ম পালনের জন্য অল্প কিছু মাটির প্রদীপ কেনে সাধারণ মানুষ । মাটির প্রদীপ বেচে লাভও হয় না সেভাবে । হাজার চেষ্টা করেও মৃতপ্রায় মাটির প্রদীপকে, এই শিল্পকে আর আগের জায়গায় ফেরানো সম্ভব হয়নি ।
তবে, চাহিদা কমলেও এখনও দীপাবলিতে বাড়তি প্রদীপ তৈরি করেন বালুরঘাট ব্লকের মাহিনগর এলাকার কুমোররা । দুর্গাপুজার পর থেকেই এবারও তারা মাটির প্রদীপ তৈরি করছেন । মাটি থেকে সবকিছুই কেনা । একটা প্রদীপ তৈরি করে তাকে বাজারজাত করতেও একটা প্রদীপের জন্য খরচ পড়ে প্রায় 40 থেকে 50 পয়সা । যা একই দামে পাইকারি রেটে বিক্রি হয় । খুচরো হাতে বিক্রি করলে একটি প্রদীপ 75 পয়সা থেকে 1 টাকায় বিক্রি হয় । প্রদীপ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা যায় না বললেই চলে । পুরোনো ঐতিহ্য আর এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আজও তারা প্রদীপ বানিয়ে আসছেন । তবে তাদের পর নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আর আসছে না । তাই তারা এখন লাভের আশায় নয় নিজের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মাটির প্রদীপ তৈরি করছেন ।
এবিষয়ে কুমোর সুদেবচন্দ্র পাল জানান, আগের মতো আর প্রদীপের চাহিদা নেই । বাজারে ছেয়ে গেছে চায়নার নানা এলইডি লাইট । তাদের সঙ্গে মাটির তৈরি প্রদীপ টেক্কা নিতে পারছে না । আগে একজন 100 থেকে 200 টি করে মাটির প্রদীপ নিত । আর সেখানে এখন চার থেকে পাঁচটা বা খুব বেশি হলে দশটা করে নেয় । যতটুকু না দিলে নয় । তারা কালীপুজোর জন্য একটু বেশি করেই প্রদীপ তৈরি করেন । তাদের ছেলেরা এইসব করেন না । যতদিন পারবেন পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন ।
এবিষয়ে প্রদীপ নিতে আসা অমিত সরকার জানান, এখন এলইডি লাইট দেখতে বেশি ভালো লাগে । তার উপর একবার কিনলে কয়েক বছর তা চলে যায় । ঝুট ঝামেলা তেমন নেই । তাই সকলেই মাটির প্রদীপ না কি এলইডি লাইট কিনছে ।