জীবনতলা, 9 জুলাই : তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে এলাকায় বোমাবাজি । রাস্তা তৈরির নামে দুর্নীতি করেছে তৃণমূলের বিধায়ক । খাতায় কলমে রাস্তা তৈরির কথা দেখানো হলেও বাস্তবে তা হয়নি । এই অভিযোগ তুলে এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অপর গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয় । দক্ষিণ 24 পরগনার জীবনতলার উত্তর পাতিখালি গ্রামের ঘটনা । ঘটনায় কয়েকজন এলাকাবাসী, কয়েকজন তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন । ঘটনায় জখম লোকমান সরদার নামে এক কিশোর । ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে । ঘটনাস্থানে জীবনতলা থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে । তৃণমূল বিধায়ক সওকাত মোল্লা ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে এলাকায় বোমাবাজি, গুলি চালানোর, অপর গোষ্ঠীর লোকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে । ঘটনায় আহত দু'পক্ষের 4জন ।
অভিযোগ, দিনের পর দিন এলাকার কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না । খাতায় কলমে গ্রামের রাস্তা তৈরি হয়ে গেলেও বাস্তবে সেই রাস্তার কোনও কাজই হয়নি । এছাড়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন গ্রামবাসী, কয়েকজন যুবক ও স্কুল-কলেজের ছাত্র । এই বিষয়ে প্রতিবাদীরা স্থানীয় বিধায়ক সওকাত মোল্লাকে বিষয়টি জানান । অভিযোগ, সেই কারণে রাতের অন্ধকারে প্রতিবাদীদের বাড়িতে চড়াও হয় তাঁর গোষ্ঠীর লোকজন । বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি ও সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ ওঠে এলাকারই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে । এলাকার তৃণমূল নেতা আয়ুব সরদারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ।
বিন মহম্মদ সরদার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "আমাদের এলাকায় কোনও উন্নয়নের কাজ হয়নি । অথচ খাতায় কলমে টাকা পেমেন্ট হয়ে গেছে । সেই প্রতিবাদেই আমরা বিধায়কের কাছে গেছিলাম । দুইদিন আগেও সেই কারণে আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধর করা হয়েছিল । তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । আজ আমাদের একই কারণে মারধর করা হল । কাজ যে কিছুই হয়নি সেই প্রমাণ আমার কাছে আছে । এইগুলো কেড়ে নেওয়ার জন্য বোম, বন্দুক নিয়ে আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর করে । তবে প্রমাণগুলো নিতে পারেনি । তৃণমূলের বোর্ড সভাপতি, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য, তাঁর ছেলে ও ভাইপো, এছাড়াও তৃণমূলের আরও কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আমাদের মারধর করে । এলাকায় বোমাবাজিও করেছে ওরা । বাঁশ, বন্দুক দিয়ে আমাদের 7-8জনকে মারধর করে ।" এলাকার এক তৃণমূল কর্মী গাজি সরদার বলেন, "গ্রামে কোনও রাস্তাঘাট নেই । সেই কারণে আমরা এলাকার MLA-এর কাছে গেছিলাম । উনি বলেছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দেবেন । এরপরে আমরা যখন ফিরছিলাম এখানকার বুথ সভাপতি কিছু দুষ্কৃতী নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায় । গতরাতেও আমাদের উপর হামলা চালানো হয় । এলাকায় গুলি, বোমাবাজি করে ওরা । ওরা যা করবে সেটাই আমাদের মেনে নিতে হবে । কোনও প্রতিবাদ করা যাবে না । হুমকি দেয় । ওরা সবাই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। আমরা নিজেরাও তৃণমূল কর্মী ।"
সওকাত মোল্লা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । তিনি বলেন, "ওখানে রাস্তা তৈরির জন্য পঞ্চায়েতের কর্মীরা মাপ নিতে গেছিল । গ্রামের লোকের একাংশের দাবী ছিল ওই রাস্তা 1000 ফুট নয় তা 3000 ফুট করতে হবে । সেই নিয়েই নিজেদের মধ্যে বচসা লাগে । মারপিট হয় । যাঁরা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা বাবা, ছেলে, কাকা, ভাইপো কেউ আবার প্রতিবেশী । সবাই আমাদের লোক । বিষয়টি আমরা দেখছি ।" এলাকার বুথ সভাপতির ছেলেই এই অভিযোগ করেছেন । কেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, "পারিবারিক ঝামেলা । আয়ুব সরদারের দু'জন স্ত্রী রয়েছেন । বড়ো স্ত্রী'র ছেলের সঙ্গে গন্ডোগোল রয়েছে । স্বভাবতই পারিবারিক কারণে এই ঝামেলা । ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর করা হয়নি । এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা । এলাকায় বোমাবাজি, গুলি চালানো হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই । কেউ আহতও হননি । এটা বিরোধীরা অপপ্রচার করছে ।" পুলিশও এলাকায় বোমাবাজির কথা স্বীকার করেনি ।