বোলপুর, 22 সেপ্টেম্বর : দু'বছর ধরে ভাটা পড়েছে শোলা শিল্পে (Sholapith craftwork) । মিলছে না বিদেশের বরাত । প্রতিবছর বোলপুরের সুরুল গ্রাম থেকে শোলার দুর্গা প্রতিমা পাড়ি দিত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, এমনকি বিদেশেও । করোনা আবহের জেরে দু'বছর ধরে স্থানীয় পুজোর বরাতই সেভাবে মিলছে না । এক কথায় ধুঁকছে শোলা শিল্প । শিল্প সত্ত্বা বাঁচিয়ে রাখাই বর্তমানে দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
শোলার বিভিন্ন কারুকার্য, ডাকের সাজ, শোলার প্রতিমা, হস্তশিল্প, ঘর সাজানোর সামগ্রী, ভাস্কর্য, শোলার নকশা প্রভৃতি তৈরির জন্য বিখ্যাত হল বোলপুরের সুরুল গ্রাম । এই গ্রামে বেশ কয়েক ঘর মালাকার পরিবার রয়েছেন । তাঁদের নিখুঁত শোলা শিল্পকর্মের বেশ নাম-ডাক ৷ এই গ্রাম থেকে দুর্গা প্রতিমা পাড়ি দিয়েছে ওমান, আরব, ফ্রান্স, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন, নরওয়ে মতো দেশেও । এমনকি, এখান থেকে শিল্পীরাও বিদেশে গিয়ে শোলার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন । কিন্তু দু'বছর ধরে এইসব কিছুই যেন অতীত ।
স্থানীয় পুজোর বরাতই সেভাবে মিলছে না । বিদেশি বরাত তো দূরের কথা । বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব শারদোৎসব । এই সময়টা শোলা শিল্পীদের রুজি-রুটির অন্যতম মরশুম । আগে এই সময়টায় যা আয় হত, তা দিয়েই একপ্রকার সারা বছর কেটে যেত ৷ কিন্তু বর্তমানে কোনও রকমে শিল্প সত্ত্বাটুকু বাঁচিয়ে রাখাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে । বহু শিল্পী পেশা ছেড়ে দিয়েছেন আয় না হওয়ার হতাশায় । অন্যান্য বছর মে মাসের মধ্যেই দেশ-বিদেশের কাজের বরাত মিলত । এখন আর তা হচ্ছে না ৷ শিল্পীরা জানাচ্ছেন, আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকেই । কারণ মজুরি দেওয়া সম্ভব নয় । কার্যত মন্দা দেখা দিয়েছে এই পেশায় ৷ তবুও পুজোর আগে টুকিটাকি কাজ করে চলেছেন শিল্পীরা ।
প্রবীণ শোলা শিল্পী কমল মালাকার বলেন, "দু বছর থেকে সেভাবে কাজ হচ্ছে না । আগে অনেকের শিখতে আসত । এখন তারা অন্য পেশা বেছে নিয়েছে । আগে বিদেশে গিয়েও কাজ করেছি । প্রতিবছর আমার দুর্গা প্রতিমা বিদেশে যেত । এখন সবই বন্ধ । শোলা শিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছে । তবে আশা রাখছি, ভবিষ্যতে আবার শোলা শিল্প উজ্জীবিত হয়ে উঠবে ।"
এক শিক্ষানবিশ শোলা শিল্পী চৈতালি বাগদি বলেন, "আগের মতো আর কাজ হচ্ছে না । আগে যেভাবে দুর্গা প্রতিমা থেকে শুরু করে সবকিছু তৈরি হত, এখন সে সব বন্ধ ।"
আরও পড়ুন : Burdwan Kumartoli: সামনেই দুর্গাপুজো, অন্ধকারেই দিন কাটছে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীদের