বাঁকুড়া, 8 অগস্ট : বাঁকুড়া শহর থেকে 22 কিলোমিটার পেরিয়ে আঁকাবাঁকা পিচের রাস্তা ধরে গেলে সোজা শুশুনিয়া পাহাড় । এই পাহাড়ের পিছনে চরৈবতিতে সবুজে ঘেরা শিউলিবোনা গ্রাম ৷ সেখানেই এক আশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃষ্টিনন্দনের ব্যবস্থা । এই গ্রামের ঠিক আগে সবুজ আগাছাকে পিছনে ফেলে দুর্গম পথ বেয়ে নুড়ি, পাথর বিছানো খাঁড়াই পথে এগোলে হাতের মুঠোয় ধরা দেবে ইতিহাস ।
শুশুনিয়া পাহাড়ের প্রায় 250 মিটার উপরে রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরের দেওয়াল ৷ তার গায়ে আঁকা রয়েছে সিংহল রাজ চন্দ্রবর্মার (King Chandrabarma) শিলালিপি (Rock Inscription) । শিলালিপিটি টিনের শেড আর তারের জাল দিয়ে ঘেরা । শিলালিপিতে লেখা রয়েছে,
"পুষ্করণধিপতে মহারাজ শ্রীসিংহবর্মণঃ পুত্রস্য
মহারাজ শ্রীচন্দ্রবর্মন কৃতিঃ
চক্রস্বামীন দাসগ্রেনাতি সৃষ্টঃ" ।
আরও পড়ুন: ফের বৃষ্টিতে জল বাড়তে শুরু করেছে ঘাটালে
অর্থাৎ পুষ্করনা অধিপতি শ্রী সিংহবর্মা পুত্র চন্দ্রবর্মার কীর্তি এই লিপি । যিনি ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক । লিপির ভাষা সংস্কৃত, কিন্তু অক্ষর চতুর্থ খ্রীষ্টাব্দের ব্রাহ্মী লিপি । পাথরের গায়ের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেছেন ইতিহাসবিদরা ৷ তবে একেক জনের মত একেক রকম ৷ শিলালিপিটির দুটি অংশ । উপরের অংশে থাকা বৃত্ত বা চক্র থেকে কতগুলি রেখা বেরিয়ে এসেছে । এই রেখাগুলি একটি বড় বৃত্ত বা চক্র দিয়ে ঘেরা । এই বৃত্তের সমান্তরালে থাকা আরেকটি বৃত্ত থেকে চোদ্দটি অগ্নিশিখা বেরিয়েছে । প্রতি অগ্নিশিখার পরে দুটি অর্ধবৃত্ত খোদিত রয়েছে ।
আরও পড়ুন: পাঁচ বিধানসভায় কেন খারাপ ফল ? খুঁজে বের করতে 11 জনের কমিটি গঠনের নির্দেশ জ্যোতিপ্রিয়র
লিপি বিবর্তনের প্রেক্ষিতে বলা হয় শুশুনিয়ার লিপিটি ভাবলিপি । এমন লিপিতে কোনও বস্তু বা ভাবকে বোঝাতে পুরো ছবি না-এঁকে সামান্য কিছু রেখা বা মোটিফ ব্যবহার করা হত । পণ্ডিতেরা এই ভাবলিপিকে 'বিষ্ণুচক্রের' আখ্যা দিয়েছেন । এই বিষ্ণুচক্রের নিচে ও পাশে তিনটি ছত্রে খোদিত লিপি রয়েছে । এটি শুশুনিয়ার লিপির দ্বিতীয় অংশ । অনেকে মনে করেন, শুশুনিয়া পাহাড়ের এই অংশে নাকি বৌদ্ধ শ্রবণেরা থাকতেন ৷ এই লিপি তাঁদের জন্যও লিপিবদ্ধ হতে পারে । আবার অনেকে মনে করেন, সিংহল রাজ চন্দ্রবর্মার বাংলা বিজয়ের এক দৃষ্টান্তমূলক পাথুরে প্রমাণও হতে পারে এই লিপি। কয়েক যুগ ধরে এই বিষয় নিয়ে তর্জা চললেও বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা এখনও মেলেনি ।
আরও পড়ুন: করোনা রোগীদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পৌর হেলথ অফিসারের বিরুদ্ধে
মহারাজা চন্দ্রবর্মা এখন ইতিহাস । বহু বছর আগে শুশুনিয়া পাহাড়ে তাঁর দুর্গ লুপ্ত হয়েছে । এখন এই দুর্গম অঞ্চল কিছুটা হলেও মানুষের বসবাসযোগ্য হয়েছে ৷ এখানে তৈরি হয়েছে বিশাল এক চারণভূমি । শুশুনিয়া পাহাড় এখন পিকনিক স্পট এবং পর্বতারোহীদের শৈলারোহণ অনুশীলন ও শিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেই বেশি পরিচিত । কিন্তু এখানে নিবিড় প্রকৃতির মাঝে চারদিকের হাওয়ায় যেন লেগে আছে ইতিহাসের গন্ধ ৷ লোকায়ত এই গাথা এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে ইতিহাসকে ৷