বোলপুর, 4 জুন : বাউল শিল্পীদের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত বোলপুর-শান্তিনিকেতন । করোনা আবহের জেরে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ বাউল গানের আসর থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান । সোনাঝুরির হাট, কোপাই, আমার কুটির প্রভৃতি জায়গায় বাউল শিল্পীরা থাকলেও, বসে না আসর । এককথায় কার্যত অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বাউল শিল্পীদের পরিবার। বাউল শিল্প শেষ হয়ে যাবে, আক্ষেপের সুর শিল্পীদের গলায় ৷
সকাল হলেই বোলপুর-শান্তিনিকেতনের আনাচে-কানাচে বিশেষ করে সোনাঝুরির হাট, কোপাই নদীর তীরবর্তী এলাকা, আমার কুটির প্রভৃতি জায়গায় বাউল গানের সুর ভেসে উঠত । করোনা আবহের জেরে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে এই এলাকাগুলিতে যেন সুরহীনতায় ভোর হচ্ছে । বহুদিন ধরে পর্যটকশূন্য শান্তিনিকেতন । তাই পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রগুলিতে বাউল শিল্পীরা থাকলেও আগের মত আসর আর বসে না ।
এই এলাকায় প্রায় 500 থেকে 600 জন বাউল শিল্পী ও যন্ত্রবাদকের বাস । সমগ্র বোলপুর মহকুমার পরিসংখ্যান অনুযায়ী কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার বাউল শিল্পী ও যন্ত্র শিল্পী এখানে রয়েছেন । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান করতে যান এখানকার বাউল শিল্পীরা । শুধু ভারতবর্ষ নয়, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অনুষ্ঠান করতে যান শান্তিনিকেতনের বাউল শিল্পীরা ৷
করোনার জেরে বিদেশযাত্রার পাশাপাশি স্থানীয় অনুষ্ঠানও বন্ধ । তাই দীর্ঘদিন ধরে উপার্জনের পথও যে একেবারেই বন্ধ তা বলাই যায় । পেটে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে তো আর সুর ওঠে না । এভাবে চলতে থাকলে একসময় হারিয়ে যাবে বাউল শিল্প, আক্ষেপের সঙ্গে বলছেন শিল্পীরাই ।
তবে এদের মধ্যে বেশ কিছু শিল্পী সরকারি ভাতা পান । শিল্পী ভাতা হিসেবে মাসিক 1000 টাকা পেয়ে থাকেন । তাও প্রতিমাসে নয় । বাউল শিল্পীরা বলছেন, "মাত্র এক হাজার টাকায় তো আর সংসার চলে না ।"
বাউল শিল্পী জগা ক্ষ্যাপা ও কুমার ক্ষ্যাপারা বলেন, "অনেকদিন ধরে কোনও অনুষ্ঠান নেই । দু'বেলা খাবার পর্যন্ত জুটছে না । পরিবার রয়েছে । কীভাবে দিন কাটছে নিজেরাই জানি না । সরকার যদি এ বিষয়ে এখনও কোনও ভাবনা চিন্তা না করে, তাহলে বাউল শেষ হয়ে যাবে । বীরভূমের রাঙামাটির ঐতিহ্য শেষ হয়ে যাবে । আমরা বেশি কিছু চাই না । দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের ব্যবস্থা হলেই হল ।"
আরও পড়ুন : জবরদখল হয়ে থাকা জমি ফিরে পেতে বোলপুর পৌরসভাকে চিঠি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের