বাসন্তী, 6 সেপ্টেম্বর : ওদের কারও বাবা নেই । কারও বা নেই মা । কাউকে খুব ছোটো অবস্থাতেই রাস্তার ধারে ফেলে রেখে গেছিল বাড়ির লোকেরা । বর্তমানে ওদের ঠিকানা বাসন্তীর রাখালচন্দ্র সেবাশ্রম । সেখানে ওদের বাবা-মা বা শিক্ষাগুরু একজনই, তিনি অমল পণ্ডিত । দীর্ঘ 30 বছর ধরে দুস্থ শিশুদের রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করে চলেছেন এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ।
মহেশপুর যশোদা বিদ্যাপীঠের মাস্টারমশাই ছিলেন অমলবাবু । শুধুমাত্র স্কুলে ছাত্র মানুষ করায় সন্তুষ্ট হননি । চেয়েছিলেন শুধু শিক্ষা নয়, ওদের জীবন গড়ে দেব । সেই শুরু । 1990 সালে তৈরি করেন সেবাশ্রম । বাবা রাখালচন্দ্র পণ্ডিতের নামে নাম রাখেন রাখালচন্দ্র সেবাশ্রম । সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের কাছে টেনে নেন । আশ্রমেই শুরু হয় জীবন গড়ার কাজ । পড়াশোনা, ছবি আঁকা, গানবাজনা এমন কী খেলাধুলোতেও যাতে সমান পারদর্শী হয় ছাত্র-ছাত্রীরা, সেদিকে কড়া নজর অমল স্যারের ।
তবে, সাফল্যের সঙ্গে থাবা বসায় প্রতিবন্ধকতাও । 2015 সালে স্কুল থেকে অবসর নেওয়ার পর শুরু হয় আর্থিক টানাটানি । একার পেনশনে 30 জন ছেলে-মেয়ে মানুষ করা দুষ্কর হয়ে ওঠে । সাহায্যে যে কেউ এগিয়ে আসছে না তা নয় । গ্রামবাসীরা কেউ দিচ্ছেন সবজি, কেউ বা চাল-ডাল-আনাজ দিয়ে সাহায্য করেন আবাসিকদের । তবে তা আর প্রয়োজনের তুলনায় কতটুকু ।
আশ্রমের অনেকেই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত । কেউ অধ্যাপক, কেউ ডাক্তার, কেউ বা ইঞ্জিনিয়র । অমলবাবু বলেন, "একসময় ওদের কত গালমন্দ করেছি । অথচ আজ ওদের সফল হতে দেখলে চোখে জল আসে । নির্জনে বসে কাঁদি । তবে সবাই যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র হয়েছে তা নয় ৷ কিন্তু ভালো মানুষ তো করতে পেরেছি ।"
আর্থিক সমস্যার চক্রব্যুহ ক্রমশই ঘিরে ধরছে তাঁর স্বপ্নকে । তাঁর চিন্তুা যতদিন তিনি আছেন ততদিন, তারপর ? তাঁর কথায়, "আমার যা কিছু আছে, সবই যে দিতে চাই । কিন্তু, নেওয়ার মতো মানুষও তো থাকতে হবে ।"