আলিপুরদুয়ার, 20 অক্টোবর : জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সেন্ট্রাল পিলখানা ৷ পিলখানার পাঠশালায় দুই খুদে হস্তীশাবককে নিয়ে ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে । আজই পাঠশালায় প্রথম দিনের পাঠ শুরু হবে খুদে দেবাঙ্গীর । অন্যদিকে অ,আ পাঠ শেষ করে আজ প্রথম শ্রেণিতে ভরতি হবে মাধবন । মীনাক্ষী হাতির ছেলে মাধবন, বয়স 34 মাস ৷ আর ডায়না হাতির মেয়ে দেবাঙ্গী, বয়স 31 মাস ৷ দেবাঙ্গী পিলখানার পাঠশালার নতুন ছাত্রী ৷
পিলখানার নিয়ম, ট্রেনিং শুরুর আগে হাতিকে মায়ের থেকে আলাদা করে এনে পিলখানায় এক-দুই দিন রাখা হয় ৷ তারপর ট্রেনিং শুরুর আগে পুজো দেওয়া হয় ৷ আজ ভোররাতে দেবাঙ্গীকে পুজো দিয়ে পাঠশালার প্রথম দিনের পাঠ শুরু করবেন পাঠশালার পণ্ডিত (হস্তী প্রশিক্ষক) রবি বিশ্বশর্মা । তবে মন ভালো নেই খুদে দেবাঙ্গীর । কারণ দু'দিন হল মায়ের কোল ছাড়া সে । মায়ের দুধ নয়, খেতে হচ্ছে ঘাসপাতা ৷ কিন্তু দু'দিনেই ঘাস পাতায় অরুচি এসে গেছে তার ৷ দেবাঙ্গীর মা ডায়নাও মেয়ের খোঁজে দিনভর চিৎকার করে । অন্যদিকে মাধবন গতকালই সফলতার সঙ্গে প্রাথমিক অ,আ পাঠ শেষ করেছে । আজ সকালেই তার ক্লাস ওয়ানের পার্ট শুরু হবে । তবে নবাগতা দেবাঙ্গীর মতো তার মন খারাপ নয় । প্রায় মাস খানেক হল মায়ের কোল ছাড়া সে । মাঝেমধ্যে দুই-একবার মা মীনাক্ষীর সঙ্গে তার দেখাও করিয়েছেন পাঠশালার পণ্ডিতমশায় । তবে এখন সে বেশ খোস মেজাজে । পাঠশালায় পণ্ডিতমশায়সহ অন্য সকলের সঙ্গেই দিনভর খুনসুটি করে বেড়ায় মাধবন । মস্ত পাঠশালায় ছোটো ছোটো পায়ে ছুটোছুটি করে সে ৷ এই মাস খানেক সে একাই ছিল । তবে দেবাঙ্গী চলে আসায় এখন খেলার সঙ্গী পেয়েছে সে ।
দেশের অন্যতম বড় পিলখানা হিসেবে পরিচিত জলদাপাড়া সেন্ট্রাল পিলখানা । এখনও পর্যন্ত এই পিলখানায় 76টি হাতিকে সফলভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে । এখানকার প্রশিক্ষণ নেওয়া হাতি দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে সুনামের সঙ্গে জঙ্গল এলাকায় পাহারা দেওয়ার কাজ করছে । এই পিলখানায় বছরে নিয়মিত আসেন দেশের প্রখ্যাত হস্তী বিশারদ প্রতিমা বড়ুয়া ।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণ সহায়ক মণীশকুমার যাদব জানান, মীনাক্ষীর ছেলে মাধবনের একমাস প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়ে গেছে ৷ প্রতিদিন গড়ে তিন ঘণ্টা করে প্রশিক্ষণ হয় তার । দেড় ঘণ্টা সকালবেলা আর দেড় ঘণ্টা বিকেলের দিকে ৷ চলতি মাসের 17 তারিখ ডায়নার মেয়ে দেবাঙ্গীকে এখানে আনা হয়েছে ৷ প্রথমদিকে মা আর বাচ্চাকে আলাদা রাখতে হয় ৷ তাহলে একে অপরের থেকে আলাদা থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায় ৷ নইলে ট্রেনিং দেওয়া যায় না ৷ হাতিদের প্রশিক্ষণের মূলত 36 টি মতো কমান্ড রয়েছে ৷ একেবারে শুরুতে প্রধান তিনটি কমান্ড শেখানো হয় । যেমন, মাইল, ধাদ এবং চৈ ৷ যার অর্থ চলো, থামো, ঘোরো । মণীশবাবু আরও জানান, মাত্র 20 দিন আগেও কুনকি হাতি একটি বাচ্চা প্রসব করেছে । তার অবশ্য এখনও নামকরণ করা হয়নি ।
হস্তী প্রশিক্ষক রবি বিশ্বশর্মা জানান, হস্তী শাবকদের মায়েদের থেকে আলাদা করে এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । দিনে দু'বার মোট তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণ চলে । দেবাঙ্গীর ক্লাস আজ থেকে শুরু হচ্ছে । মাধবনের প্রথম পর্যায়ের ট্রেনিং শেষ । আজ থেকে তার দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ শুরু ।