কলকাতা, 14 জুলাই : কিছুতেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না অপরাধীর । ক্লু ছিল না বললেই চলে । কোনওভাবেই পাওয়া যায়নি বাইকের নম্বর । ক্লু বলতে ছিল CCTV ফুটেজ । সেটি বারবার খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা । বাইকের নম্বর বোঝা না গেলেও নজরে পড়ে চালকের ট্যাটু । আর তাতেই কেল্লাফতে । কনস্টেবলকে হেনস্থার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় দানেশ্বর ঝা-কে ।
ঘটনার সূত্রপাত 1 জুলাই । রাতের কলকাতায় বেপরোয়া বাইকের দাপাদাপি রুখতে অভিযান চালাচ্ছিল কলকাতা পুলিশ । চলছিল নাকা চেকিং । পুলিশ যে ক'টি স্থান এই চেকিংয়ের জন্য চিহ্নিত করেছিল, তার মধ্যে ছিল পার্ক সার্কাস এলাকার একটি শপিং মল সংলগ্ন এলাকা । সেখানেই ডিউটি করছিলেন কনস্টেবল তপন ওরাও । সেই সময় এক বেপরোয়া বাইক চালককে আটকাতে যান তিনি । কিন্তু, গতি বাড়িয়ে ওই কনস্টেবলকে টেনে নিয়ে যায় ওই বাইক চালক । সর্বাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় তপনের । ঘটনার পর থেকে তিনি কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । পরে সাহসিকতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে পুরস্কৃত করেন । কিন্তু কিছুতেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না অভিযুক্তর । ঘটনায় চাপ বাড়ছিল কলকাতা পুলিশের উপর ।
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, সূত্র বলতে কিছুই ছিল না । বারবার CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখার পর দুটি সূত্র পাওয়া যায়। প্রথমত বাইকটি KTM ব্র্যান্ডের । দ্বিতীয়ত, বাইক চালকের হাতে ছিল ট্যাটু । এই দুই সূত্র নিয়েই পুলিশ তদন্ত শুরু করে । যার নেতৃত্বে ছিলেন জয়েন্ট কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠি এবং DC ট্রাফিক সন্তোষ পান্ডে । এবার পুলিশ খোঁজ শুরু করে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বাইকের শোরুমের । জানা যায় কলকাতায় মাত্র দুটি শোরুম রয়েছে তাদের । দুটি শোরুমকেই বলা হয় কত জন ওই বাইক কিনেছে তার ডেটা দেওয়ার জন্য । ওই দুই শোরুম সেই তথ্য দেয় পুলিশকে । দেখা যায় প্রায় 1 হাজার 800 বাইক বিক্রি হয়েছে । তা থেকে অভিযুক্তকে বের করাটা খুবই কঠিন ।
এখানেই কাজ করে কলকাতা পুলিশের অভিজ্ঞতা । গোয়েন্দাদের চোখে ধরা পড়ে বাইক চালকের পালিয়ে যাওয়ার ধরন । কনস্টেবল তপনকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার পর গলি দিয়ে গা ঢাকা দেয় ওই বাইক আরোহী। অর্থাৎ সে কড়েয়া এলাকার সমস্ত গলি চেনে ।
পুলিশ এবার খোঁজ শুরু করে কড়েয়া এলাকা কিংবা তার আশপাশে কাদের এই KTM বাইক আছে । খোঁজ পাওয়া যায় 180 জনের । তাদের ফোন নম্বরের সূত্র ধরে চিহ্নিত করা হয় কয়েকজনকে । তাদের একজন বছর উনিশের দানেশ্বর ঝা ওরফে সোনু । এলাকায় স্টান্ট দেখাতে সিদ্ধহস্ত । তাই তার নাম হয়েছে স্টান্ট সোনু ।
পুলিশ বুঝতে পারে, সেদিন রাতের বাইক চালক সোনু ছাড়া আর কেউ নয় । তার বাড়িতে নজরদারি চালাতে শুরু করে পুলিশ । অবশ্য সে বাড়িতে ছিল না । পুলিশ জানতে পারে, বারাণসীতে মামাবাড়িতে লুকিয়ে আছে সে । সেখানে টিম পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয় । কিন্তু, তার আগেই সোনু কলকাতায় ফিরেছে বলে খবর আসে । এদিকে পুলিশ জানতে পারে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করার পর কলেজে আর যায়নি সে । বরং ট্যাটু আঁকার ব্যবসা শুরু করে । কলকাতার শ্রীরাম আর্কেড এলাকায় ট্যাটু আঁকত । হাতে আসত নগদ টাকা । আর তাতেই যা খুশি করে বেড়ানোর চেষ্টা । পুলিশ গতকাল তাকে উত্তর পঞ্চান্ন এলাকায় মামাবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে । তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সে স্বীকার করে নিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ।