বাঁকুড়া, 10 নভেম্বর : বাঁকুড়া জেলার শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম হাপানিয়া-রামনাথপুর ৷ এই গ্রামের এক কোণে একটা জায়গা রয়েছে ৷ সেখানে গেলেই চোখে পড়বে বড় বড় হরফে লেখা মারাংবুরু চাচো মার্শাল আশ্রম । মারাংবুরু হল আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবতা ৷ চাচো মার্শাল কথার অর্থ চলো আলো জ্বালাই । সত্যিই এ এক এমন জায়গা, যেখানে অনবরত জ্ঞানের আলো প্রদান করা হয় কিশলয়দের । দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া কচিকাঁচাদের (Underprivileged Children) জ্ঞান বিতরণ (Free School) করে চলেছেন শিক্ষক বাবুনাথ টুডু ।
একটা শৃঙ্খলাপরায়ণ আশ্রমিক জীবন, যেখানে চাঁদ, সুগুন, রাজর্ষিরা প্রতিনিয়ত নিজেদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে । আশ্রমে ঢুকতেই চোখে পড়বে সারিবদ্ধ ভাবে বসে আছে কিশলয়রা ৷ আর তাদের সামনে একটা সাদা বোর্ডে কলম চালিয়ে পড়িয়ে চলেছেন শিক্ষক ৷
পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক বাবুনাথ টুডু হাপানিয়া রামনাথপুর গ্রামেরই বাসিন্দা ৷ দীর্ঘ দুই দশক ধরে নিজের হাতে এই আশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন । ছাত্রছাত্রীরা নিজের ভাষায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের পাঠ নিচ্ছে ৷ সাঁওতালি বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলতে অসুবিধেয় পড়ত ৷ তাই তাদের অলচিকি লিপি দিয়ে বাংলা ভাষা বোঝানোর প্রচেষ্টা থেকেই এই আশ্রমের পত্তন করেন বাবুনাথ টুডু ।
আরও পড়ুন: Nawab Malik: মুম্বইয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে 'হাইড্রোজেন বোমা' নবাবের, ফুলঝুরি বলল বিজেপি
বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া থেকে ভরণপোষণ - একা হাতে সামলাচ্ছেন ৷ আর তাঁর এই কাজে তাঁর পাশে রয়েছেন স্ত্রী লক্ষ্মী টুডু ৷ এত বড় একটা আশ্রমের দায়িত্বভার ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটা আশ্রমিক কমিটি গঠন হলেও সিংহভাগ কাজই নিজে করেন বাবুনাথ ৷ আশ্রমের খরচ কীভাবে চলে ? এই প্রশ্নের জবাবে বাবুনাথ টুডু বলেন, কেউ যদি এককালীন বা মাসিক হিসেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তবে তা সাদরে গ্রহণ করা হয় ৷ বাকিটা তাঁর মাস মাইনের টাকা দিয়েই চলে । এখনও পর্যন্ত সরকারি সাহায্য সে রকম কিছু পাননি বলেই জানিয়েছেন বাবুনাথ ।