বারুইপুর, ২২ ফেব্রুয়ারি : বন্ধু ও বান্ধবীদের হেনস্থার প্রতিবাদ করায় এক যুবককে মারধর ও বিষ খাইয়ে খুনের অভিযোগ স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে। বারুইপুর থানার কল্যাণপুর ত্রিপুরানগর এলাকার ঘটনা। মৃতের নাম অরুণ বিশ্বাস(২৮)। এম আর বাঙুর হাসপাতালে মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনায় পাপ্পু বিশ্বাস, দীপু বিশ্বাসসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর পরিবার।
মৃতের পরিবারের বক্তব্য, ১৪ তারিখ বারুইপুর থানার কল্যাণপুরের ত্রিপুরানগর এলাকায় অরুণের বাড়িতে তাঁর দুই বন্ধু ও দুই বান্ধবী আসেন। পেশায় ডাব বিক্রেতা অরুণ সে সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। অভিযোগ, বন্ধুরা অরুণের বাড়িতে ঢোকার আগেই স্থানীয় খেয়ালি সংঘ নামে একটি ক্লাবের একদল যুবক এসে তাঁদের পথ আটকায়। তার পরে ওই চার জনকে ক্লাবঘরে ডেকে নিয়ে যায় তারা। অভিযোগ, সেখানে ওই চার জনের কাছ থেকে নগদ টাকা চায় ক্লাবের ছেলেরা। টাকা না পেয়ে মারধর করা হয়। এরপর অরুণের দুই বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও বান্ধবীদের আটকে রাখা হয়। ছাড়া পাওয়া বন্ধুদের থেকে খবর পেয়ে অরুণ ক্লাবে যায়। ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর করা হয়। আর মেয়ে দুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর অরুণ দুই বান্ধবীর খোঁজ নিতে স্টেশনে যায়। সেইসময় স্টেশনে গিয়ে ফের মারধর করা হয়। তারপর বাড়িতে ফেলে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। তখন স্থানীয়দের কথায় তারা বলে, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে অরুণকে। তারপর তুলে নিয়ে যায়। রাতে ফের ঘরে পৌঁছে দেয়। কয়েকঘণ্টা পর বুক জ্বালা করে অরুণের। তখন তাঁকে প্রথমে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে আনা হয়। বুধবার সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।
মৃতের ভাই সন্তু বিশ্বাস বলেন, দাদা হাসপাতালে বলেছিল পুলিশ এলে ওদের একটা জিনিস দিয়ে যাব। তারপর মৃত্যুর পর লুঙ্গির মধ্যে মোবাইল পাই। মোবাইল ঘাঁটতে গিয়ে একটা ভিডিয়ো দেখি। সেখানে দাদা নিজের কথা বলেছে। সেই ভিডিয়ো দেখে মনে হচ্ছে, দাদাকে ওরা বিষ খাইয়েছে।
ওই ভিডিয়োতে ক্লাব সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করতে দেখা গেছে অরুণকে। ভিডিয়োতে তিনি বলেন, "আমার স্ত্রী মারা গেছে, আমার হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। আমার দুটো বাচ্চা আছে। ওদের কী হবে। ক্লাবের ৭-৮ জন আমাকে মেরেছে। আমাকে বিষ খাইয়ে মেরে দেবে বলেছে। আমি চলে গেলে আমার বাচ্চাদের কে দেখবে জানি না। আমি লুকিয়ে ভিডিয়ো করছি স্যার। আপনারা আমার বাচ্চা দুটোকে দেখবেন। ওরা বলেছে আমাকে বাচ্চাদের বিষ খাইয়ে দেবে। আমি কাজ থেকে এসে দেখি ওদের (২ বান্ধবী) ক্লাবে আটকে রেখেছে। আমি কারণ জানতে চাই। আমার কোনও দোষ নেই। আমাকে খুব মেরেছে। সরস্বতী পুজোর সময় আমার ঘরে চুরি হয়েছে। আমি কারোর কিছু করিনি। ভোলা নস্কর ছাডা়ও অনেকে জড়িত। আমার হাত ভেঙে দিয়েছে। আমি ডাব ব্যবসা করে খাই।"
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লাবের মধ্যে অসামাজিক কাজকর্ম চলে। রাত হলেই মদ, জুয়া, সাট্টার আসর বসে। শুধু তাই নয়, সন্ধে হলেই বহিরাগতদের আনাগোনা শুরু হয়। এই ঘটনায় বুধবার রাতেই বারুইপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে বারুইপুর থানার পুলিশ। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।