কলকাতা, 21 এপ্রিল : কোরোনা ঠেকাতে দেশ এখন লকডাউন ৷ তবে এখনও কমানো যায়নি কোরোনা সংক্রমণ ৷ দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা ৷ একই সঙ্গে অব্যাহত মৃত্যু ৷ কবে রেহাই মিলবে জানা নেই কারও ৷ তবে আপাতত সংক্রমণ ঠেকাতে দেশ তথা রাজ্যজুড়ে চলবে লকডাউন ৷
কিন্তু এই লকডাউনের জেরেই সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ ৷ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুল দিশাহারা ৷ কীভাবে প্রতিদিনের অন্ন জোটাবেন, চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে ৷ ব্যবসা বন্ধ, কলকারখানা বন্ধ রুজিরোজগারের সব পথই প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে ৷
লকডাউনের মাঝেও চালু আছে জরুরি পরিষেবা ৷ তাই বাইরের রাজ্য থেকে বিভিন্ন ফল থেকে শুরু করে সমস্ত কাঁচাসবজি আমদানি হচ্ছে রাজ্যে ৷ ফলে বিভিন্ন বাজারের ফল ও সবজির দোকানে মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত মাল কিন্তু নেই বিক্রি ৷ আসলে লকডাউনে চিত্রটা পাল্টায়নি ৷ সুনসান রাস্তা ঘাট ৷ বাজারেও দেখা নেই ক্রেতার , ফলে মাথায় হাত স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীদের ৷
উত্তরবঙ্গের ফল বিক্রেতাদের কী হাল? ফল চাষিরাই বা কেমন আছেন ? সরজমিনে খতিয়ে দেখলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিরা ৷ জলপাইগুড়ির দিনবাজারের ফল বিক্রেতা সঞ্জু রজক ৷ তিনি জানান, ‘‘আমাদের ফলের বাজার আর আগের মতো নেই ৷ কোরোনার আতঙ্ক যতক্ষণ না যাচ্ছে, ততক্ষণ ফলের বাজার আর ঠিক হবে না ৷ বাজার একদম শেষ ৷’’ তিনি আরও জানান ‘‘ অর্ধেক দামে ফল বিক্রি করলেও তা নেওয়ার লোক নেই ৷’’
দিনবাজারের আর এক ফল ব্যবসায়ী রাহুল রায় ৷ বলছেন, ‘‘জলের দামে ফল বিক্রি করছি , তাও কেউ নিচ্ছে না ৷ সবার মনে সংক্রমণের ভয়, তাই বাজারে আসছেন না কেউ ৷ লকডাউনের আগেও যে আঙুর 80- 100 টাকা কিলো দরে বিক্রি হত, তা 50 টাকায় বিক্রি করছি ৷ নিজেদের ক্ষতি করেও ফল বিক্রি করছি ৷ ’’
দিনবাজারের ফুটপথের ফল ব্যবসায়ী সাদ্দাম আনসারি বলছেন,‘‘সারাদিনে 500-600 টাকা বিক্রি হচ্ছে ৷ আমদানি আছে কিন্তু কোনও চাহিদা নেই ৷ কীভাবে দিন চলবে বুঝতে পারছি না ৷’’
ফল ব্যবসায়ীদের মতোই অবস্থা খারাপ ফল চাষিদেরও ৷ কোচবিহারের মানসাই নদীর তীর জুড়ে এই সময় চাষ হয় তরমুজের ৷ কয়েক হাজার চাষি এই তরমুজ চাষ করেই দিনগুজরাণ করেন ৷ কিন্তু এই সময় পড়েছেন মহা সমস্যায় ৷ ক্ষেতজুড়ে পড়ে আছে শয়ে শয়ে তরমুজ ৷ কিন্তু পাইকারের দেখা নেই ৷ লকডাউনের জেরে আসতে পারছেন না কেউ ৷ ফলে অর্ধেকের থেকে কম দামে তরমুজ বেচতে চাইলেও মিলছে না কোনও ক্রেতা ৷ ফলে মাথায় হাত চাষিদের ৷ ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে তাদের ৷
কোচবিহারের তরমুজ রপ্তানি হয় পড়শি রাজ্যেও ৷ অসম-বিহারের ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে এসে তরমুজ নিয়ে যেতেন ৷ কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা ৷ ফসল আছে কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকায় তা রপ্তানি করতে পারছেন না চাষিরা ৷ ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশায় তাঁরা ৷
চিত্রটা একইরকম উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জেও ৷ এখানেও ফলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা ৷ ক্রেতার দেখা নেই ৷ যে দু’একজন ফলের দোকানে আসছেন তাদের কেনাকাটা আপাতত মন ভোলাতে পারছে না ফল বিক্রেতাদের ৷ সকাল সাতটা পর্যন্ত দোকান বসিয়ে সন্ধ্যে ছ’টা অবধি থাকলেও সেই অর্থে দেখা পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেতাদের । এই অবস্থায় বর্তমানে ফলের দামেরও বেশকিছু ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাজারে । তবে ফলের দাম কম করলেও ক্রেতারা আসছেন না ৷
বিগত বছর গুলিতে যে আপেল 120 থেকে 140 টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো বর্তমানে তার দাম দাঁড়িয়েছে 80 টাকা থেকে 100 টাকা । মুসাম্বির দাম 60 টাকা কেজি । বেদানা প্রায় একই দাম থাকলেও 120 থেকে 140 টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা । ডাব বিক্রি হচ্ছে কুড়ি থেকে 25 টাকা দরে । আঙুর 80 টাকা কেজি দরে রায়গঞ্জে বাজারে মিলছে । তবে এত কিছুর দাম কমালেও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ফল বিক্রেতারা ।
রায়গঞ্জের ফল বিক্রেতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘বর্তমানে বাজারে সেই অর্থে ক্রেতাদের প্রায় দেখা নেই বললেই চলে । আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফলের দোকান সাজিয়ে বসে থাকলেও আগের মতো ক্রেতা পাচ্ছি না । ফলের দাম কমিয়েছি । কারণ অনেক ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তবুও বাজারে মানুষ নেই ।’’
প্রতিবছর এই সময় চৈত্র সেলের জন্য বাজার গরম থাকে ৷ কিন্তু এবারের চিত্রটা পুরোপুরি আলাদা । তবে ফের সুদিন ফিরবে এই আশাতেই আছেন ফল ব্যবসায়ী থেকে ফল বিক্রেতা সবাই ৷